অ্যাটর্নি জেনারেল কার্যালয়ে ‘ফ্যাসিবাদের দোসরদের’ নিয়োগ বাতিলের দাবিতে আইনজীবীদের বিক্ষোভ

অ্যাটর্নি জেনারেল কার্যালয়ে ‘ফ্যাসিবাদের দোসরদের’ নিয়োগ বাতিলের দাবিতে আইনজীবীদের বিক্ষোভ

জাতীয় ডেস্ক

সুপ্রিম কোর্টের অ্যাটর্নি জেনারেল কার্যালয়ে কর্মরত ‘ফ্যাসিবাদের দোসর’ হিসেবে পরিচিত আইন কর্মকর্তাদের নিয়োগ বাতিলের দাবিতে বিক্ষোভ করেছে বৈষম্যবিরোধী আইনজীবী সমাজ নামের একটি সংগঠন। বুধবার (২৯ অক্টোবর) সকালে রাজধানীর সুপ্রিম কোর্ট প্রাঙ্গণে এই বিক্ষোভ অনুষ্ঠিত হয়।

সংগঠনটির নেতাকর্মীরা অ্যাটর্নি জেনারেল কার্যালয়ের প্রধান ফটকে প্রতীকী তালা ঝুলিয়ে বিক্ষোভ প্রদর্শন করেন। তাদের দাবি, রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ আইন অফিসে এখনো এমন কিছু কর্মকর্তা কর্মরত রয়েছেন, যারা অতীতে ফ্যাসিবাদী সরকারের ঘনিষ্ঠ সহযোগী ছিলেন।

সকাল সাড়ে ১০টার দিকে প্রায় একশ’র বেশি আইনজীবী কার্যালয়ের সামনে জড়ো হয়ে ফ্যাসিবাদবিরোধী স্লোগান দেন। বিক্ষোভের ফলে কিছু সময়ের জন্য কার্যালয়ের প্রবেশপথ বন্ধ থাকে। পরে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সেখানে উপস্থিত হয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।

সংগঠনের পক্ষ থেকে জানানো হয়, তারা অ্যাটর্নি জেনারেল কার্যালয়ের প্রধান ফটকে প্রতীকীভাবে তালা ঝুলিয়ে প্রতিবাদ জানিয়েছেন, যাতে ‘ফ্যাসিবাদের দোসরদের’ পুনর্বাসন না হয়।

বিক্ষোভে অংশ নিয়ে সংগঠনের যুগ্ম আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট মো. জসিম উদ্দীন বলেন, “অ্যাটর্নি জেনারেল কার্যালয়ে এখনো এমন অনেক কর্মকর্তা রয়েছেন, যারা অতীতে স্বৈরশাসনের সহযোগী ছিলেন। ২০২৪ সালের গণঅভ্যুত্থানের চেতনা ছিল ফ্যাসিবাদের অবসান ঘটানো। কিন্তু এখন দেখা যাচ্ছে, সেই দোসররাই আবার দায়িত্বে ফিরে আসছেন।”

ব্যারিস্টার আশরাফ রহমান বলেন, “রাষ্ট্রের আইনব্যবস্থায় যারা দায়িত্ব পালন করেন, তাদের ওপর জনগণের আস্থা থাকা প্রয়োজন। কিন্তু যারা অতীতে দমন-পীড়নের রাজনীতিকে বৈধতা দিয়েছেন, তারা এই আস্থার যোগ্য নন।”

অন্য বক্তারা জানান, তাঁরা শুনেছেন নতুন করে কিছু ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল ও সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল নিয়োগের প্রক্রিয়া চলছে, যেখানে অতীতের বিতর্কিত ব্যক্তিদের অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। বক্তারা সতর্ক করে বলেন, “এই নিয়োগ কার্যকর হলে আমরা আইনি ও গণতান্ত্রিক উপায়ে তা প্রতিহত করব।”

বৈষম্যবিরোধী আইনজীবী সমাজের নেতারা বলেন, অ্যাটর্নি জেনারেল কার্যালয় দেশের বিচারব্যবস্থার গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান। সেখানে কোনোভাবেই অতীতের ফ্যাসিবাদী সরকারের সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিদের নিয়োগ দেওয়া উচিত নয়। তাঁরা দাবি করেন, শহীদের আত্মত্যাগ ও গণআন্দোলনের ফসল হিসেবে যে গণতান্ত্রিক পরিবর্তন এসেছে, তা যেন কোনোভাবেই ক্ষুণ্ন না হয়।

সংগঠনটির পক্ষ থেকে এক বিবৃতিতে জানানো হয়েছে, তারা ফ্যাসিবাদের দোসরদের অপসারণ ও নতুন নিয়োগে স্বচ্ছতা নিশ্চিত করার দাবিতে পরবর্তী পদক্ষেপ হিসেবে একটি স্মারকলিপি দাখিলের প্রস্তুতি নিচ্ছে।

অ্যাটর্নি জেনারেল কার্যালয়ের প্রশাসনিক কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, অফিসের কাজ স্বাভাবিকভাবে চলছে এবং তালা ঝুলানোর ঘটনাটি অল্প সময়ের জন্য প্রতীকী ছিল। অফিসের নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। তবে বিক্ষোভে উত্থাপিত অভিযোগ সম্পর্কে আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।

২০২৪ সালের গণঅভ্যুত্থানের পর সরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তাদের রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতা নিয়ে বিভিন্ন সংগঠন প্রশ্ন তুলছে। সাম্প্রতিক মাসগুলোতে বিচার, প্রশাসন ও কূটনৈতিক খাতে নিয়োগে ‘নিরপেক্ষতা ও পেশাদারিত্ব’ নিশ্চিত করার দাবি জোরদার হয়েছে।

আইন বিশেষজ্ঞদের মতে, অ্যাটর্নি জেনারেল কার্যালয়ের মতো গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানে নিয়োগের ক্ষেত্রে অতীত রাজনৈতিক সম্পৃক্ততা নিয়ে সতর্কতা অবলম্বন করা স্বাভাবিক। তবে এ ধরনের সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে সুনির্দিষ্ট প্রমাণ ও আইনি কাঠামো অনুসরণ জরুরি।

বিক্ষোভ শেষে সংগঠনের নেতারা ঘোষণা দেন, আগামী সপ্তাহে তারা সুপ্রিম কোর্ট প্রাঙ্গণে আরও বৃহত্তর সমাবেশ আয়োজন করবেন, যদি তাদের দাবি বাস্তবায়নের কোনো আশ্বাস না মেলে।

আইন আদালত