এনসিপি-র মুখ্য সমন্বয়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারীর দাবি: বিএনপি গণভোট বানচাল করার চেষ্টা করছে

এনসিপি-র মুখ্য সমন্বয়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারীর দাবি: বিএনপি গণভোট বানচাল করার চেষ্টা করছে

রাজনৈতিক ডেস্ক

জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)-র মুখ্য সমন্বয়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী বুধবার (২৯ অক্টোবর ২০২৫) দুপুরে দলের কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে অভিযোগ করেন যে বিএনপি গণভোট বানচাল করার চেষ্টা করছে। তিনি নির্বাচন প্রসঙ্গে কমিশনের সক্ষমতার ওপর জোর দিয়ে বলেন, গণভোট আগে হোক বা পরে হোক সুষ্ঠু প্রক্রিয়ায় অনুষ্ঠিত হওয়া প্রয়োজন এবং নির্বাচনপ্রক্রিয়ার স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে কমিশনকে নির্দিষ্ট ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে বলে দাবী করেন।

সংবাদ সম্মেলনে নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী বলেন, বিএনপি ও জামায়াত যদি পর্যায়ক্রমে বেছে নেয়—আগে বা পরে—তবে গণভোটকে বানচাল করার চেষ্টা করবে; এ ধরনের প্রচেষ্টা নির্বাচন কমিশনের সক্ষমতার ওপর নির্ভরশীল হবে। তিনি বলেন, ভোটকেন্দ্রে আইনশৃঙ্খলা ও সুষ্ঠু পরিবেশ নিশ্চিত করার জন্য কমিশনকে দুই ধরণের যাচাইকরণ বা “ইলেকশন টেস্টিং” সম্পন্ন করতে হবে। একই সঙ্গে তিনি জানান যে জনগণের ভোটের ক্ষমতা শক্তিশালী করা এনসিপি-র লক্ষ্য এবং সেজন্যই গণভোটকে সুষ্ঠু প্রক্রিয়ায় আয়োজন করা জরুরি।

তিনি আরও বলেন যে ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে ‘গণ-অভ্যুত্থানের সরকার’ হিসেবে প্রধান উপদেষ্টা উল্লেখ করে, ওই আদেশে স্বাক্ষর করার প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে তিনি শহীদ মিনারে যাবেন এবং জনগণের সামনে ঐতিহাসিক সিদ্ধান্ত উপস্থাপন করবেন—এমন বক্তব্যও তিনি দেন। পাটওয়ারী দাবি করেন যে আদেশের কাঠামোর অধীনে একটি গণভোট আয়োজনের প্রস্তাব রয়েছে, এবং এ বিষয়ে দেশে তর্ক-বিতর্ক চললেও এনসিপি সেসব তর্কবিতর্কে অংশগ্রহণ করবে না বলে জানান।

কমিশন ও কমিশন-কেন্দ্রিক মন্তব্য: পাটওয়ারী বলেন, ‘সালাহউদ্দিন কমিশন’কে ‘জাতীয় ঐকমত্য কমিশন’ আখ্যা দিয়ে প্রশংসা ও সমালোচনার প্রসঙ্গ টেনেছেন এবং যুক্তি প্রদান করেন যে ঐকমত্য কমিশন জুলাই সনদ বাস্তবায়ন কিভাবে করবে সে বিষয়টি পর্যাপ্তভাবে আলোচনা করেনি। তিনি উন্নত জাতিগত ঐকমত্য ও আইনি বাস্তবায়ন বিষয়ে কমিশন থেকে নির্দিষ্ট নীতি ও ব্যাখ্যা প্রকাশের দাবি জানান। একই সঙ্গে তিনি নির্বাচন কমিশনকে নীতিমালা প্রকাশে অনুরোধ করে বলেন যে কমিশন যে তালিকা বা নির্বাচন সংক্রান্ত তালিকা করেছে সেগুলো জাতির সামনে ব্যাখ্যা করার প্রয়োজন রয়েছে, যা কমিশন পারেনি—এমন মন্তব্য সূত্রে তিনি কমিশনের ওপর প্রশ্ন তুলেন।

দলীয় ও রাজনৈতিক প্রসঙ্গ: সংবাদ সম্মেলনে পাটওয়ারী দলীয় প্রতীক ‘শাপলা’ প্রসঙ্গে আশাবাদ প্রকাশ করেন এবং বলেন যে ইসি (নির্বাচন কমিশন) তাদের বিরুদ্ধে কোনো শক্তিশালী যুক্তি উপস্থাপন করতে পারেনি। তিনি পরামর্শ দেন যে নির্বাচনসংক্রান্ত নীতিমালা স্পষ্টভাবে নির্ধারণ করা দরকার এবং তালিকা প্রণয়ন বা প্রার্থিদের বাছাইয়ের মাপকাঠি জাতির কাছে তুলে ধরা উচিত।

সম্ভাব্য প্রভাব ও বিশ্লেষণাত্মক প্রেক্ষাপট: এনসিপি নেতার এসব বক্তব্য রাজনৈতিক এগুচ্ছন্নতা, নির্বাচনপ্রক্রিয়ার স্বচ্ছতা ও বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের মধ্যে বিদ্যমান আস্থা-ঘাটতির ওপর আরও আলো ফেলতে পারে। বিএনপি ও জামায়াতের বিরুদ্ধে গণভোট বানচাল করার অভিযোগ রাজনৈতিক উত্তেজনা বাড়াতে পারে এবং নির্বাচনী পরিবেশে ভরসার প্রশ্ন তুলতে পারে—বিশেষত যেখানে নির্বাচন কমিশনের কাজকর্ম ও নীতিমালা নিয়ে বিতর্ক রয়েছে। কমিশন যদি দ্রুত ও স্বচ্ছভাবে নীতিমালা ও প্রক্রিয়া প্রকাশ না করে, তাহলে ভোটকার্যের গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে সংশয় বৃদ্ধি পেতে পারে এবং তা রাজনৈতিক স্থিতিশীলতায় প্রভাব ফেলার সম্ভাবনা রাখে।

আইনি ও প্রশাসনিক বিবেচনা: পাটওয়ারীর বক্তব্যে ‘জুলাই সনদ’ ও ওই সনদ বাস্তবায়নের আইনি ভিত্তি সম্পর্কে উল্লেখ থাকায় সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোকে আইনগত ব্যাখ্যা ও প্রশাসনিক প্রস্তুতি চালিয়ে যেতে হতে পারে। সরকারি ও অ-সরকারি পর্যায় থেকে নির্দেশনা, তদারকি ও তফসিল নির্ধারণের কর্মদক্ষতা নির্বাচনপ্রক্রিয়ার গ্রহণযোগ্যতা নিশ্চিত করবে বলে রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা মনে করছেন।

উল্লেখ্য, এ সংবাদ সম্মেলন বুধবার (২৯ অক্টোবর ২০২৫) দুপুরে এনসিপি-র দলের কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত হয়; সংবাদ সম্মেলনের বিবৃতি সংবাদকর্মীদের সামনে পাটওয়ারী নিজেই প্রদান করেন।

রাজনীতি