মালয়েশিয়ায় কর্মী পাঠাতে বাংলাদেশি এজেন্সির জন্য নতুন মানদণ্ড ঘোষণা

মালয়েশিয়ায় কর্মী পাঠাতে বাংলাদেশি এজেন্সির জন্য নতুন মানদণ্ড ঘোষণা

মালয়েশিয়ায় কর্মী প্রেরণের ক্ষেত্রে বাংলাদেশের বেসরকারি রিক্রুটিং এজেন্সিগুলোর জন্য নতুন সুযোগ উন্মুক্ত হয়েছে। দেশটির সরকার আনুষ্ঠানিকভাবে ‘রিক্রুটিং এজেন্ট সিলেকশন ক্রাইটেরিয়া’ বা নির্বাচন মানদণ্ড প্রকাশ করেছে, যার মাধ্যমে বাংলাদেশসহ দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার অন্যান্য দেশের এজেন্সিগুলো সমান সুযোগ পাবে।

সরকারি এক তথ্যবিবরণীতে জানানো হয়েছে, আগে মালয়েশিয়ায় কর্মী পাঠানোর ক্ষেত্রে বাংলাদেশের তুলনায় অন্যান্য দেশের রিক্রুটিং এজেন্সিগুলো বেশি সুবিধা পেত। তবে সাম্প্রতিক আলোচনার পর দুই দেশের মধ্যে সমঝোতা গঠিত হয়েছে, যার ফলে বাংলাদেশের বৈধ লাইসেন্সধারী সব রিক্রুটিং এজেন্সি নতুন মানদণ্ড অনুসরণ করে আবেদন করতে পারবে।

গত ২১ ও ২২ মে ঢাকায় অনুষ্ঠিত বাংলাদেশ-মালয়েশিয়া তৃতীয় যৌথ কর্মপরিষদ (জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রুপ) বৈঠকে এ বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়। বৈঠকে বাংলাদেশ পক্ষ থেকে মালয়েশিয়ার প্রতি অনুরোধ জানানো হয়— কর্মী প্রেরণকারী অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশকেও সমান সুযোগ দিতে। মালয়েশিয়ার প্রতিনিধিদল তখন প্রতিশ্রুতি দেয়, বেসরকারি রিক্রুটিং এজেন্ট নির্বাচনের জন্য একটি নির্দিষ্ট মানদণ্ড নির্ধারণ করে তা বাংলাদেশ সরকারকে আনুষ্ঠানিকভাবে জানানো হবে।

এই প্রতিশ্রুতির ধারাবাহিকতায় গত ২৮ অক্টোবর মালয়েশিয়া সরকার বাংলাদেশের কাছে ‘রিক্রুটিং এজেন্ট সিলেকশন ক্রাইটেরিয়া’ সংবলিত চিঠি পাঠায়।

নতুন মানদণ্ডের প্রধান শর্তাবলি

তথ্যবিবরণী অনুসারে, নতুন নির্বাচনী মানদণ্ডে রিক্রুটিং এজেন্সিগুলোর জন্য ১০টি শর্ত নির্ধারণ করা হয়েছে। এগুলোর মধ্যে রয়েছে:

