রিয়াদে সালমান খানের মন্তব্য নিয়ে পাকিস্তানে বিতর্ক

রিয়াদে সালমান খানের মন্তব্য নিয়ে পাকিস্তানে বিতর্ক

সম্প্রতি সৌদি আরবের রাজধানী রিয়াদে অনুষ্ঠিত এক অনুষ্ঠানে উপস্থিত হয়ে ভারতীয় সুপারস্টার সালমান খান এমন একটি মন্তব্য করেছেন, যা সামাজিক মাধ্যমে তোলপাড় সৃষ্টি করেছে। তার মন্তব্যের পর পাকিস্তানের সাধারণ জনগণের মধ্যে ক্ষোভ ও হতাশা প্রকাশ পায়, বিশেষ করে তার এক বক্তব্যের কারণে, যা নিয়ে পরে বিভ্রান্তি ও গুজব সৃষ্টি হয়। কিছু সোশ্যাল মিডিয়া পোস্টে সালমানকে ‘সন্ত্রাসবাদী’ হিসেবে অভিহিত করা হয়, এবং পাকিস্তান সরকার তাকে নিষিদ্ধ করেছে বলে খবর ছড়িয়ে পড়ে। তবে, তদন্তে দেখা গেছে যে, এসব দাবি মিথ্যা ও ভিত্তিহীন।

রিয়াদের অনুষ্ঠানে, যেখানে সালমান খান ভারতীয় সিনেমার ব্যবসা ও জনপ্রিয়তা নিয়ে বক্তব্য রাখছিলেন, তিনি বলেন, “আপনি যদি হিন্দি সিনেমা তৈরি করেন, সেটা সৌদি আরবে মুক্তি পেলে ভালো ব্যবসা করবে। তেমনি তামিল, তেলেগু, মালয়ালম—যে কোনো ভারতীয় ভাষার ছবি এখানে সফল হতে পারে, কারণ এখানে আফগানিস্তান, পাকিস্তান, বালুচিস্তানসহ নানা দেশ থেকে মানুষ কাজ করতে আসে, সফল হয়।”

সালমানের এই বক্তব্যে বিশেষ করে ‘বালুচিস্তান’ নামটি উল্লেখ করায় বিতর্কের সূত্রপাত হয়। বালুচিস্তান পাকিস্তানের একটি প্রদেশ, যা আলাদা দেশ হিসেবে পরিচিত নয়। সালমানের মন্তব্যে পাকিস্তানের অনেকেই ক্ষুব্ধ হন, কারণ পাকিস্তান এই অঞ্চলের স্বাধীনতা আন্দোলনকে অত্যন্ত গুরুত্ব দিয়ে দেখে।

পাকিস্তানে সালমান খানের ওই মন্তব্যের পর সোশ্যাল মিডিয়ায় দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে কিছু পোস্ট, যেখানে তাকে ‘সন্ত্রাসবাদী’ এবং ‘জাতীয় নিরাপত্তার জন্য হুমকি’ হিসেবে অভিহিত করা হয়। পাশাপাশি, পাকিস্তান সরকারের পক্ষ থেকে সালমানকে দেশটিতে নিষিদ্ধ করার খবরও ছড়াতে থাকে।

এছাড়া, কিছু পোস্টে দাবি করা হয় যে, পাকিস্তান সরকার সালমান খানকে “দেশদ্রোহী” হিসেবে চিহ্নিত করেছে এবং তার দেশে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। তবে, এসব দাবির কোন সরকারি ভিত্তি ছিল না এবং পাকিস্তান সরকারের পক্ষ থেকেও কোনো ধরনের আনুষ্ঠানিক ঘোষণা করা হয়নি।

তদন্তে জানা যায়, সালমানের মন্তব্যের ভিডিওর কিছু অংশ ভুলভাবে কেটে সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়ানো হয়েছিল, যার ফলে সাধারণ মানুষ বিভ্রান্ত হয়ে পড়েন। এসব ভিডিও কেটে সালমানের বক্তব্যের অর্থের ভুল ব্যাখ্যা দেওয়া হয়েছিল, যা পরিস্থিতিকে আরও উত্তপ্ত করে তোলে।

পাকিস্তান সংবাদমাধ্যমগুলোও এ ব্যাপারে কোনো প্রতিবেদন প্রকাশ করেনি, এবং সরকারী পক্ষ থেকেও এমন কোনো বিবৃতি দেয়া হয়নি। ফলে, গুজব ছড়িয়ে পড়া এবং সামাজিক মাধ্যমে এই বিষয়টি নিয়ে বিভ্রান্তির সৃষ্টি হওয়াটা মূলত একটি ভুল বোঝাবুঝির ফল।

এ ঘটনার পর সালমান খানের মন্তব্য নিয়ে পাকিস্তানে কিছু তিক্ত প্রতিক্রিয়া হলেও, পাকিস্তান সরকার বা তাদের কোনো সরকারি সংস্থা এ ব্যাপারে কোনো আনুষ্ঠানিক পদক্ষেপ গ্রহণ করেনি। বিশেষত, সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়ানো ভুয়া খবর এবং বিভ্রান্তি নিয়ে এখনো পর্যন্ত কোনো স্পষ্ট পদক্ষেপ দেখা যায়নি।

এটা পরিষ্কার যে, সালমান খান যে উদ্দেশ্যে মন্তব্য করেছিলেন তা ছিল একটি সাধারণ আলোচনা, কিন্তু সেই মন্তব্যের ভুল ব্যাখ্যা ও একপেশে ধারণার মাধ্যমে পরিস্থিতি জটিল হয়ে উঠেছিল। পাকিস্তানে সামাজিক মাধ্যমের এই ধরনের গুজব এবং বিভ্রান্তি দ্রুত ছড়িয়ে পড়ার ফলে, ভারত-পাকিস্তান সম্পর্কের আরও জটিলতার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে।

এই ঘটনা প্রমাণ করে যে, সোশ্যাল মিডিয়া এবং সংবাদমাধ্যমে একপেশে বা ভুল তথ্য পরিবেশন বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ। এমন পরিস্থিতিতে, সমাজের মধ্যে ভুল ধারণা সৃষ্টি হওয়ার পর তা দ্রুত প্রতিকার করা অত্যন্ত জরুরি। রাজনৈতিকভাবে বা সামাজিকভাবে এমন গুজবের প্রভাব প্রতিরোধের জন্য উভয় দেশের সরকারের উচিত যথাযথ পদক্ষেপ নেওয়া, যাতে ভবিষ্যতে এমন বিভ্রান্তি বা উত্তেজনা সৃষ্টি না হয়।

বিনোদন