আবহাওয়া ডেস্ক
পশ্চিম-মধ্য বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন এলাকায় সৃষ্ট প্রবল ঘূর্ণিঝড় ‘মোন্থা’ উত্তর-উত্তরপশ্চিম দিকে অগ্রসর হয়ে মঙ্গলবার মধ্যরাতে ভারতের অন্ধ্রপ্রদেশ উপকূল অতিক্রম করেছে। বর্তমানে এটি অন্ধ্রপ্রদেশ ও সংলগ্ন স্থলভাগে অবস্থান করছে এবং ধীরে ধীরে উত্তর-উত্তরপশ্চিম দিকে অগ্রসর হয়ে ক্রমান্বয়ে দুর্বল হয়ে পড়ছে বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তর।
অধিদপ্তরের জারি করা ১২ নম্বর বিশেষ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, ঘূর্ণিঝড়টি স্থলভাগে প্রবেশের পর শক্তি হারাতে শুরু করেছে এবং পরবর্তী সময়ে এটি গভীর নিম্নচাপে পরিণত হতে পারে। বিজ্ঞপ্তিতে আরও জানানো হয়, ঘূর্ণিঝড় ‘মোন্থা’ সংক্রান্ত আর কোনো বিশেষ বিজ্ঞপ্তি জারি করা হবে না।
বাংলাদেশের সমুদ্রবন্দরগুলোতে সংকেত নামানোর নির্দেশ
আবহাওয়া অধিদপ্তর চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, মোংলা ও পায়রা সমুদ্রবন্দরগুলোকে পূর্বে জারি করা সতর্ক সংকেত নামিয়ে ফেলতে নির্দেশ দিয়েছে। বর্তমান অবস্থায় বাংলাদেশের উপকূলে সরাসরি কোনো ঘূর্ণিঝড়জনিত প্রভাব নেই বলে জানিয়েছে সংস্থাটি।
তবে আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছে, ঘূর্ণিঝড়টির প্রভাবে বঙ্গোপসাগরের উত্তরাংশে সাগর কিছুটা উত্তাল থাকতে পারে। সেই কারণে উত্তর বঙ্গোপসাগরে অবস্থানরত সব মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারকে বুধবার বিকেল পর্যন্ত সাবধানে চলাচল করতে এবং গভীর সাগরে না যেতে বলা হয়েছে।
ঘূর্ণিঝড়ের অগ্রগতির সারসংক্ষেপ
‘মোন্থা’ কয়েকদিন ধরে পশ্চিম-মধ্য বঙ্গোপসাগরে অবস্থান করছিল। প্রথমে এটি একটি নিম্নচাপ হিসেবে সৃষ্টি হয়, পরে তা গভীর নিম্নচাপে এবং শেষ পর্যন্ত প্রবল ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নেয়। ভারতীয় উপকূলের দিকে অগ্রসর হওয়ার সময় সিস্টেমটি আরও শক্তিশালী হয়ে ঘণ্টায় ৯০ থেকে ১০০ কিলোমিটার বেগে বাতাস বইতে থাকে।
অন্ধ্রপ্রদেশের বিশাখাপত্তনম ও তার আশপাশের এলাকায় মঙ্গলবার রাত থেকে প্রবল বাতাস ও বৃষ্টি শুরু হয়। স্থানীয় প্রশাসন উপকূলীয় বাসিন্দাদের সতর্ক অবস্থায় থাকতে নির্দেশ দিয়েছিল এবং বেশ কয়েকটি স্থানে অস্থায়ী আশ্রয়কেন্দ্রও খোলা হয়।
বাংলাদেশে সম্ভাব্য প্রভাব
যদিও ‘মোন্থা’ বাংলাদেশের উপকূলে সরাসরি আঘাত হানেনি, তবে এর প্রভাবে দক্ষিণাঞ্চলীয় কিছু জেলায় হালকা থেকে মাঝারি বৃষ্টিপাত হতে পারে। বিশেষ করে খুলনা, বরিশাল ও চট্টগ্রাম বিভাগের কিছু এলাকায় আগামী ২৪ ঘণ্টায় মেঘলা আকাশ ও মাঝে মাঝে বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে।
আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছে, বঙ্গোপসাগরের ওপর দিয়ে প্রবাহিত বাতাস এখনো সক্রিয় থাকায় উপকূলীয় জলবায়ু কিছুটা পরিবর্তনশীল থাকতে পারে। তবে ঝড়ের আশঙ্কা বা জলোচ্ছ্বাসের কোনো সম্ভাবনা বর্তমানে নেই।
আবহাওয়ার সার্বিক পরিস্থিতি
দেশের অভ্যন্তরীণ নদীবন্দরগুলোতে ঝড়ো হাওয়ার কোনো নির্দেশনা জারি করা হয়নি। সারাদেশে তাপমাত্রা সামান্য কমতে পারে এবং আকাশ আংশিক মেঘলা থাকবে বলে পূর্বাভাসে উল্লেখ করা হয়েছে।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের কর্মকর্তা সূত্রে জানা গেছে, ‘মোন্থা’ দুর্বল হয়ে যাওয়ার পর এটি পশ্চিমবঙ্গ ও ওড়িশার দিকে অগ্রসর হয়ে আরও স্থলভাগে প্রবেশ করবে এবং ধীরে ধীরে বিলীন হয়ে যাবে। ফলে বাংলাদেশে এর প্রভাব সীমিত থাকবে এবং আগামী কয়েকদিনের মধ্যে আবহাওয়া পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে আসবে।
বাংলাদেশের উপকূলে অবস্থানরত জেলেদের সর্বশেষ নির্দেশনা অনুসারে আজ বিকেল পর্যন্ত সতর্ক থেকে সাগরে চলাচলের পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। পরবর্তী ২৪ ঘণ্টায় পরিস্থিতি স্থিতিশীল হলে এই নির্দেশনা প্রত্যাহার করা হতে পারে।
নতুন এই বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে আবহাওয়া অধিদপ্তর ঘূর্ণিঝড় ‘মোন্থা’-এর সক্রিয় পর্যায়কে সমাপ্ত ঘোষণা করেছে। সংস্থাটি জানিয়েছে, বর্তমানে সাগরের পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণে রয়েছে এবং প্রয়োজন হলে নিয়মিত আবহাওয়া বুলেটিনের মাধ্যমে আপডেট দেওয়া হবে।


