ChatGPT said:শিশুরোগ ব্যবস্থাপনায় স্মার্টফোন অ্যাপের মাধ্যমে বড় পরিবর্তন আনতে যাচ্ছে বাংলাদেশ

ChatGPT said:শিশুরোগ ব্যবস্থাপনায় স্মার্টফোন অ্যাপের মাধ্যমে বড় পরিবর্তন আনতে যাচ্ছে বাংলাদেশ

বাংলাদেশে শিশুস্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনায় এক নতুন যুগের সূচনা হতে যাচ্ছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর এবং সেভ দ্য চিলড্রেন বাংলাদেশের যৌথ উদ্যোগে তৈরি ইন্টিগ্রেটেড ম্যানেজমেন্ট অফ চাইল্ডহুড ইলনেস (আইএমসিআই) বা সমন্বিত শিশুরোগ ব্যবস্থাপনা অ্যাপটি এখন সফলভাবে মাঠপর্যায়ে পরীক্ষিত হয়েছে। বরিশাল জেলায় পরিচালিত পাইলট প্রকল্পের ফলাফল বলছে, এই অ্যাপটির ব্যবহারে শিশুরোগ শনাক্তে ভুল কমেছে, চিকিৎসা দ্রুত হচ্ছে, এবং ফলো-আপ ও জবাবদিহি বেড়েছে।

রোববার (২৭ অক্টোবর) সকাল ১১টায় রাজধানীর মহাখালীতে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কনফারেন্স রুমে আয়োজিত এক ন্যাশনাল ডিজেমিনেশন অনুষ্ঠানে এই গবেষণার ফলাফল উপস্থাপন করা হয়। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সচিব মো. সাইদুর রহমান, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. মো. আবু জাফর এবং সেভ দ্য চিলড্রেন বাংলাদেশের কান্ট্রি ডিরেক্টর সুমন সেনগুপ্তসহ বিভিন্ন সরকারি কর্মকর্তা, গবেষক ও উন্নয়ন সহযোগী সংস্থার প্রতিনিধি।

অ্যাপটির মূল উদ্দেশ্য হলো মাঠপর্যায়ের স্বাস্থ্যকর্মীদের শিশুরোগ ব্যবস্থাপনার সঠিক নির্দেশনা প্রদান করা, যাতে তারা শিশুর উপসর্গ এবং বয়স অনুযায়ী সঠিক রোগ শনাক্ত, চিকিৎসা, রেফারেল এবং ওষুধ প্রদানের প্রক্রিয়া সহজভাবে অনুসরণ করতে পারে। এটি জাতীয় ড্যাশবোর্ডের মাধ্যমে সারা দেশে ডেটা ট্র্যাকিং ও তথ্য সংগ্রহের কাজকে আরও গতিশীল করেছে।

বরিশালে পরিচালিত পাইলট প্রকল্পের ফলাফল জানিয়ে সেভ দ্য চিলড্রেনের গবেষক দল এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক শফিউন এন শিমুল বলেন, অ্যাপের মাধ্যমে শিশুদের রোগ শনাক্তে ভুল প্রায় ৩০ শতাংশ কমেছে। এতে মাঠপর্যায়ে সংগৃহীত তথ্য তাৎক্ষণিকভাবে জাতীয় ড্যাশবোর্ডে জমা পড়ে, ফলে কাগজপত্রের ব্যবহার এবং মানবসম্পদের প্রয়োজনীয়তা কমেছে। এই নতুন ব্যবস্থাপনা পদ্ধতির মাধ্যমে রোগীর ফলো-আপ এবং ট্র্যাকিং আরও সহজ হয়েছে, বিশেষত দুর্গম এবং প্রত্যন্ত অঞ্চলের ক্ষেত্রে।

