২৮ অক্টোবর লগি-বৈঠাধারীদের গণহত্যা ও নৈরাজ্যের ঘটনা বাংলাদেশের রাজনীতিতে কলঙ্কজনক অধ্যায়: ডা. শফিকুর রহমান

২৮ অক্টোবর লগি-বৈঠাধারীদের গণহত্যা ও নৈরাজ্যের ঘটনা বাংলাদেশের রাজনীতিতে কলঙ্কজনক অধ্যায়: ডা. শফিকুর রহমান

বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী আমির ডা. শফিকুর রহমান বলেছেন, ২০০৬ সালের ২৮ অক্টোবর লগি-বৈঠাধারীদের গণহত্যা, সন্ত্রাস ও নৈরাজ্যের ঘটনা বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে এক কলঙ্কজনক অধ্যায় হিসেবে চিহ্নিত হয়ে থাকবে। তিনি বলেন, ওই দিনের সন্ত্রাসী কার্যক্রমের পর থেকে দেশের রাজনীতিতে এক নতুন কালো অধ্যায়ের সূচনা হয়, যা ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট পর্যন্ত অব্যাহত ছিল। এর ফলস্বরূপ, জনগণের মৌলিক অধিকার, যেমন গণতন্ত্র, আইনের শাসন, মানবাধিকার, ন্যায়বিচার, বাকস্বাধীনতা এবং ভোটাধিকার—সবই সংকুচিত হয়ে যায়।

রোববার (২৬ অক্টোবর) এক বিবৃতিতে ডা. শফিকুর রহমান ২০০৬ সালের ২৮ অক্টোবরের ঘটনাটি পুনরায় স্মরণ করে বলেন, “এই দিনটিকে কেন্দ্র করে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন ১৪ দলীয় জোট দেশব্যাপী এক ভয়াবহ সন্ত্রাসী তাণ্ডব সৃষ্টি করেছিল, যার উদ্দেশ্য ছিল জাতীয় সংসদ নির্বাচন বানচাল করা এবং দেশের গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা ভেঙে দেওয়া।”

২০০৬ সালের ২৮ অক্টোবর ঢাকার পল্টন এলাকায় জামায়াতে ইসলামী আয়োজিত এক জনসভা চলছিল। সেখানে উপস্থিত জামায়াত নেতাদের বক্তব্য শুরুর আগেই ১৪ দলীয় জোটের সন্ত্রাসীরা সশস্ত্র আক্রমণ শুরু করে। তারা লগি-বৈঠা, লোহার রড, এবং আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে পল্টন ও আশপাশের এলাকায় হামলা চালায়।

ডা. শফিকুর রহমান বলেন, “বায়তুল মোকাররমের উত্তর গেটে জামায়াতে ইসলামী একটি জনসভার আয়োজন করেছিল। সেদিন সকাল থেকে স্টেজ তৈরির কাজ চলছিল, কিন্তু হঠাৎ করে ১৪ দলের সন্ত্রাসীরা হামলা চালায় এবং সাধারণ মানুষের ওপর নির্দয় আক্রমণ শুরু করে।”

তিনি আরও বলেন, “এই হামলার লক্ষ্য ছিল জামায়াতের কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ, যাদের মধ্যে তৎকালীন জামায়াত আমির মাওলানা মতিউর রহমান নিজামী উপস্থিত ছিলেন। তাদের উদ্দেশ্য ছিল সমাবেশে উপস্থিত জনগণ ও নেতাদের ওপর আক্রমণ করে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টি করা।”

ডা. শফিকুর রহমান জানান, ২৮ অক্টোবরের ওই সন্ত্রাসী হামলায় ঢাকাসহ সারা দেশে জামায়াতে ইসলামী ও ইসলামী ছাত্রশিবিরের ১৪ জন নেতাকর্মী শহীদ হন এবং আহত হন হাজারও নেতা-কর্মী। শুধু ঢাকায় নয়, সারা দেশে এই হামলাগুলো চালানো হয়েছিল, যেখানে সাধারণ জনগণও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল।

তিনি বলেন, “এই ঘটনা ছিল পূর্বপরিকল্পিত মানবতাবিরোধী গণহত্যা। আওয়ামী সন্ত্রাসীরা মানুষ হত্যা করে মৃতদেহের ওপর নৃত্য করে বর্বর আনন্দ-উল্লাসে মেতে ওঠে, যা সারা বিশ্বের গণমাধ্যমে ব্যাপকভাবে প্রচারিত হয়।”

ডা. শফিকুর রহমান উল্লেখ করেন যে, ২৮ অক্টোবরের নারকীয় গণহত্যার সাথে জড়িত খুনিদের বিচারের জন্য সুনির্দিষ্ট মামলা দায়ের করা হয়েছিল, তবে তৎকালীন সরকার সেই মামলা প্রত্যাহার করে এবং খুনিদের রক্ষা করে। তিনি বলেন, “এটি ছিল একটি ভয়াবহ গণহত্যা, যা পাকিস্তান, আফগানিস্তান ও বালুচিস্তানের মতো অঞ্চলের সন্ত্রাসী হামলার সাথেও তুলনা করা যেতে পারে।”

তবে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন যে, সম্প্রতি দেশে ছাত্র-জনতার ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনের ফলে দেশে ফ্যাসিবাদমুক্ত পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে এবং ২৮ অক্টোবরের গণহত্যাকারীদের বিচার অচিরেই নিশ্চিত হবে।

ডা. শফিকুর রহমান বলেন, “বাংলাদেশের জনগণ দাবি জানাচ্ছে, অবিলম্বে ২৮ অক্টোবরের খুনিদের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত মামলা পুনরায় সচল করে তাদের গ্রেপ্তার ও শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে।”

তিনি ২৮ অক্টোবর নিহতদের শহীদ হিসেবে কবুল করার জন্য মহান রবের নিকট দোয়া করার আহ্বান জানান এবং যারা আহত হয়ে মানবেতর জীবন-যাপন করছেন, তাদের পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জ্ঞাপন করেন।

এছাড়া, জামায়াতে ইসলামী দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে কর্মসূচি ঘোষণা করেছে, যার মধ্যে মহানগরী, জেলা, উপজেলা ও থানা পর্যায়ে সভা-সমাবেশ, বিক্ষোভ মিছিল, আলোচনা সভা ও দোয়া অনুষ্ঠান অন্তর্ভুক্ত থাকবে। এ কর্মসূচি বাস্তবায়নের জন্য সংগঠনটি বিশেষ প্রস্তুতি গ্রহণ করেছে এবং কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য সরকারের প্রতি অনুরোধ জানিয়েছে।

ডা. শফিকুর রহমানের মন্তব্যগুলো বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে এক অন্ধকার অধ্যায়ের প্রতিচ্ছবি হিসেবে বিবেচিত হতে পারে। ২০০৬ সালের ২৮ অক্টোবরের ঘটনায় নিহতদের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে এবং বিচার প্রতিষ্ঠার আহ্বানে তার বিবৃতি রাজনীতির বর্তমান বাস্তবতায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।

রাজনীতি শীর্ষ সংবাদ