বিএনপির হতাশা: ঐকমত্য কমিশন ও অন্তর্বর্তী সরকারের পদক্ষেপে অসন্তোষ প্রকাশ

বিএনপির হতাশা: ঐকমত্য কমিশন ও অন্তর্বর্তী সরকারের পদক্ষেপে অসন্তোষ প্রকাশ

রাজনীতি ডেস্ক

জাতীয় ঐকমত্য কমিশন এবং অন্তর্বর্তী সরকারের সাম্প্রতিক কর্মকাণ্ডে হতাশা প্রকাশ করেছেন বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ। তিনি জানিয়েছেন, কমিশন ও সরকারের উদ্যোগ বিএনপির প্রত্যাশার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয় এবং এ পদক্ষেপগুলোতে দলটির আস্থার সংকট সৃষ্টি হয়েছে।

বুধবার (২৯ অক্টোবর) রাজধানীর গুলশানের হোটেল লেকশোরে আয়োজিত এক সেমিনারে বক্তৃতাকালে সালাহউদ্দিন আহমদ এ মন্তব্য করেন।

তিনি বলেন, গত ১৭ অক্টোবর যে দলিল স্বাক্ষরিত হয়েছে, সেটি জুলাই সনদ বাস্তবায়নের প্রস্তাবনা ও সুপারিশের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। তার ভাষায়, “বলা হলো ৪৮টি দফার ওপর গণভোট করা হবে, কিন্তু আমাদের সঙ্গে কোনো আলোচনা হয়নি। এতদিন ধরে যে আলোচনা ও প্রস্তুতি চলেছে, তার উদ্দেশ্য এখন প্রশ্নবিদ্ধ।”

সালাহউদ্দিন আহমদ অভিযোগ করেন, ঐকমত্য কমিশনের যে উদ্দেশ্যে গঠন, অর্থাৎ জাতীয় ঐক্য প্রতিষ্ঠা—বর্তমান প্রস্তাবগুলিতে তা প্রতিফলিত হয়নি। বরং এসব প্রস্তাব জাতির মধ্যে বিভক্তি ও অনৈক্য সৃষ্টি করতে পারে বলে তিনি আশঙ্কা প্রকাশ করেন। তিনি আরও বলেন, “কমিশনের মূল দায়িত্ব ছিল ঐকমত্য সৃষ্টি করা। কিন্তু যে প্রস্তাবগুলো এসেছে, তাতে বিভাজনের আশঙ্কা বাড়ছে। আমরা জানি না তাদের আসল উদ্দেশ্য কী বা তারা কী অর্জন করতে চায়।”

বিএনপির এই নেতা বলেন, জুলাই সনদ, যা রাজনৈতিক সমঝোতার একটি প্রাথমিক দলিল হিসেবে স্বাক্ষরিত হয়েছিল, সেটির ধারাবাহিকতা এখন আর দেখা যাচ্ছে না। তার পরিবর্তে কমিশন ও কয়েকটি রাজনৈতিক দলের প্রস্তাবকে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে, যা বিএনপির মতে, পূর্ববর্তী প্রতিশ্রুতির সঙ্গে সাংঘর্ষিক।

নির্বাচনসংক্রান্ত আইন ও নিয়মাবলির (আরপিও) সাম্প্রতিক পরিবর্তনের সমালোচনা করে সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, “জোটবদ্ধ রাজনৈতিক দলগুলো যাতে নিজেদের প্রতীকে বা জোটের প্রতীকে নির্বাচন করতে পারে, তা আমরা বরাবরই সমর্থন করেছি। কিন্তু হঠাৎ বলা হলো, জোটবদ্ধ দলগুলোকে নিজেদের প্রতীকে নির্বাচন করতে হবে। আমরা দেখলাম, আরেকটি রাজনৈতিক দল এই প্রস্তাবের পক্ষে অবস্থান নিয়েছে। এটি গণতান্ত্রিক প্রতিযোগিতার স্বচ্ছতা ও ঐক্যের পথে বাধা সৃষ্টি করবে।”

তিনি বলেন, বিএনপি আশা করে, বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার তত্ত্বাবধায়ক সরকারের ভূমিকা পালন করবে এবং নির্বাচন প্রক্রিয়ায় নিরপেক্ষ অবস্থান বজায় রাখবে। তবে সাম্প্রতিক পদক্ষেপগুলো সেই নিরপেক্ষতার বিষয়ে প্রশ্ন তুলছে বলে বিএনপি মনে করে।

সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, “আমরা চাই, সরকারের কর্মকাণ্ড এবং ঐকমত্য কমিশনের উদ্যোগ জাতীয় ঐক্যকে সুদৃঢ় করুক, বিভাজন নয়। কিন্তু এখন পর্যন্ত যেসব পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে, তাতে হতাশা সৃষ্টি হয়েছে।”

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, ঐকমত্য কমিশনের ভূমিকা এবং গণভোটের প্রস্তাব রাজনৈতিক প্রক্রিয়ায় নতুন বিতর্কের জন্ম দিতে পারে। কমিশনের গঠন, প্রস্তাব এবং বাস্তবায়ন নিয়ে প্রধান রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে আস্থার ঘাটতি বেড়েছে, যা আসন্ন নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় প্রভাব ফেলতে পারে।

তবে রাজনৈতিক মহলের একটি অংশ মনে করে, কমিশন ও অন্তর্বর্তী সরকারের এসব পদক্ষেপ দীর্ঘদিনের রাজনৈতিক অচলাবস্থা নিরসনে সহায়ক হতে পারে, যদি সব দল অংশগ্রহণমূলকভাবে আলোচনায় যুক্ত হয়।

বিএনপির পক্ষ থেকে এখন পর্যন্ত সরকার বা কমিশনের সঙ্গে নতুন কোনো বৈঠকের ঘোষণা আসেনি। দলটির নেতারা বলছেন, তারা সংলাপের দরজা খোলা রাখতে চায়, তবে বাস্তব পদক্ষেপের মাধ্যমে আস্থা অর্জন না হলে কোনো কার্যকর ঐকমত্য প্রতিষ্ঠা সম্ভব নয়।

সাম্প্রতিক এই অবস্থান রাজনৈতিক পরিসরে নতুন আলোচনার জন্ম দিয়েছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যদি ঐকমত্য কমিশন তার মূল উদ্দেশ্য—সর্বদলীয় সমঝোতা ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের পরিবেশ সৃষ্টি—বাস্তবায়ন করতে না পারে, তবে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা অর্জন আরও কঠিন হয়ে উঠতে পারে।

রাজনীতি