গবেষণার আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো, মাঠপর্যায়ের স্বাস্থ্যকেন্দ্র থেকে শুরু করে জেলা ও জাতীয় পর্যায় পর্যন্ত বাস্তব সময়ের তথ্য পাওয়া যাচ্ছে, যা নীতিনির্ধারণে সহায়ক হচ্ছে। এর মাধ্যমে শিশুস্বাস্থ্য সংক্রান্ত বিভিন্ন বিষয়ে দ্রুত সিদ্ধান্ত নেওয়া সম্ভব হচ্ছে।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সচিব মো. সাইদুর রহমান। তিনি বলেন, “প্রতি বছর বাংলাদেশের অনেক শিশু মৃত্যুবরণ করে, যা প্রতিরোধযোগ্য। আইএমসিআই অ্যাপের মাধ্যমে রোগ শনাক্তকরণ এবং চিকিৎসা প্রদান এখন আরও সময়মতো সম্ভব হচ্ছে। এটি সারা দেশে বাস্তবায়িত হলে দেশের প্রতিটি শিশু এই প্রযুক্তির সুবিধা পাবে।” তিনি আরও বলেন, সরকার এই উদ্ভাবনকে জাতীয় পর্যায়ে সম্প্রসারণে আগ্রহী এবং এর মাধ্যমে শিশুস্বাস্থ্য ক্ষেত্রে ব্যাপক উন্নতি আশা করা হচ্ছে।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. মো. আবু জাফর বলেন, “বাংলাদেশের মোট জনসংখ্যার প্রায় ৪০ শতাংশ শিশু। ২০৩০ সালের মধ্যে সবার জন্য স্বাস্থ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হলে তৃণমূল পর্যায়ের সেবা সমন্বয়ই মূল চাবিকাঠি। আইএমসিআই অ্যাপ সেই সমন্বয়কে গতিশীল করেছে।”

এছাড়া, সেভ দ্য চিলড্রেন বাংলাদেশের কান্ট্রি ডিরেক্টর সুমন সেনগুপ্ত অনুষ্ঠানে বলেন, “আইএমসিআই অ্যাপ কেবল একটি প্রযুক্তিগত উদ্ভাবন নয়, এটি শিশুস্বাস্থ্যের ক্ষেত্রেও একটি নতুন প্রতিশ্রুতি। এর মাধ্যমে প্রাথমিক শনাক্তকরণ এবং রেফারেল প্রক্রিয়া দ্রুত হচ্ছে, যা শিশুমৃত্যুহার কমাতে ভূমিকা রাখবে।” তিনি আরও জানান, সরকার ও অন্যান্য দাতা সংস্থার সহযোগিতায় এই অভিজ্ঞতাকে জাতীয় পর্যায়ে ছড়িয়ে দেওয়া হবে।

অ্যাপটি ব্যবহারকারীদের প্রশিক্ষণ এবং সারাদেশে এর সম্প্রসারণের সম্ভাবনা নিয়ে আলোচনা করেন ইউনিসেফ, ডব্লিউএইচও, আইসিডিডিআর’বি, ইউএসএইডসহ বিভিন্ন উন্নয়ন সহযোগী সংস্থার প্রতিনিধিরা। তাঁরা অ্যাপটির কার্যকারিতা এবং দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে এর প্রয়োগের সম্ভাবনা নিয়ে মতামত প্রদান করেন।

অনুষ্ঠান শেষে, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ও সেভ দ্য চিলড্রেন যৌথভাবে সারা দেশে মানসম্মত শিশুসেবা নিশ্চিত করতে ডিজিটাল উদ্ভাবন সম্প্রসারণের অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করেছে। পরিকল্পনা অনুযায়ী, আগামী বছর থেকে বরিশাল মডেল অনুসরণ করে আরও কয়েকটি জেলায় আইএমসিআই অ্যাপের ব্যবহার শুরু হতে পারে।

এই উদ্যোগের মাধ্যমে, বাংলাদেশের শিশুরোগ ব্যবস্থাপনা আরও উন্নত এবং দ্রুতগতিতে কার্যকর হয়ে উঠবে, যা শিশুস্বাস্থ্যে এক নতুন দিগন্তের সূচনা করবে।

স্বাস্থ্য