ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মুহাম্মদ জাহেদ কামাল কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন, ব্যক্তিগত স্বার্থের ঊর্ধ্বে উঠে প্রতিষ্ঠানের স্বার্থকে সর্বাধিক গুরুত্ব দিতে হবে। তিনি বলেন, বাহিনীর সম্মান, দক্ষতা ও সেবার মান বজায় রাখতে প্রত্যেক সদস্যের আন্তরিকতা ও পেশাদারিত্ব অপরিহার্য।
সোমবার সকালে রাজধানীর ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তরের সদর দপ্তরে আয়োজিত ‘দরবার’ অনুষ্ঠানে তিনি এ আহ্বান জানান। অনুষ্ঠানটিতে ঢাকায় কর্মরত বিভিন্ন স্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা উপস্থিত ছিলেন। দেশের বিভাগীয় উপপরিচালক ও জেলা পর্যায়ের কর্মকর্তারা নিজ নিজ কর্মস্থল থেকে অনলাইনে যুক্ত হন।
মহাপরিচালক অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন বাহিনীর সাম্প্রতিক কর্মকাণ্ড, চলমান উন্নয়ন প্রকল্প এবং ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নিয়ে। তিনি বলেন, ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা অপারেশন্স ও উদ্ধার কার্যক্রমে যে সাহসিকতা ও নিষ্ঠার পরিচয় দিচ্ছেন, তা দেশের মানুষের আস্থা অর্জনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। এই সাফল্য ধরে রাখতে সবাইকে দায়িত্বশীলতার সঙ্গে কাজ করতে হবে।
তিনি বলেন, “আমরা যে জনগণের সেবা করি, সেই জনগণের আস্থা অর্জনই আমাদের সবচেয়ে বড় অর্জন। তাই বাহিনীর প্রতিটি সদস্যকে নিজ নিজ দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করতে হবে। ব্যক্তিগত স্বার্থের চেয়ে প্রতিষ্ঠানের স্বার্থই আমাদের সবার অগ্রাধিকার হওয়া উচিত।”
দরবার অনুষ্ঠানে মহাপরিচালক শুষ্ক মৌসুমে অগ্নিকাণ্ডের ঝুঁকি বৃদ্ধি প্রসঙ্গে সতর্কতা জারি করেন। তিনি বলেন, বছরের এই সময়ে ঘন ঘন অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে থাকে। তাই সাধারণ মানুষকে সচেতন করতে ও প্রতিরোধমূলক কার্যক্রম জোরদার করতে হবে। এ লক্ষ্যে ফায়ার সার্ভিসের সচেতনতামূলক প্রচারাভিযান অব্যাহত রাখার নির্দেশ দেন তিনি।
অনুষ্ঠানের এক পর্যায়ে মহাপরিচালক মিয়ানমারে ভূমিকম্পে উদ্ধার কার্যক্রমে অংশ নেওয়া ১০ জন সদস্যকে মিয়ানমার সরকারের পাঠানো স্বারক পদক হস্তান্তর করেন। ওই সদস্যরা আন্তর্জাতিক পর্যায়ে ফায়ার সার্ভিসের মর্যাদা বৃদ্ধি করেছেন বলে তিনি উল্লেখ করেন।
এছাড়া, অধিদপ্তরের বিভিন্ন বিভাগীয় ও কেন্দ্রীয় পর্যায়ের পেশাগত প্রতিযোগিতায় বিজয়ী কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের মধ্যে পুরস্কার বিতরণ করা হয়। প্রশাসনিক কাজে বিশেষ দক্ষতা ও আন্তরিকতার স্বীকৃতি হিসেবে তাদেরকে ‘মহাপরিচালকের প্রশংসা’ শিরোনামে ইনসিগনিয়া, সনদপত্র এবং নগদ অর্থ পুরস্কার প্রদান করা হয়। এটি ছিল প্রথমবারের মতো এ ধরনের পুরস্কারের আয়োজন।
অনুষ্ঠানে ফায়ার সার্ভিসের পরিচালক (অপারেশন্স অ্যান্ড মেইনটেন্যান্স) লে. কর্নেল মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম চৌধুরীসহ অন্যান্য ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। তারা মহাপরিচালকের নির্দেশনা বাস্তবায়নে একযোগে কাজ করার প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করেন।
বাহিনীর সাম্প্রতিক কর্মকাণ্ড প্রসঙ্গে জানা যায়, গত এক বছরে সারা দেশে অগ্নিকাণ্ড ও দুর্ঘটনায় উদ্ধার কার্যক্রমে ফায়ার সার্ভিস সদস্যরা উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখেন। পাশাপাশি জনগণের মধ্যে অগ্নি-নিরাপত্তা বিষয়ে সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য বিভিন্ন জনসচেতনতামূলক কর্মসূচিও পরিচালিত হয়। কর্মকর্তাদের মতে, এই উদ্যোগগুলো প্রতিষ্ঠানটির সেবা কার্যক্রমকে আরও কার্যকর করছে।
অধিদপ্তরের একটি সূত্র জানায়, আগামী শুষ্ক মৌসুমকে সামনে রেখে ফায়ার সার্ভিস ইতিমধ্যে ঝুঁকিপূর্ণ এলাকাগুলো চিহ্নিত করেছে এবং সেখানে বিশেষ নজরদারি ও প্রশিক্ষণ কর্মসূচি শুরু করা হচ্ছে। পাশাপাশি নগর এলাকায় বহুতল ভবন, শিল্প কারখানা ও বাজার এলাকায় অগ্নি-নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে বিশেষ পরিদর্শন কার্যক্রম হাতে নেওয়া হয়েছে।
মহাপরিচালক অনুষ্ঠানের সমাপ্তি বক্তব্যে বলেন, “আমরা এমন এক প্রতিষ্ঠানে কাজ করি, যেখানে প্রতিটি মুহূর্তে প্রস্তুত থাকতে হয় মানুষের জীবন ও সম্পদ রক্ষার জন্য। তাই আমাদের কাজ শুধু পেশাগত দায়িত্ব নয়, এটি একধরনের মানবিক দায়বদ্ধতা। প্রত্যেকে যদি নিজের অবস্থান থেকে আন্তরিকভাবে দায়িত্ব পালন করে, তাহলে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স বাহিনী আরও সমৃদ্ধ ও জনগণের আস্থার প্রতীক হিসেবে গড়ে উঠবে।”
অনুষ্ঠান শেষে মহাপরিচালক কর্মকর্তাদের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন এবং ভবিষ্যৎ কর্মপরিকল্পনা নিয়ে মতবিনিময় করেন। তিনি বাহিনীর কর্মপরিবেশ আরও আধুনিক ও প্রযুক্তিনির্ভর করার আশাবাদ ব্যক্ত করেন।


