আন্তর্জাতিক ডেস্ক:
ফিলিস্তিনের যুদ্ধবিধ্বস্ত গাজা উপত্যকায় পাকিস্তানের সৈন্য পাঠানোর বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা (সিআইএ) ও ইসরায়েলের গোয়েন্দা সংস্থা (মোসাদ)-এর সঙ্গে ইসলামাবাদের কোনো চুক্তি হয়েছে—এমন খবরকে সম্পূর্ণ মিথ্যা ও ভিত্তিহীন বলে প্রত্যাখ্যান করেছে পাকিস্তান। মঙ্গলবার দেশটির তথ্য মন্ত্রণালয়ের এক বিবৃতিতে জানানো হয়, গাজা পরিস্থিতি নিয়ে পাকিস্তান, সিআইএ ও মোসাদের মধ্যে কোনো ধরনের আলোচনা, সমঝোতা বা বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়নি।
বিবৃতিতে বলা হয়, সম্প্রতি কিছু আন্তর্জাতিক ও আঞ্চলিক গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদে দাবি করা হয় যে, যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় স্বাক্ষরিত কথিত ‘গাজা শান্তি চুক্তি’-এর আওতায় পাকিস্তান গাজায় শান্তিরক্ষী বাহিনী পাঠাতে সম্মত হয়েছে। এসব প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, চুক্তির অংশ হিসেবে মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশগুলোর সেনা নিয়ে একটি আন্তর্জাতিক স্থিতিশীলতা বাহিনী (ইন্টারন্যাশনাল স্ট্যাবিলাইজেশন ফোর্স–আইএসএফ) গঠন করা হবে, যার দায়িত্ব হবে গাজায় নিরাপত্তা ও শান্তি পুনঃপ্রতিষ্ঠা করা।
পাকিস্তানের তথ্য মন্ত্রণালয় জানায়, এসব খবর “সম্পূর্ণ মনগড়া ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত।” মন্ত্রণালয় জোর দিয়ে বলে, পাকিস্তান ইসরায়েলকে স্বীকৃতি দেয়নি এবং তাদের সঙ্গে কোনো কূটনৈতিক বা সামরিক সম্পর্কও নেই। দেশটি সবসময় ফিলিস্তিনিদের আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকারের পক্ষে অবস্থান নিয়েছে এবং সেই অবস্থান থেকে পাকিস্তান কোনোভাবেই সরে যায়নি।
অন্যদিকে, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্স (পূর্বনাম টুইটার)-এ দেওয়া এক পোস্টে পাকিস্তানের তথ্য মন্ত্রণালয় উল্লেখ করে, সেনাবাহিনীর গণমাধ্যম শাখা কিংবা কোনো সরকারি বা আন্তর্জাতিক সূত্র গাজায় পাকিস্তানি সেনা পাঠানোর বিষয়ে কোনো নিশ্চিত তথ্য দেয়নি। বিবৃতিতে আরও বলা হয়, “পাকিস্তানের নেতৃত্ব, সিআইএ কিংবা মোসাদের মধ্যে এই ধরনের বৈঠক বা চুক্তির কোনো প্রশ্নই ওঠে না। এটি বিভ্রান্তি ছড়ানোর একটি অপচেষ্টা।”
তথ্য মন্ত্রণালয় অভিযোগ করে যে, প্রতিবেশী একটি দেশের কিছু সংবাদমাধ্যম অতীতে একাধিকবার পাকিস্তানবিরোধী বিভ্রান্তিকর তথ্য প্রচার করেছে। এসব প্রতিবেদনের উদ্দেশ্য হলো পাকিস্তানের পররাষ্ট্রনীতি বিকৃতভাবে উপস্থাপন করা এবং মুসলিম দেশগুলোর মধ্যে অবিশ্বাস সৃষ্টি করা।
এদিকে, পাকিস্তানের পররাষ্ট্র ও প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের একাধিক সূত্র জানিয়েছে, আন্তর্জাতিক স্থিতিশীলতা বাহিনী (আইএসএফ) গঠনের বিষয়ে ইসলামাবাদের অভ্যন্তরে প্রাথমিক পর্যায়ে কিছু আলোচনা হয়েছে। তবে এই বিষয়ে এখনো কোনো আনুষ্ঠানিক সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি। যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় গৃহীত শান্তি উদ্যোগে মুসলিম দেশগুলোর অংশগ্রহণের নৈতিক ও কূটনৈতিক যুক্তি থাকলেও পাকিস্তানের অবস্থান হবে জাতিসংঘের ম্যান্ডেটের ওপর নির্ভরশীল—এমনটিই জানিয়েছেন একাধিক কর্মকর্তা।
এক জ্যেষ্ঠ সরকারি কর্মকর্তা বলেন, “আদর্শগতভাবে পাকিস্তান জাতিসংঘের অনুমোদিত ম্যান্ডেট ছাড়া কোনো শান্তিরক্ষী মিশনে অংশ নিতে চায় না। গাজার পরিস্থিতি এখনো অস্থিতিশীল এবং এই অঞ্চলে সৈন্য মোতায়েনের আইনি কাঠামোও অনির্দিষ্ট।”
অন্য এক কর্মকর্তা জানান, গাজায় সৈন্য পাঠানোর সম্ভাবনা নিয়ে পাকিস্তানের অভ্যন্তরীণ জনমত একটি বড় চ্যালেঞ্জ হতে পারে। দেশটির বহু নাগরিক ফিলিস্তিনের পক্ষে অবস্থান নেওয়ায়, তারা এমন অংশগ্রহণকে ইসরায়েলি স্বার্থে কাজ করা হিসেবে দেখতে পারেন। ফলে সরকারকে এই বিষয়ে অত্যন্ত সতর্ক অবস্থান নিতে হচ্ছে।
উল্লেখ্য, পাকিস্তান জাতিসংঘের শান্তিরক্ষী মিশনে অন্যতম বড় অবদানকারী দেশ। ১৯৬০-এর দশক থেকে দেশটি বিশ্বের ৪০টিরও বেশি শান্তিরক্ষী মিশনে অংশ নিয়েছে, যেখানে দুই লাখেরও বেশি সেনা সদস্য দায়িত্ব পালন করেছেন। তবে গাজায় সম্ভাব্য মোতায়েনের প্রশ্নে এখনো কোনো আন্তর্জাতিক সংস্থার আনুষ্ঠানিক অনুরোধ বা জাতিসংঘের অনুমোদন পাওয়া যায়নি।
বিশ্লেষকদের মতে, যদি ভবিষ্যতে জাতিসংঘের অধীনে এমন কোনো শান্তিরক্ষী বাহিনী গঠনের প্রস্তাব আসে, পাকিস্তান তখন তার ঐতিহাসিক ভূমিকা ও পররাষ্ট্রনীতির ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত নেবে। আপাতত ইসলামাবাদ স্পষ্ট করে জানিয়ে দিয়েছে, গাজায় সৈন্য পাঠানো কিংবা সিআইএ–মোসাদের সঙ্গে কোনো চুক্তিতে অংশ নেওয়ার বিষয়টি সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন।


