বিশ্বের চলতি বছরের সবচেয়ে শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড় হারিকেন মেলিসা প্রবল গতিতে ক্যারিবীয় সাগর অতিক্রম করে জ্যামাইকার দিকে ধেয়ে আসছে। স্থানীয় সময় মঙ্গলবার সকালে ঝড়টি দ্বীপটিতে আঘাত হানতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছে জ্যামাইকার কর্তৃপক্ষ। ইতোমধ্যে দেশটির বিভিন্ন উপকূলীয় এলাকা থেকে লোকজনকে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেওয়া হচ্ছে। ঝড়ের প্রভাবে এখন পর্যন্ত অন্তত তিনজনের মৃত্যু হয়েছে বলে দেশটির স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল হারিকেন সেন্টার (এনএইচসি)-এর সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, মেলিসা বর্তমানে ঘণ্টায় প্রায় ৩০০ কিলোমিটার (১৭৫ মাইল) গতিবেগে বয়ে যাচ্ছে এবং এটি সর্বোচ্চ স্তরের ক্যাটাগরি–৫ ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হয়েছে। বাতাসের চাপ ও গতি বিবেচনায়, ২০২৫ সালে এটাই বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী ঝড়। যদি এর গতি ও তীব্রতা অব্যাহত থাকে, তবে এটি ১৮৫১ সালে রেকর্ড সংরক্ষণ শুরুর পর থেকে জ্যামাইকার ইতিহাসে সবচেয়ে শক্তিশালী হারিকেন হিসেবে বিবেচিত হবে।
এনএইচসি জানিয়েছে, মঙ্গলবার সকাল পর্যন্ত জ্যামাইকা জুড়ে “প্রাণঘাতী বাতাস, ভয়াবহ বন্যা এবং জলোচ্ছ্বাস” দেখা দিতে পারে। সংস্থাটির তথ্যানুসারে, সোমবার সন্ধ্যায় মেলিসা কিংস্টনের দক্ষিণ-পশ্চিমে প্রায় ২৩৩ কিলোমিটার দূরে অবস্থান করছিল এবং ঘণ্টায় ছয় কিলোমিটার গতিতে পশ্চিম-উত্তর-পশ্চিম দিকে অগ্রসর হচ্ছিল। আগামী চার দিনে দেশটিতে প্রায় ১০০ সেন্টিমিটার পর্যন্ত বৃষ্টিপাত হতে পারে বলে সতর্ক করা হয়েছে।
ঘূর্ণিঝড়ের ধীরগতির কারণে দীর্ঘ সময় ধরে ভারী বৃষ্টিপাতের আশঙ্কা রয়েছে, যা মারাত্মক বন্যা ও ভূমিধসের ঝুঁকি বাড়াবে। জ্যামাইকার পাশাপাশি প্রতিবেশী দেশ হাইতি ও ডোমিনিকান রিপাবলিকেও ঝড়ের প্রভাবে অন্তত চারজনের মৃত্যু হয়েছে।
জ্যামাইকা সরকার ইতোমধ্যে রাজধানী কিংস্টনসহ ঝুঁকিপূর্ণ অঞ্চলগুলোতে জরুরি সতর্কতা জারি করেছে। বাসিন্দাদের ঘরের বাইরে না যাওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এনএইচসি পরিচালক মাইকেল ব্রেনান বলেন, “মঙ্গলবার পর্যন্ত ভয়াবহ বন্যা ও ভূমিধসের সম্ভাবনা রয়েছে। ঘূর্ণিঝড়ের কেন্দ্র অতিক্রমের সময় বাইরে বের হলে প্রাণহানির ঝুঁকি বেড়ে যাবে।”
জ্যামাইকার শিক্ষা মন্ত্রী ডানা মরিস ডিকসন ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসিকে বলেন, “আমরা এমন ঝড় আগে কখনো দেখিনি। অক্টোবরজুড়ে বৃষ্টিপাত হওয়ায় ভূমি এখন দুর্বল। এর সঙ্গে মেলিসার ভারী বৃষ্টি যুক্ত হলে ব্যাপক ভূমিধস এবং বন্যা দেখা দিতে পারে।”
তিনি আরও জানান, “দেশব্যাপী ৮৮১টি আশ্রয়কেন্দ্র সক্রিয় করা হয়েছে, যেখানে নাগরিকরা বিনামূল্যে আশ্রয় নিতে পারবেন।”
মেলিসার অগ্রগতি ঘনিষ্ঠভাবে পর্যবেক্ষণ করছে যুক্তরাষ্ট্র, মেক্সিকো, কিউবা ও বাহামাসের আবহাওয়া কর্তৃপক্ষ। যুক্তরাষ্ট্রের আবহাওয়া বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করেছেন, এই ঘূর্ণিঝড় “বিধ্বংসী ও প্রাণঘাতী” পরিস্থিতি তৈরি করতে পারে। ঝড়টি স্থলভাগে আঘাত হানার পর এর প্রভাবে ক্যারিবীয় সাগরজুড়ে জলোচ্ছ্বাস ও বৃষ্টিপাতের মাত্রা আরও বৃদ্ধি পেতে পারে।
ক্যারিবীয় অঞ্চলে ঘূর্ণিঝড়প্রবণ মৌসুমে হারিকেন মেলিসা এখন পর্যন্ত সবচেয়ে ভয়াবহ দুর্যোগে পরিণত হওয়ার আশঙ্কা তৈরি করেছে। সরকার ও আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো জরুরি প্রস্তুতি গ্রহণ করেছে, তবে বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করেছেন—ঝড়ের কেন্দ্র অতিক্রমের সময় মানুষের প্রাণহানি ও অবকাঠামোগত ক্ষতি রোধে দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণ করা এখন অত্যন্ত জরুরি।


