দিলজিৎ দোসাঞ্জের প্রতি হুমকি: অমিতাভ বচ্চনের পা ছোঁয়ায় ক্ষুব্ধ ‘শিখস ফর জাস্টিস’

দিলজিৎ দোসাঞ্জের প্রতি হুমকি: অমিতাভ বচ্চনের পা ছোঁয়ায় ক্ষুব্ধ ‘শিখস ফর জাস্টিস’

বিনোদন ডেস্ক

ভারতের জনপ্রিয় সংগীতশিল্পী ও অভিনেতা দিলজিৎ দোসাঞ্জ সম্প্রতি বলিউডের প্রবীণ অভিনেতা অমিতাভ বচ্চনের পা ছুঁয়ে প্রণাম করায় শিখ বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠন ‘শিখস ফর জাস্টিস’ (এসএফজে)-এর হুমকির মুখে পড়েছেন। সংগঠনটি অভিযোগ করেছে, দিলজিতের এই আচরণ শিখ সম্প্রদায়ের ভাবমূর্তি ও ইতিহাসের প্রতি অসম্মান প্রদর্শন করেছে।

সম্প্রতি ‘কৌন বনেগা ক্রোড়পতি’ (কেবিসি) অনুষ্ঠানের একটি বিশেষ পর্বে অতিথি হিসেবে অংশ নেন দিলজিৎ দোসাঞ্জ। অনুষ্ঠানটির সম্প্রচার নির্ধারিত হয়েছে ৩১ অক্টোবর। সম্প্রচারের আগে প্রকাশিত এক ঝলকে দেখা যায়, সেটে প্রবেশ করে অমিতাভ বচ্চনের পা ছুঁয়ে শ্রদ্ধা জানাচ্ছেন দিলজিৎ। এই দৃশ্যটি দ্রুত সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়।

ভিডিওটি প্রকাশের পরই এসএফজে তীব্র প্রতিক্রিয়া জানায়। সংগঠনটির পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে, অমিতাভ বচ্চন ১৯৮৪ সালের শিখ-বিরোধী দাঙ্গার সময় কংগ্রেস সরকারের ঘনিষ্ঠ ছিলেন এবং সে সময় তাঁর বিরুদ্ধে শিখ সম্প্রদায়ের প্রতি বিদ্বেষমূলক মন্তব্যের অভিযোগ ওঠে। সংগঠনটির মতে, দিলজিতের মতো একজন শিখ শিল্পীর তার প্রতি প্রণাম করা শিখ শহিদদের প্রতি ‘চরম অসম্মান’ প্রদর্শন।

এসএফজে তাদের এক বিবৃতিতে আরও জানায়, এই ঘটনার প্রতিবাদে তারা দিলজিতের আগামী ১ নভেম্বর অস্ট্রেলিয়ায় নির্ধারিত কনসার্ট বন্ধ করার ঘোষণা দিয়েছে। সংগঠনটির হুঁশিয়ারিতে বলা হয়, দিলজিৎ যদি প্রকাশ্যে ক্ষমা না চান, তবে তার কনসার্ট ‘যেকোনো উপায়ে’ বন্ধ করে দেওয়া হবে।

এ বিষয়ে দিলজিতের পক্ষ থেকে এখনো কোনো আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি। তবে ভারতীয় গণমাধ্যম সূত্রে জানা যায়, দিলজিৎ ও তাঁর ব্যবস্থাপনা দল নিরাপত্তা বিষয়ে স্থানীয় কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছেন।

১৯৮৪ সালের অক্টোবর মাসে ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী শিখ দেহরক্ষীদের গুলিতে নিহত হওয়ার পর দেশজুড়ে ব্যাপক শিখ-বিরোধী দাঙ্গা ছড়িয়ে পড়ে। সরকারি হিসাব অনুযায়ী, সে সময় প্রায় তিন হাজার মানুষ নিহত হন, যাদের অধিকাংশই ছিলেন শিখ সম্প্রদায়ের। অমিতাভ বচ্চনের নাম সে সময় কিছু বিতর্কে জড়ালেও তাঁর বিরুদ্ধে কোনো আনুষ্ঠানিক অভিযোগ প্রমাণিত হয়নি।

বিশ্লেষকদের মতে, এসএফজে দীর্ঘদিন ধরে ভারতীয় শিখদের স্বাধীন ‘খালিস্তান’ রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত। সংগঠনটি ভারত সরকার কর্তৃক নিষিদ্ধ, তবে বিদেশে এর কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে। তারা প্রায়ই শিখ ঐতিহ্য বা ইতিহাসসংক্রান্ত ইস্যুতে ভারতীয় শিল্পী ও জননেতাদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানিয়ে থাকে।

দিলজিৎ দোসাঞ্জ, যিনি সংগীত ও চলচ্চিত্র—উভয় ক্ষেত্রেই সমান জনপ্রিয়, সাধারণত রাজনীতি থেকে নিজেকে দূরে রাখেন। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে তিনি পাঞ্জাবি সংগীতের পাশাপাশি বলিউডের বিভিন্ন সিনেমায় অভিনয় করে প্রশংসা কুড়িয়েছেন। তবে এ ধরনের বিতর্ক তাঁর ক্যারিয়ারে নতুন চ্যালেঞ্জ তৈরি করতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

অস্ট্রেলিয়ায় তাঁর নির্ধারিত কনসার্টকে কেন্দ্র করে স্থানীয় প্রশাসন নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করার বিষয়টি বিবেচনা করছে বলে সূত্র জানায়। যদি এসএফজে তাদের হুমকি বাস্তবায়নের চেষ্টা করে, তা হলে অনুষ্ঠান আয়োজক ও দর্শকদের নিরাপত্তা প্রশ্নে বিশেষ সতর্কতা নিতে হতে পারে।

এই ঘটনার পর শিখ সম্প্রদায়ের ভেতরে মতভেদও লক্ষ্য করা যাচ্ছে। অনেকে মনে করছেন, দিলজিতের কর্মকাণ্ড কেবল শ্রদ্ধা প্রকাশের একটি সাংস্কৃতিক অঙ্গভঙ্গি, যার সঙ্গে ধর্মীয় বা রাজনৈতিক কোনো তাৎপর্য নেই। অন্যদিকে, কিছু অংশের মতে, অমিতাভ বচ্চনের বিতর্কিত অতীতের প্রেক্ষিতে এমন আচরণ শিখদের অনুভূতিতে আঘাত করতে পারে।

ভারতের বিনোদন অঙ্গনের পর্যবেক্ষকদের মতে, বিষয়টি এখন সামাজিক ও রাজনৈতিক বিতর্কের কেন্দ্রে পরিণত হয়েছে। কেবিসি’র পর্বটি সম্প্রচারের পর দিলজিতের প্রতিক্রিয়া ও এসএফজে’র পরবর্তী পদক্ষেপ—দুটিই পরিস্থিতির গতিপথ নির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।

বিনোদন