খেলাধুলা ডেস্ক
বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগের (বিপিএল) দ্বাদশ আসরকে সামনে রেখে সম্ভাব্য স্বার্থের সংঘাত (কনফ্লিক্ট অব ইন্টারেস্ট) রোধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণের ঘোষণা দিয়েছে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি)। অতীতে বোর্ড পরিচালকদের একাংশ ফ্র্যাঞ্চাইজি দল পরিচালনার সঙ্গে যুক্ত থাকায় নানা বিতর্ক তৈরি হয়েছিল। এবার সেই অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষা নিয়ে বিসিবি স্পষ্ট জানিয়েছে—যে কোনো ধরনের দ্বৈত ভূমিকা সম্পূর্ণরূপে নিষিদ্ধ করা হবে।
আসন্ন দ্বাদশ বিপিএলে অংশগ্রহণের জন্য বরিশাল ফ্র্যাঞ্চাইজির মালিকানা কিনতে আবেদন করেছে আকাশবাড়ি হলিডে, রাজশাহীর জন্য নাবিল গ্রুপ, এবং নোয়াখালীর জন্য বাংলা মার্ক। তিনটি প্রতিষ্ঠানেই বিসিবির তিনজন পরিচালক বিভিন্নভাবে যুক্ত আছেন বলে জানা গেছে।
এ প্রসঙ্গে বিসিবির সহসভাপতি শাখাওয়াত হোসেন সাংবাদিকদের জানান, “আমরা এবার কোনো ধরনের স্বার্থের সংঘাতের সুযোগ রাখব না। পরিচালকদের কাছ থেকে একটি ‘সেলফ-ডিক্লারেশন’ নেওয়া হবে—তারা সরাসরি বা পরোক্ষভাবে কোনো ফ্র্যাঞ্চাইজির সঙ্গে যুক্ত কি না, তা লিখিতভাবে জানাতে হবে। যদি দেখা যায় কোনো পরিচালক কোনো দলের সঙ্গে যুক্ত, তাহলে তাকে বিপিএলের গভর্নিং কাউন্সিল থেকে পদত্যাগ করতে হবে।”
বিসিবি কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, বিপিএলের গভর্নিং কাউন্সিলের সদস্যদের কাছ থেকে ইনডেমনিটি বন্ড ও স্বঘোষণা (সেলফ-ডিক্লারেশন) নেওয়া হবে। এই প্রক্রিয়ার মাধ্যমে বোর্ড নিশ্চিত হবে যে কেউ বোর্ডের নীতিনির্ধারণী পদে থেকে ব্যক্তিগত বা বাণিজ্যিক স্বার্থে জড়িত নন।
শাখাওয়াত হোসেন বলেন, “প্রত্যেক পরিচালককে লিখিতভাবে ঘোষণা দিতে হবে—তারা কোনোভাবে কোনো দলের সঙ্গে সম্পৃক্ত কি না। বোর্ডের অভ্যন্তরে স্বচ্ছতা ও নৈতিক মানদণ্ড বজায় রাখার জন্য এটি বাধ্যতামূলক করা হচ্ছে।”
বিপিএল গভর্নিং কাউন্সিলের সদস্য সচিব ইফতেখার রহমান মিঠু আশা প্রকাশ করেছেন যে এবারের আসরে কোনো স্বার্থের সংঘাত থাকবে না। তিনি বলেন, “আমরা স্বচ্ছতার নীতিতে কাজ করতে চাই। যেমন আইপিএলেও দেখা গেছে, একসময় বোর্ড কর্মকর্তারা দল পরিচালনার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন, কিন্তু পরবর্তীতে সেই নিয়ম পরিবর্তন করা হয়। আমরা চাই, বিপিএলেও সেই মান বজায় থাকুক।”
তিনি আরও জানান, “গভর্নিং কাউন্সিলের কোনো সদস্য যদি কোনো দলের সঙ্গে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে যুক্ত থাকেন, তাহলে তাকে সংশ্লিষ্ট সভায় ডাকা হবে না। আমরা চাই, প্রত্যেকে পেশাদার নীতিমালা মেনে দায়িত্ব পালন করুন।”
বিপিএল শুরু হওয়ার পর থেকেই স্বার্থের সংঘাতের অভিযোগ ক্রিকেট বোর্ডের জন্য বিব্রতকর পরিস্থিতি তৈরি করেছিল। ২০১৯ এবং ২০২২ সালের আসরেও একাধিক পরিচালক ফ্র্যাঞ্চাইজির সঙ্গে যুক্ত থাকার অভিযোগ উঠেছিল। সেই অভিজ্ঞতা থেকেই এবার বিসিবি প্রশাসনিক কাঠামোতে স্পষ্ট নীতি নির্ধারণ করছে।
ক্রিকেট প্রশাসন বিশ্লেষকদের মতে, এই পদক্ষেপটি দীর্ঘমেয়াদে টুর্নামেন্টের বিশ্বাসযোগ্যতা ও আন্তর্জাতিক গ্রহণযোগ্যতা বৃদ্ধিতে সহায়ক হবে। স্বচ্ছতা বজায় থাকলে বিপিএল আরও বিনিয়োগবান্ধব হয়ে উঠবে এবং বিদেশি ফ্র্যাঞ্চাইজিগুলোর আগ্রহও বাড়বে।
বিসিবি সূত্রে জানা গেছে, পরিচালকদের সেলফ-ডিক্লারেশন সংগ্রহ সম্পন্ন হলে তা যাচাই করে গভর্নিং কাউন্সিলের চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশ করা হবে। একই সঙ্গে প্রতিটি ফ্র্যাঞ্চাইজির মালিকানা যাচাইয়ের জন্য পৃথক তদন্ত কমিটিও গঠন করা হতে পারে।
দ্বাদশ বিপিএল আগামী জানুয়ারি ২০২৬-এ শুরু হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এর আগে ফ্র্যাঞ্চাইজি চুক্তি, খেলোয়াড় ড্রাফট এবং সম্প্রচার অধিকারসহ একাধিক প্রশাসনিক সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। বিসিবি জানিয়েছে, এই সব প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা নিশ্চিত করাই এবারের প্রধান অগ্রাধিকার।


