দক্ষিণ চীন সাগরে মার্কিন বিমানবাহী রণতরী ইউএসএস নিমিৎজ থেকে উড্ডয়ন করা একটি যুদ্ধবিমান ও একটি হেলিকপ্টার গত রোববার বিকেলে আধঘণ্টার ব্যবধানে বিধ্বস্ত হয়েছে। তবে সৌভাগ্যক্রমে, এই দুর্ঘটনায় involved পাঁচ ক্রু সদস্যই জীবিত রয়েছেন। মার্কিন নৌবাহিনীর প্যাসিফিক ফ্লিট এক বিবৃতিতে এ তথ্য নিশ্চিত করেছে।
এই দুটি বিমান দুর্ঘটনা মার্কিন সামরিক বাহিনীর নিরাপত্তা ব্যবস্থার প্রতি নতুন প্রশ্ন তুলেছে। বিশেষ করে, একে অপরের খুব কাছাকাছি সময়ে দুটি আলাদা এয়ারক্রাফটের বিধ্বস্ত হওয়ার ঘটনা কিছুটা উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে।
বার্তাসংস্থা এপি জানায়, এফ/এ-১৮এফ সুপার হর্নেট যুদ্ধবিমান ও এমএইচ-৬০আর সি হক হেলিকপ্টার দুটি রণতরী ইউএসএস নিমিৎজ থেকে উড্ডয়ন করেছিল। উড্ডয়ন করার আধঘণ্টার মধ্যে, এটি একটি দুর্ঘটনায় পতিত হয়। তবে সৌভাগ্যবশত, হেলিকপ্টারের তিন ক্রু সদস্যকে উদ্ধার করা হয়েছে এবং যুদ্ধবিমানটির দুই পাইলট ইজেক্ট করে নিরাপদে নেমে আসেন।
মার্কিন নৌবাহিনীর প্যাসিফিক ফ্লিটের বিবৃতিতে বলা হয়েছে যে, এই পাঁচজন ক্রু সদস্য বর্তমানে “সুরক্ষিত এবং স্থিতিশীল অবস্থায়” রয়েছেন। তবে, দুর্ঘটনার কারণ খতিয়ে দেখার জন্য তদন্ত কার্যক্রম শুরু হয়েছে।
এটি উল্লেখযোগ্য যে, ইউএসএস নিমিৎজ রণতরী বর্তমানে তার শেষ মিশন পরিচালনা করছে। গত গ্রীষ্মে মধ্যপ্রাচ্যে অবস্থান করার পর, এটি এখন ওয়াশিংটন অঙ্গরাজ্যের নেভাল বেস কিটস্যাপে ফিরছে। এর আগে, রণতরীটি ইয়েমেনের হুতি বিদ্রোহীদের বাণিজ্যিক জাহাজে হামলার প্রতিক্রিয়ায় সামরিক উপস্থিতি জোরদার করার জন্য দক্ষিণ চীন সাগরে পাঠানো হয়েছিল।
এই দুর্ঘটনাটি মার্কিন নৌবাহিনীর বিমানবাহী রণতরীতে দ্বিতীয়বারের মতো সংঘটিত দুর্ঘটনা নয়। এর আগেও, ইউএসএস হ্যারি এস. ট্রুম্যান রণতরীতে পরপর কয়েকটি দুর্ঘটনা ঘটেছিল।
গত বছরের ডিসেম্বর মাসে, ইউএসএস গেটিসবার্গ, একটি গাইডেড ক্ষেপণাস্ত্রবাহী ক্রুজার, ভুলবশত এফ/এ-১৮ যুদ্ধবিমানটি ইউএসএস ট্রুম্যান থেকে উড্ডয়ন করার পর ভূপাতিত করে। এরপর চলতি বছরের এপ্রিলে, ট্রুম্যানের হ্যাঙ্গার ডেক থেকে পিছলে আরেকটি এফ/এ-১৮ যুদ্ধবিমান লোহিত সাগরে পড়ে যায়। এরপর মে মাসে আবার একই ধরনের দুর্ঘটনা ঘটে, যখন একটি এফ/এ সিরিজের যুদ্ধবিমান ট্রুম্যান রণতরীতে অবতরণের সময় থামার তারে আটকে না গিয়ে সাগরে পড়ে যায়, এবং পাইলটদের বাধ্য হয়ে ইজেক্ট করতে হয়।
তবে এসব দুর্ঘটনায় কোনো মার্কিন নৌসেনা সদস্য নিহত হননি। তবে, এসব ঘটনার তদন্ত এখনও চলমান রয়েছে, এবং চূড়ান্ত প্রতিবেদন এখনও প্রকাশ করা হয়নি।
এই দুর্ঘটনাগুলি পুনরায় মার্কিন নৌবাহিনীর নিরাপত্তা ব্যবস্থার কার্যকারিতা নিয়ে প্রশ্ন তুলছে। বিশেষ করে, যুদ্ধবিমান ও হেলিকপ্টার এর মতো অত্যাধুনিক যন্ত্রপাতি, যা প্রশিক্ষিত ক্রুদের নিয়ে পরিচালিত হয়, সেগুলোর বিধ্বস্ত হওয়া সামরিক বাহিনীর কর্মক্ষমতা ও নিরাপত্তা মানের ওপর প্রভাব ফেলতে পারে। এছাড়া, যুদ্ধবিমান বা হেলিকপ্টার চালনায় ত্রুটি বা যান্ত্রিক সমস্যা থেকে শুরু করে সঠিক অপারেশনাল প্রক্রিয়া পর্যন্ত যে কোনো কারণে দুর্ঘটনা ঘটতে পারে।
মার্কিন সামরিক বাহিনীর কর্তৃপক্ষ দুর্ঘটনাগুলির কারণ তদন্ত করার পাশাপাশি ভবিষ্যতে একই ধরনের দুর্ঘটনা এড়াতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণের ব্যাপারে আশাবাদী।
দক্ষিণ চীন সাগরে মার্কিন বিমানবাহী রণতরী ইউএসএস নিমিৎজ-এর দুটি এয়ারক্রাফট বিধ্বস্ত হওয়া এবং মার্কিন নৌবাহিনীতে সাম্প্রতিক দুর্ঘটনা প্রবণতা, বাহিনীর নিরাপত্তা মানদণ্ড ও কার্যক্রমের ওপর নতুন করে আলোচনার জন্ম দিয়েছে। এ ধরনের দুর্ঘটনা আরও তদন্ত ও নিরাপত্তা ব্যবস্থার উন্নতির প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরছে। তবে, ভাগ্যক্রমে, এসব দুর্ঘটনায় কোনো প্রাণহানির ঘটনা ঘটেনি, যা প্রশংসনীয়।


