ওয়ালটনের ১৯তম বার্ষিক সাধারণ সভায় ১৭৫ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ অনুমোদন

ওয়ালটনের ১৯তম বার্ষিক সাধারণ সভায় ১৭৫ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ অনুমোদন

অর্থনীতি ডেস্ক:

পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত প্রকৌশল খাতের প্রতিষ্ঠান ওয়ালটন হাই-টেক ইন্ডাস্ট্রিজ পিএলসির ১৯তম বার্ষিক সাধারণ সভা (এজিএম) ২৮ অক্টোবর রাজধানীর কুর্মিটোলা গলফ ক্লাবে হাইব্রিড পদ্ধতিতে অনুষ্ঠিত হয়েছে। সভায় কোম্পানির ২০২৪–২০২৫ অর্থবছরের আর্থিক হিসাব অনুমোদনের পাশাপাশি ১৭৫ শতাংশ নগদ ও ১০ শতাংশ স্টক ডিভিডেন্ড ঘোষিত হয়।

সভায় সভাপতিত্ব করেন কোম্পানির চেয়ারম্যান এস এম শামছুল আলম। উপস্থিত ছিলেন ভাইস চেয়ারম্যান এস এম আশরাফুল আলম, ব্যবস্থাপনা পরিচালক এস এম মাহবুবুল আলম, পরিচালক এস এম নূরুল আলম রেজভী ও এস এম মঞ্জুরুল আলম অভি, স্বতন্ত্র পরিচালক শামসুল আলম মল্লিক, প্রফেসর মো. সাদিকুল ইসলাম ও আখতার মতিন চৌধুরীসহ অন্যান্য পরিচালকবৃন্দ। এছাড়া কোম্পানির সংবিধিবদ্ধ নিরীক্ষক, কর্পোরেট গভর্নেন্স কমপ্লায়েন্স নিরীক্ষক, নিয়ন্ত্রক সংস্থার প্রতিনিধি ও বিপুল সংখ্যক সাধারণ ও প্রাতিষ্ঠানিক শেয়ারহোল্ডার সভায় অংশ নেন।

ভার্চুয়াল মাধ্যমে কোম্পানির পরিচালক এস এম রেজাউল আলম, তাহমিনা আফরোজ তান্না ও রাইসা সিগমা হিমাসহ অনলাইন প্ল্যাটফর্মে যুক্ত হন আরও অনেক শেয়ারহোল্ডার। সভা সঞ্চালনা করেন কোম্পানির সচিব মো. রফিকুল ইসলাম।

সভায় স্বাগত বক্তব্যে চেয়ারম্যান এস এম শামছুল আলম বলেন, দেশীয় উদ্ভাবন, দক্ষ মানবসম্পদ এবং প্রযুক্তি নির্ভর শিল্পায়নের মাধ্যমে ওয়ালটন ‘মেইড ইন বাংলাদেশ’ ব্র্যান্ডকে বৈশ্বিক পর্যায়ে প্রতিষ্ঠিত করতে সক্ষম হয়েছে। তিনি জানান, বর্তমানে ৫০টিরও বেশি দেশে ওয়ালটনের পণ্য রপ্তানি হচ্ছে, যা দেশের বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে। প্রতিষ্ঠানটি টেকসই প্রবৃদ্ধি, উদ্ভাবনী গবেষণা, পরিবেশবান্ধব উৎপাদন ও কর্মসংস্থান সৃষ্টির মাধ্যমে জাতীয় উন্নয়নে ভূমিকা রাখছে।

ব্যবস্থাপনা পরিচালক এস এম মাহবুবুল আলম সভায় ২০২৪–২০২৫ অর্থবছরের বার্ষিক প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন। তিনি জানান, বৈশ্বিক বাণিজ্য অস্থিরতা, আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতিযোগিতা বৃদ্ধি এবং অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক পরিস্থিতির কারণে চলতি অর্থবছরটি কোম্পানির জন্য ছিল চ্যালেঞ্জিং। তবে সময়োপযোগী কৌশলগত পরিকল্পনা, পরিচালন ব্যয় নিয়ন্ত্রণ ও বাজার সম্প্রসারণের মাধ্যমে ওয়ালটন স্থিতিশীল প্রবৃদ্ধি বজায় রাখতে সক্ষম হয়েছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়, প্রতিষ্ঠানটি দেশে উদ্ভাবনী প্রযুক্তির উন্নয়ন ও নতুন পণ্য উৎপাদনে বিনিয়োগ বৃদ্ধি করেছে। এর অংশ হিসেবে ওয়ালটন লিথিয়াম আয়ন ব্যাটারি উৎপাদন কারখানা স্থাপনের উদ্যোগ নিয়েছে, যা স্থানীয়ভাবে উন্নত শক্তি সঞ্চয় প্রযুক্তির বিকাশে নতুন দিগন্ত উন্মোচন করতে পারে। শেয়ারহোল্ডাররা এই উদ্যোগকে দেশের প্রযুক্তি শিল্পে সম্ভাবনাময় পদক্ষেপ হিসেবে দেখছেন।

সভায় আলোচ্যসূচি অনুযায়ী ২০২৪–২০২৫ অর্থবছরের আর্থিক হিসাব, নিরীক্ষা প্রতিবেদন ও পরিচালকদের প্রতিবেদন অনুমোদন করা হয়। এছাড়া অবসরপ্রাপ্ত পরিচালকদের পুনঃনিয়োগ ও ঘোষিত লভ্যাংশ অনুমোদন পায়।

এছাড়া, ২০২৫–২০২৬ অর্থবছরের জন্য সংবিধিবদ্ধ নিরীক্ষক হিসেবে মেসার্স এ কাশেম অ্যান্ড কোং, চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্টস এবং কর্পোরেট গভর্নেন্স কমপ্লায়েন্স নিরীক্ষক হিসেবে মেসার্স মোহাম্মদ সানাউল্লাহ অ্যান্ড অ্যাসোসিয়েটস, চার্টার্ড সেক্রেটারি অ্যান্ড ম্যানেজমেন্ট কনসালট্যান্টসকে নিয়োগ এবং তাদের পারিশ্রমিক অনুমোদন করা হয়।

সভায় উপস্থিত বিনিয়োগকারীরা কোম্পানির স্থিতিশীল আর্থিক পারফরম্যান্স ও নগদ লভ্যাংশ প্রদানে সন্তোষ প্রকাশ করেন। তারা আশা প্রকাশ করেন, নতুন কারখানা স্থাপন ও বৈশ্বিক বাজার সম্প্রসারণের ফলে ওয়ালটন ভবিষ্যতে শতাধিক দেশে ব্যবসা সম্প্রসারিত করতে পারবে, যা দেশীয় শিল্প খাতে বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থান বৃদ্ধিতে সহায়ক ভূমিকা রাখবে।

ওয়ালটনের সাম্প্রতিক আর্থিক প্রতিবেদন অনুযায়ী, প্রতিষ্ঠানটি দেশে উৎপাদিত উচ্চ প্রযুক্তির পণ্যের মাধ্যমে দেশীয় বাজারে নেতৃত্ব ধরে রাখার পাশাপাশি রপ্তানিমুখী শিল্পায়নের পথ সুদৃঢ় করছে। নতুন বিনিয়োগ কার্যক্রম বাস্তবায়িত হলে বাংলাদেশে প্রযুক্তিনির্ভর শিল্প খাতের প্রবৃদ্ধি আরও ত্বরান্বিত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

অর্থ বাণিজ্য