আর্জেন্টিনার ২০২৩ সালের পার্লামেন্ট নির্বাচনটিতে প্রেসিডেন্ট জাভিয়ের মিলেই’র রাজনৈতিক দল লা লিবেরটাদ অ্যাভেঞ্জা ব্যাপক বিজয় অর্জন করেছে। নির্বাচনের ফলাফল অনুযায়ী, দলটির প্রার্থীরা দেশের পার্লামেন্টের নিম্ন ও উচ্চ কক্ষে মোট আসনের অর্ধেকেরও বেশি জিতে নিয়েছে।
আর্জেন্টিনার পার্লামেন্টে মোট ১২৭টি আসন রয়েছে নিম্নকক্ষে এবং ২৪টি আসন রয়েছে উচ্চকক্ষে। ইলেকশন কমিশনের ঘোষিত ফলাফল অনুযায়ী, লা লিবেরটাদ অ্যাভেঞ্জার প্রার্থীরা নিম্নকক্ষে ৬৪টি এবং উচ্চকক্ষে ১৩টি আসনে জয় লাভ করেছেন। এ জয়কে দলটির জন্য একটি বড় সাফল্য হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে, কারণ তারা উভয় কক্ষের অর্ধেকেরও বেশি আসনে বিজয়ী হয়েছে।
জাভিয়ের মিলেই ২০২৩ সালের নির্বাচনে জয়ের পর দেশের অর্থনীতি পুনরুদ্ধারের জন্য কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণের ঘোষণা দিয়েছিলেন। করোনা মহামারি, মুদ্রাস্ফীতি, ঋণের বোঝা এবং বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের সংকটের কারণে অর্থনৈতিক বিপর্যয়ের মুখে পড়েছিল আর্জেন্টিনা। নির্বাচনে জয়ী হওয়ার পর মিলেই ঘোষণা করেছিলেন যে তার সরকার একটি “ইলেকট্রিক করাতের” মতো কাজ করবে, যেখানে অপ্রয়োজনীয় সরকারি খাতে কাটছাঁট করা হবে।
এ প্রেক্ষাপটে তার সরকার গত দুই বছরে শিক্ষা, পেনশন এবং অবকাঠামো খাতের বাজেট ব্যাপকভাবে কমিয়েছে। পাশাপাশি সরকারি বিভিন্ন পরিষেবা খাত থেকে হাজার হাজার কর্মীকে ছাঁটাই করা হয়েছে। তার এই সংস্কার কর্মসূচি দেশব্যাপী আন্দোলনের মুখে পড়লেও, মিলেই সরকার এ ব্যাপারে তার অবস্থান দৃঢ় রেখেছে।
প্রেসিডেন্ট মিলেই’র সংস্কার কর্মসূচি নিয়ে দেশব্যাপী বিভক্তি দেখা দিয়েছে। সরকারের এই পদক্ষেপের বিরুদ্ধে বিরোধী পক্ষের আন্দোলন চললেও, এক অংশের জনগণ তার পদক্ষেপকে সমর্থন জানিয়ে বলছেন, এই সংস্কারের মাধ্যমে আর্জেন্টিনা পুনরুদ্ধার হতে পারে। নির্বাচনের আগে, লা লিবেরটাদ অ্যাভেঞ্জার দল পার্লামেন্টের উচ্চকক্ষে ৭টি এবং নিম্নকক্ষে ৩৭টি আসনে জয়ী হয়েছিল।
এদিকে, প্রেসিডেন্ট মিলেইয়ের বিরোধীরা সদ্য সমাপ্ত নির্বাচনে তার দলের জয়কে নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেছেন। তারা অভিযোগ তুলেছেন যে যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাবের কারণে মিলেই নির্বাচনে বিজয়ী হয়েছেন। প্রাক্তন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এই নির্বাচনে মিলেই’র দলের জয়কে সমর্থন করে বলেন, “যদি মিলেই’র দল জয়ী হয়, তবে যুক্তরাষ্ট্র আর্জেন্টিনাকে ৪ হাজার কোটি ডলার সহায়তা দেবে।”
নির্বাচনের ফলাফল প্রকাশিত হওয়ার পর প্রেসিডেন্ট মিলেই এক প্রতিক্রিয়ায় বলেন, “আমরা আর্জেন্টিনার ইতিহাসকে চিরতরে ঘুরিয়ে দেওয়ার জন্য সংস্কারের পথকে আরও দৃঢ় এবং একীভূত করতে চাই। আমাদের লক্ষ্য আর্জেন্টিনাকে ফের মহান করে তোলা।” তিনি ট্রাম্পের স্লোগান “আমেরিকাকে ফের মহান করে তুলুন” অনুসরণ করে, দেশের ভবিষ্যত উন্নতির কথা বলেন।
প্রেসিডেন্ট মিলেই এবং তার সরকারকে নিয়ে দেশের জনগণের প্রতিক্রিয়া মিশ্রিত। নির্বাচনের ফল ঘোষণার পর এক তরুণ সমর্থক ডিওনিসিও বিবিসি’কে বলেন, “ঈশ্বরকে ধন্যবাদ, আমরা চাই আমাদের সন্তানরা একটি সুন্দর দেশে বেড়ে উঠুক। আমরা বিশ্বাস করি প্রেসিডেন্ট মিলেই আগামী এক বছরের মধ্যে দেশকে পরিবর্তন করতে পারবেন।”
তবে বিরোধী তরুণী ভোটার জুলিয়ানা তার অভিজ্ঞতা শেয়ার করে বলেন, “আমি শারীরিক ও মানসিকভাবে প্রতিবন্ধী শিশুদের একটি স্কুলে চাকরি করি। প্রেসিডেন্ট মিলেই আসার পর আমাদের সরকারি ভর্তুকি বন্ধ হয়ে গেছে, এবং এখন আমাদের স্কুল চালানো খুব কঠিন হয়ে পড়েছে। আমরা আগেও দরিদ্র ছিলাম, তবে এখন আরও দরিদ্র হয়েছি।”
আর্জেন্টিনায় প্রেসিডেন্ট মিলেই’র দল লা লিবেরটাদ অ্যাভেঞ্জার বড় জয় পেলেও, দেশটির অর্থনৈতিক সংস্কারের পদক্ষেপ নিয়ে জনগণের মধ্যে মতবিরোধ অব্যাহত রয়েছে। সরকারি খাতে ছাঁটাই এবং বাজেট কাটা নিয়ে বিতর্কের পরও, তার সরকার শক্ত অবস্থানে রয়েছে এবং আগামী দিনে আর্জেন্টিনার উন্নতির লক্ষ্যে সংস্কারের পথ অনুসরণের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।
এটি স্পষ্ট যে, প্রেসিডেন্ট মিলেইয়ের নেতৃত্বের বিরুদ্ধে কিছু বিরোধিতা থাকলেও, তার দল ব্যাপক জনগণসমর্থন অর্জন করেছে। এখন দেখার বিষয়, আর্জেন্টিনার ভবিষ্যত অর্থনৈতিক দিকনির্দেশনায় তার সরকার কতটা সফল হতে পারে।


