মেট্রোরেল দুর্ঘটনার পর ২৩ ঘণ্টা পর পুনরায় চলাচল শুরু

মেট্রোরেল দুর্ঘটনার পর ২৩ ঘণ্টা পর পুনরায় চলাচল শুরু

গতকাল ফার্মগেট এলাকায় মেট্রোরেল লাইনের একটি পিলার থেকে বিয়ারিং প্যাড পড়ে যাওয়ার পর সাড়ে ২৩ ঘণ্টা পর ঢাকা মেট্রোরেল ট্রেনের চলাচল আবার শুরু হয়েছে। দুর্ঘটনার ফলে এক পথচারী নিহত এবং দুইজন আহত হন, এবং সুরক্ষা ব্যবস্থা নিশ্চিত করার জন্য মেট্রোরেল চলাচল বন্ধ রাখা হয়েছিল।

গতকাল দুপুরে, ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেডের (ডিএমটিসিএল) অধীন ফার্মগেট এলাকার ৪৩৩ নম্বর মেট্রোরেল পিলারের একটি বিয়ারিং প্যাড হঠাৎ করে নিচে পড়ে যায়। প্যাডটি পড়ে গিয়ে এক পথচারী মারা যান এবং দুইজন আহত হন। দুর্ঘটনার পর নিরাপত্তা বিবেচনায় মেট্রোরেল চলাচল বন্ধ রাখা হয়।

এই ঘটনায় তীব্র ক্ষোভ ও উদ্বেগ সৃষ্টি হয়, এবং কর্তৃপক্ষ দ্রুত দুর্ঘটনাস্থলে পৌঁছে নিরাপত্তা ব্যবস্থা শক্তিশালী করার সিদ্ধান্ত নেয়। ডিএমটিসিএল কর্তৃপক্ষ দুর্ঘটনাটি তদন্ত করার পাশাপাশি ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাটি মেরামত করে নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করতে কাজ শুরু করে।


দুর্ঘটনার প্রায় ২৩ ঘণ্টা পর, ডিএমটিসিএল মেট্রোরেল চলাচল পুনরায় শুরু করার ঘোষণা দেয়। উপ-প্রকল্প পরিচালক মো. আহসান উল্লাহ শরিফী জানিয়েছেন, আজ সকাল ১১টা থেকে পুরো রুটে ট্রেন চলাচল শুরু হয়েছে। এর আগে, গতকাল বিকেল ৩টা থেকে আগারগাঁও-উত্তরা সেকশনে এবং সন্ধ্যা সোয়া ৭টার দিকে মতিঝিল-শাহবাগ সেকশনে মেট্রো চলাচল শুরু হয়। তবে শাহবাগ-আগারগাঁও সেকশন তখনও বন্ধ ছিল।


ডিএমটিসিএল ঘটনার পরপরই মেট্রোরেল রুটের সুরক্ষা ব্যবস্থা পুনরায় পর্যালোচনা করতে শুরু করেছে। বিশেষজ্ঞরা এ ঘটনায় বলছেন, মেট্রোরেল নির্মাণ ও পরিচালনার ক্ষেত্রে সঠিক নিরাপত্তা ব্যবস্থার প্রয়োগ অত্যন্ত জরুরি। বিশেষ করে, বিয়ারিং প্যাডের মতো গুরুত্বপূর্ণ উপাদান পড়ে যাওয়ার মতো ঘটনা ভবিষ্যতে যাতে আর না ঘটে, সে জন্য নকশা ও নিরাপত্তা মান পুনঃমূল্যায়ন করা উচিত।

এ বিষয়ে বিশেষজ্ঞরা জানান, মেট্রোরেলের চলাচল ব্যবস্থা উন্নত করতে প্রযুক্তিগত দিকেও আরও কিছু উন্নয়ন প্রয়োজন। বিয়ারিং প্যাডের ধরনের পণ্যের নিরাপত্তা নিশ্চিতে আরও তদারকি করা উচিত, যাতে ভবিষ্যতে একই ধরনের দুর্ঘটনা এড়ানো যায়।


দুর্ঘটনার পর একটি গুরুত্বপূর্ণ মানবিক দিকও সামনে আসে। নিহত ব্যক্তির নাম আবুল কালাম, এবং তার স্ত্রী দুর্ঘটনার পর শারীরিকভাবে অসুস্থ হয়ে বারবার মূর্ছা যাচ্ছিলেন। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তাকে প্রাথমিক চিকিৎসা দেয় এবং তার পরিবারের পক্ষ থেকে কর্তৃপক্ষের কাছে দ্রুত সহায়তার দাবি জানানো হয়েছে।

ঢাকা শহরের যে এলাকায় দুর্ঘটনাটি ঘটেছে, তা অত্যন্ত জনবহুল এবং ব্যস্ত সড়ক হিসেবে পরিচিত। এ কারণে, নিরাপত্তা ব্যবস্থা এবং অপ্রত্যাশিত ঘটনা মোকাবিলায় মেট্রোরেল কর্তৃপক্ষের আরও সচেতনতা বাড়ানো প্রয়োজন। একইসঙ্গে, যাত্রীদের নিরাপত্তা নিশ্চিতে আরও সচেতনতা বৃদ্ধি এবং ট্রেন চলাচলের সময় নিরাপত্তা ব্যবস্থার প্রতি সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।


মেট্রোরেল প্রকল্প বর্তমানে ঢাকার পরিবহন ব্যবস্থায় একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। যদিও এটি সঠিকভাবে কার্যকর হতে শুরু করেছে, তবুও প্রাথমিক পর্যায়ে এমন দুর্ঘটনা যথেষ্ট উদ্বেগজনক। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, মেট্রোরেল চালুর পরপরই নিরাপত্তার মান নিশ্চিত করার পাশাপাশি, সকল যাত্রী এবং পথচারীর জন্য সুরক্ষা ব্যবস্থা আরও জোরালো করা উচিত।

ঢাকা মেট্রোরেল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, দুর্ঘটনার পর থেকে তারা দ্রুত পদক্ষেপ নিয়ে নিরাপত্তা ব্যবস্থা পুনরায় প্রতিষ্ঠা করেছে এবং ভবিষ্যতে এমন দুর্ঘটনা এড়াতে বেশ কিছু নতুন নিরাপত্তা ব্যবস্থা চালু করবে।


ফার্মগেট এলাকার মেট্রোরেল দুর্ঘটনার পর সাড়ে ২৩ ঘণ্টার মধ্যে পুনরায় ট্রেন চলাচল শুরু হলেও, এই ঘটনা ঢাকার মেট্রোরেল প্রকল্পের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়ে নতুন প্রশ্ন তুলেছে। কর্তৃপক্ষের উপর আস্থা এবং যাত্রীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য প্রয়োজন আরও কার্যকর এবং সতর্ক পদক্ষেপ। দুর্ঘটনার পর মেট্রোরেল চলাচল দ্রুত শুরু হলেও, বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, উন্নত নিরাপত্তা ব্যবস্থা ও প্রযুক্তিগত উন্নয়নের মাধ্যমে এই ধরনের ঘটনা এড়ানো সম্ভব হবে।

জাতীয়