সুষ্ঠু নির্বাচন পরিচালনায় সরকারের পূর্ণ প্রস্তুতি: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা

সুষ্ঠু নির্বাচন পরিচালনায় সরকারের পূর্ণ প্রস্তুতি: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা

অবাধ, সুষ্ঠু এবং নিরপেক্ষ নির্বাচন আয়োজনের জন্য সরকার পূর্ণ প্রস্তুতি নিয়েছে বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী। সোমবার (২৭ অক্টোবর) সচিবালয়ে কমনওয়েলথ ইলেক্টোরাল সাপোর্ট সেকশনের (ইএসএস) প্রতিনিধিদলের সঙ্গে সাক্ষাৎকালে তিনি এ কথা জানান।

দুই সদস্যের প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেন কমনওয়েলথ ইএসএস-এর লিগ্যাল অ্যাডভাইজার ন্যান্সি কানিয়াগো এবং উপস্থিত ছিলেন এক্সিকিউটিভ অফিসার ম্যাডোনা লিন্স। এ সময় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারাও উপস্থিত ছিলেন।

স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা জানান, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে আয়োজনের জন্য সরকারের সব ধরনের প্রস্তুতি রয়েছে। তিনি বলেন, নির্বাচনের সময় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর প্রায় আট লাখ সদস্য নির্বাচনী দায়িত্ব পালন করবে। এছাড়াও, সশস্ত্র বাহিনীর প্রায় ৮০ হাজার সদস্য নির্বাচনকালীন দায়িত্ব পালন করবে। তিনি জানান, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সব সদস্যের জন্য নির্বাচনী মহড়া ও প্রশিক্ষণ ব্যবস্থা করা হয়েছে এবং অবৈধ অস্ত্র ও গোলাবারুদ উদ্ধার করতে বিশেষ অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে।

প্রতিটি নির্বাচন কেন্দ্রে সিসিটিভি ক্যামেরা এবং বডি ওয়র্ন ক্যামেরা স্থাপনসহ, নির্বাচনী এলাকাগুলোর শান্তি ও শৃঙ্খলা বজায় রাখতে মোবাইল টিম এবং স্ট্রাইকিং ফোর্স নিয়োগের ব্যবস্থা করা হয়েছে। তিনি আরও বলেন, গণমাধ্যম অবাধে সংবাদ সংগ্রহ করতে পারবে এবং পর্যাপ্ত সংখ্যক নির্বাচনি পর্যবেক্ষক দলকে অনুমতি দেওয়া হবে।

কমনওয়েলথ প্রতিনিধিদের স্বাগত জানিয়ে উপদেষ্টা বলেন, বাংলাদেশের কমনওয়েলথের সঙ্গে দীর্ঘদিনের সুসম্পর্ক রয়েছে এবং বাংলাদেশ স্বাধীনতার পর থেকেই কমনওয়েলথের সদস্য। ন্যান্সি কানিয়াগো জানান, কমনওয়েলথের নির্বাচন পর্যবেক্ষক গ্রুপ আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করতে প্রস্তুত, যদি বাংলাদেশ সরকার তাদের আমন্ত্রণ জানায়।

উপদেষ্টা জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেন, বাংলাদেশ আইনশৃঙ্খলা বাহিনী নির্বাচন পরিচালনার ক্ষেত্রে অনেক অভিজ্ঞতা অর্জন করেছে, বিশেষ করে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে অংশগ্রহণের মাধ্যমে। তিনি আরো বলেন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সহায়তার চেয়ে আমাদের অধিক প্রয়োজন আর্থিক সহযোগিতা, বিশেষ করে সিসিটিভি, বডি ওয়র্ন ক্যামেরা ও নির্বাচনী সরঞ্জাম সরবরাহে কমনওয়েলথের সহায়তা।

নতুন পুলিশ, আনসার, বিজিবি এবং কোস্টগার্ড সদস্যদের নিয়োগ সম্পর্কে জানিয়ে উপদেষ্টা বলেন, নির্বাচনের জন্য নতুন করে ১০,২৬৪ জন পুলিশ, ২,১৪৫ জন আনসার ও ভিডিপি, ৫,৫১৩ জন বিজিবি, এবং ৬৩৪ জন কোস্টগার্ড নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।

কমনওয়েলথ প্রতিনিধি ন্যান্সি কানিয়াগো নির্বাচনী দায়িত্বে নিয়োজিত বাহিনীকে মানবাধিকার বিষয়ক প্রশিক্ষণ দেওয়ার প্রস্তাব করেন। উপদেষ্টা এ বিষয়ে জানান, কমনওয়েলথ এই প্রশিক্ষণে সহায়তা করতে পারে।

এ সময়, কমনওয়েলথ প্রতিনিধি জুলাই মাসে সংঘটিত হত্যাকাণ্ডের বিচার বিষয়ে জানতে চান। এর উত্তরে, উপদেষ্টা বলেন, আইন মন্ত্রণালয় চাইলে বিশেষ ট্রাইব্যুনাল গঠন করতে পারে। তবে, তিনি বলেন, জুলাই হত্যাকাণ্ডের বিচার নিশ্চিত করতে দুটি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে।

শেষে, উপদেষ্টা আশাবাদ ব্যক্ত করেন যে, আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জনগণ অবাধ, নির্ভয়ে এবং স্বতঃস্ফূর্তভাবে ভোট দিতে কেন্দ্রে আসবে। তিনি বলেন, নির্বাচন পরিচালনার ক্ষেত্রে সরকারের আইনি ও নিরাপত্তা ব্যবস্থা পূর্ণ প্রস্তুত রয়েছে এবং জনগণ যাতে নির্ভয়ে ভোট প্রদান করতে পারে, সে জন্য সব ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।

জাতীয়