১. এজেন্সির ন্যূনতম ৫ বছর সন্তোষজনক কার্যক্রম পরিচালনার অভিজ্ঞতা থাকতে হবে।
২. গত ৫ বছরে বিদেশে অন্তত ৩ হাজার কর্মী পাঠানোর প্রমাণ থাকতে হবে।
৩. বিগত ৫ বছরের মধ্যে কমপক্ষে ৩টি ভিন্ন গন্তব্য দেশে কর্মী প্রেরণের অভিজ্ঞতা থাকতে হবে।
৪. প্রশিক্ষণ, মূল্যায়ন, নিয়োগ ও কর্মসংস্থানের বিষয়ে বৈধ সরকারি লাইসেন্স থাকতে হবে।
৫. কর্মী প্রেরণকারী দেশের যথাযথ কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে সদাচরণের সনদ থাকতে হবে।
৬. মানব পাচার, শ্রম আইন লঙ্ঘন, অর্থপাচার বা জোরপূর্বক শ্রমে নিয়োগের অভিযোগ থাকা যাবে না।
৭. এজেন্সির নিজস্ব প্রশিক্ষণ ও মূল্যায়ন কেন্দ্র থাকতে হবে, যেখানে আবাসন ও কারিগরি প্রশিক্ষণ সুবিধা থাকবে।
৮. অন্তত ৫ জন আন্তর্জাতিক নিয়োগকর্তার কাছ থেকে সন্তোষজনক সেবা প্রদানের প্রশংসাপত্র থাকতে হবে।
৯. ন্যূনতম ১০ হাজার বর্গফুট আয়তনের একটি স্থায়ী অফিস থাকতে হবে, যেখানে নিয়োগ কার্যক্রম পরিচালনা সম্ভব।
১০. পূর্ববর্তী নিয়োগ কার্যক্রমে গন্তব্য দেশের আইন ও নীতিমালা যথাযথভাবে অনুসরণ করার প্রমাণ থাকতে হবে

মালয়েশিয়া সরকার জানিয়েছে, ভবিষ্যতে বাংলাদেশ, ভারত, নেপাল, পাকিস্তান ও মিয়ানমারসহ সব কর্মী সরবরাহকারী দেশের রিক্রুটিং এজেন্সিকে অভিন্নভাবে এই মানদণ্ডের ভিত্তিতে নির্বাচিত করা হবে। এতে দীর্ঘদিনের বৈষম্য দূর হবে বলে আশা করা হচ্ছে।

বাংলাদেশ সরকার জানিয়েছে, এসব শর্ত পূরণে সক্ষম রিক্রুটিং এজেন্সিগুলোর তালিকা মালয়েশিয়া সরকারের কাছে পাঠানো হবে। এতে কোনো ধরনের ব্যত্যয় ঘটানো হবে না।

প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় নতুন নীতির আওতায় আগ্রহী রিক্রুটিং এজেন্সিগুলোকে আগামী ৭ নভেম্বরের মধ্যে প্রয়োজনীয় কাগজপত্রসহ আবেদন জমা দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে।

মন্ত্রণালয় বলছে, নির্ধারিত মানদণ্ড অনুসারে যাচাই শেষে যোগ্য এজেন্সিগুলোর নাম মালয়েশিয়া কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠানো হবে। এর মাধ্যমে বাংলাদেশি কর্মীদের জন্য বৈধ ও স্বচ্ছ পদ্ধতিতে বিদেশে কর্মসংস্থানের নতুন দ্বার খুলবে বলে আশা করা হচ্ছে।

বিশ্লেষকদের মতে, এই সিদ্ধান্ত বাংলাদেশের রিক্রুটিং খাতে স্বচ্ছতা ও প্রতিযোগিতার পরিবেশ তৈরি করবে। পাশাপাশি মালয়েশিয়ার শ্রমবাজারে বাংলাদেশি কর্মীদের জন্য নতুন সুযোগ সৃষ্টি হবে।

এছাড়া বৈধ লাইসেন্সধারী রিক্রুটিং এজেন্সিগুলোর মধ্যে অভিজ্ঞতা, অবকাঠামো ও সেবার মান উন্নয়নে ইতিবাচক প্রতিযোগিতা শুরু হবে বলে আশা করা হচ্ছে। সরকারের পক্ষ থেকেও নিয়োগ প্রক্রিয়ায় অনিয়ম প্রতিরোধে কঠোর তদারকির আশ্বাস দেওয়া হয়েছে।

এই নতুন নীতিমালা কার্যকর হলে বাংলাদেশের রিক্রুটিং এজেন্সিগুলো মালয়েশিয়াসহ দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার অন্যান্য শ্রমবাজারে আরও শক্তিশালী অবস্থান তৈরি করতে পারবে বলে সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন।

অর্থ বাণিজ্য