জাতীয় ডেস্ক
চট্টগ্রাম নগরের ডবলমুরিং থানার সরকারি কমার্স কলেজ এলাকায় অভিযান চালিয়ে নুরুল মোস্তফা টিপু (৫০) নামে এক যুবলীগ কর্মীকে অস্ত্র ও গুলিসহ গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। মঙ্গলবার (২৮ অক্টোবর) দিবাগত রাতে পরিচালিত এ অভিযানে তার কাছ থেকে শর্টগান, নাইন এমএম পিস্তলের গুলি এবং বিভিন্ন ধরনের আরও গুলি উদ্ধার করা হয়। পুলিশ জানিয়েছে, টিপুর বিরুদ্ধে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের সময় দায়ের হওয়া একাধিক মামলা রয়েছে এবং তিনি দীর্ঘদিন ধরে আত্মগোপনে ছিলেন।
ডবলমুরিং থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) বাবুল আজাদ জানান, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে রাত সাড়ে ১১টার দিকে কমার্স কলেজ সংলগ্ন একটি ছয়তলা ভবনের ষষ্ঠ তলায় অভিযান চালানো হয়। সেখানে অবস্থানরত টিপুকে গ্রেপ্তার করা হয়। অভিযানকালে তার কাছ থেকে একটি শর্টগান, একটি নাইন এমএম পিস্তলের গুলি এবং অন্যান্য অস্ত্রের গোলাবারুদ উদ্ধার করা হয়। পুলিশের দাবি, এসব অস্ত্র ও গুলির বৈধ কাগজপত্র দেখাতে পারেননি টিপু।
ওসি আরও বলেন, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেপ্তারকৃত টিপু স্বীকার করেছেন যে তিনি রাজনৈতিকভাবে সক্রিয় এবং পূর্বে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের বিভিন্ন কর্মসূচিতে অংশ নিয়েছেন। তবে উদ্ধার করা অস্ত্র সম্পর্কে তিনি অস্পষ্ট তথ্য দিয়েছেন। বিষয়টি তদন্তাধীন রয়েছে।
পুলিশের তথ্য অনুযায়ী, নুরুল মোস্তফা টিপুর নামে চট্টগ্রাম মহানগর পুলিশের বিভিন্ন থানায় সন্ত্রাস, চাঁদাবাজি ও সরকারি কাজে বাধা দেওয়ার অভিযোগে একাধিক মামলা রয়েছে। সাম্প্রতিক সময়ে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের সময় সহিংসতার ঘটনায় দায়ের করা কয়েকটি মামলাতেও তার নাম উঠে এসেছে। পুলিশ ধারণা করছে, আত্মগোপনে থাকাকালীন তিনি দলীয় রাজনীতির আড়ালে সংগঠিত অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে যুক্ত ছিলেন।
ওসি বাবুল আজাদ জানান, “গ্রেপ্তারের পর প্রাথমিকভাবে তাকে ডবলমুরিং থানায় নেওয়া হয়েছে। অস্ত্র আইনে মামলা দায়েরের প্রক্রিয়া চলছে। পাশাপাশি পুরোনো মামলাগুলোর তদন্তও পুনরায় খতিয়ে দেখা হবে।” তিনি আরও জানান, প্রয়োজন হলে টিপুকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আদালতে রিমান্ড আবেদন করা হতে পারে।
এদিকে স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, টিপু দীর্ঘদিন ধরে এলাকায় প্রভাবশালী হিসেবে পরিচিত। স্থানীয় রাজনীতির পাশাপাশি তিনি বাণিজ্যিক কর্মকাণ্ডের সঙ্গেও যুক্ত ছিলেন। বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের সময় সহিংসতা ও ভাঙচুরের অভিযোগ ওঠার পর থেকেই তিনি আত্মগোপনে চলে যান। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নজর এড়াতে তিনি বিভিন্ন স্থানে অবস্থান পরিবর্তন করছিলেন বলে জানিয়েছে পুলিশ।
চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের (সিএমপি) এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, “অভিযানে উদ্ধার করা অস্ত্রগুলোর উৎস ও উদ্দেশ্য সম্পর্কে আমরা তদন্ত করছি। প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, এগুলো রাজনৈতিক সহিংসতা বা চাঁদাবাজির কাজে ব্যবহারের জন্য রাখা হয়েছিল।”
বিশ্লেষকদের মতে, সাম্প্রতিক সময়ে চট্টগ্রাম ও আশপাশের এলাকায় রাজনৈতিক উত্তেজনা বৃদ্ধি পাওয়ায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী বিশেষ নজরদারিতে রয়েছে। বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের সময় সহিংসতা, ভাঙচুর ও সরকারি সম্পত্তি ক্ষতিসাধনের ঘটনায় একাধিক মামলায় স্থানীয় রাজনৈতিক কর্মীদের নাম আসায় পুলিশ এখন নিয়মিত অভিযানে নেমেছে।
অস্ত্র উদ্ধার ও রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতার এই ঘটনা চট্টগ্রামে সক্রিয় সশস্ত্র গোষ্ঠী বা দলীয় প্রভাবশালী মহলের অস্ত্র ব্যবহারের বিষয়ে নতুন করে উদ্বেগ তৈরি করেছে। পুলিশ জানিয়েছে, গ্রেপ্তার টিপুর জিজ্ঞাসাবাদে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে আরও কয়েকজনকে চিহ্নিত করা হয়েছে এবং তাদের গ্রেপ্তারের জন্য অভিযান অব্যাহত রয়েছে।
আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী বলছে, রাজনৈতিক পরিচয় যাই হোক না কেন, অবৈধ অস্ত্র রাখার অভিযোগে কাউকেই ছাড় দেওয়া হবে না। তারা আশাবাদী, এ ঘটনায় উদ্ধারকৃত অস্ত্রের উৎস শনাক্তের মাধ্যমে চট্টগ্রামে অবৈধ অস্ত্রের চক্র সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাওয়া যাবে।
বর্তমানে টিপুকে আদালতে তোলা হয়েছে এবং পুলিশ হেফাজতে রেখে জিজ্ঞাসাবাদের অনুমতি চাওয়া হয়েছে। তদন্তে প্রমাণ মিললে তার বিরুদ্ধে অস্ত্র আইন ও অন্যান্য প্রাসঙ্গিক ধারায় চার্জশিট দাখিল করা হবে বলে জানিয়েছে পুলিশ।


