রাশিয়া ব্রাসেলসে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা করে তবে ন্যাটো পাল্টার পদক্ষেপ

রাশিয়া ব্রাসেলসে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা করে তবে ন্যাটো পাল্টার পদক্ষেপ

বেলজিয়ামের প্রতিরক্ষামন্ত্রী থিও ফ্রাঙ্কেন বলেছেন, যদি রাশিয়া ব্রাসেলসের প্রতি ক্ষেপণাস্ত্র হামলা করে তবে ন্যাটো পাল্টা পদক্ষেপ নিয়ে মস্কোকে “মানচিত্র থেকে মুছে দেবে।” তিনি একই সঙ্গে ঘোষণা করেছেন যে ইউরোপে খুব শিগগিরই ৬০০টি এফ–৩৫ যুদ্ধবিমান মোতায়েন করা হবে। এই মন্তব্য তিনি ডি মর্গেন পত্রিকায় দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে এবং খবরটি পরবর্তীতে টিআরটি ওয়ার্ল্ডসহ বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে প্রচারিত হয়েছে।

থিও ফ্রাঙ্কেনের মন্তব্য সামরিক ও কূটনৈতিক পর্যায়ে সম্ভাব্য উত্তেজনা বৃদ্ধি করতে পারে এমন এক রূপরেখা উপস্থাপন করেছে। তিনি সাক্ষাৎকারে বলেন, “যদি (রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির) পুতিন ব্রাসেলসের দিকে ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়ে, আমরা মস্কোকে মানচিত্র থেকে মুছে ফেলব।” একই সেশনে তিনি যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাটোপ্রতি অঙ্গীকারকে গুরুত্ব দিয়ে বলেছেন যে আমেরিকা ন্যাটো সদস্যদের পাশে দাঁড়াবে এবং প্রয়োজনে সরাসরি প্রতিরোধে সক্রিয় ভূমিকা নেবে বলে তিনি মনে করেন।

 একদিকে তিনি ন্যাটোর প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করছেন—যেখানে সম্ভাব্য হামলার বিরুদ্ধে সমষ্টিগত প্রতিরক্ষা নিশ্চিত করা হয়—অন্যদিকে তিনি রাশিয়ার সামরিক সক্ষমতাকে পর্যাপ্ত গুরুত্ব দিয়েই ভুল মূল্যায়নের সতর্কতা দিয়েছেন। তিনি উল্লেখ করেছেন যে রাশিয়া সামরিক উৎপাদন ও সামর্থ্য বৃদ্ধি করেছে এবং ন্যাটো সদস্য দেশগুলোর তুলনায় গোলাবারুদের উৎপাদন তাদের জন্য সহায়ক অবস্থান তৈরি করছে। একই সঙ্গে তিনি বলছেন, ইউরোপের মধ্যে কেন্দ্রীয় কোনো সামরিক কমান্ড না থাকা একটি দুর্বলতা হিসেবে থেকে যেতে পারে।


ফ্রাঙ্কেনের ঘোষণার একটি প্রাসঙ্গিক দিক হল ইউরোপে ৬০০টি এফ–৩৫ যুদ্ধবিমানের মোতায়েন। এ ধরনের অত্যাধুনিক ফাইটার জেটের অবস্থান নির্মাণ করলে সেগুলি কৌশলগত ভারসাম্যে প্রভাব ফেলতে পারে—নানাভাবে নজরদারি, দ্রুত প্রতিক্রিয়া এবং প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পেতে পারে—তবে একই সঙ্গে এ ধরনের পদক্ষেপ সশস্ত্র প্রতিদ্বন্দ্বিতাকে তীব্র করতেও সক্ষম। তিনি বলেন, রাশিয়ান বাহিনী এ ধরণের বিমান চিহ্নিত করতে অসুবিধা অনুভব করে; এ কারণেই এগুলো রাশিয়ার পক্ষে উদ্বেগজনক।


ফ্রাঙ্কেন পশ্চিমাদের বিরুদ্ধে রাশিয়া ও চীনের যৌথ চ্যালেঞ্জের সম্ভাব্যতা উড়িয়ে দিতে মানা করেছেন। তার দাবি, চীন রাশিয়ার বিরুদ্ধে কাঁচামাল ও আর্থিক সহায়তা প্রদান করছে এবং যুদ্ধ অব্যাহত থাকলে পশ্চিমা জগতের দুর্বলতা তৈরি হবে—এই প্রেক্ষিতে চীন রাশিয়ার ওপর বিভিন্ন মাধ্যমেই সমর্থন জোরদার করছে বলে তিনি মনে করেন। তিনি আরও উল্লেখ করেছেন যে উত্তর কোরীয় সাহায্য বা সৈন্য প্রেরণকে রাশিয়ার পক্ষে ক্ষতিকর বলে বিবেচনা করা হচ্ছে না বলে যে বলা হয়েছে তা নিয়েও সতর্কতা প্রকাশ করেছেন।


ফ্রাঙ্কেন মন্তব্য করেন যে রাশিয়া নিকট ভবিষ্যতে বাল্টিক রাষ্ট্রগুলোতে বড় কোনো আক্রমণ চালাতে পারে না, কারণ সেটি সরাসরি ন্যাটো সদস্যদের সঙ্গে সংঘাতের দিকে নিয়ে যাবে। তিনি এটাও উল্লেখ করেছেন যে ইউরোপে জোরালো সামরিক সক্ষমতা বাড়ানো হলে রাশিয়ার পক্ষে সরাসরি আগ্রাসন দীর্ঘমেয়াদিভাবে কঠিন হবে।

থিও ফ্রাঙ্কেনের উক্তি কেবল সামরিক নয়—এটি কূটনৈতিক ও রাজনৈতিক স্তরেও জবাবদিহি দাবি করে। এমন সরাসরি হুমকি ন্যাটো এবং রাশিয়ার মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্ককে আরও জটিল করে তুলতে পারে এবং প্রতিক্রিয়ায় প্রতিপক্ষরা কৌশলগত, অর্থনৈতিক বা রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বিতা বাড়াতে পারে। একই সঙ্গে এ ধরনের বক্তব্য সদস্যদেশগুলোর মধ্যকার ঐক্য ও প্রতিরক্ষা নীতি পুনর্ব্যক্তির সুযোগও তৈরি করে—বিশেষ করে যে বিষয়ে ইউএসএর ভূমিকা ও প্রতিশ্রুতি নিয়ে পাবলিক ও রাজনৈতিক আলোচনা রয়েছে।


থিও ফ্রাঙ্কেনের মন্তব্য সামরিক প্রস্তুতি, কৌশলগত সমতা ও ভূ-রাজনৈতিক দিক থেকে গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন উত্থাপন করেছে। ইউরোপীয় দেশগুলোর প্রতিক্রিয়া, ন্যাটোর অভ্যন্তরীণ সমন্বয় ও রাশিয়া-নেটওয়ার্ক সম্পর্কিত পদক্ষেপগুলো ভবিষ্যতে এই অঞ্চলের স্থিতিশীলতা ও নিরাপত্তা পরিস্থিতি নির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।

আন্তর্জাতিক