জাতীয় ডেস্ক
রাজধানীর ফার্মগেটে মেট্রোরেলের বিয়ারিং প্যাড খুলে পড়ে এক ব্যক্তির মৃত্যুর ঘটনায় নিহতের পরিবারকে দুই কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ কেন দেওয়া হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেছেন হাইকোর্ট। একই সঙ্গে মেট্রোরেলে সার্বিক নিরাপত্তা ও দুর্ঘটনার কারণ অনুসন্ধানে একটি বিশেষজ্ঞ কমিটি গঠনের নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। কমিটিকে আগামী ৩০ দিনের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করতে বলা হয়েছে।
বুধবার (২৯ অক্টোবর) বিচারপতি ফাহমিদা কাদের ও বিচারপতি আসিফ হাসান সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেন। আদালতে রিটের পক্ষে শুনানি করেন ব্যারিস্টার আবদুল্লাহ আল মামুন এবং অ্যাডভোকেট তানভীর আহমেদ।
আদালত রুলে জানতে চেয়েছেন, মেট্রোরেলের বিয়ারিং প্যাডের মান ও রক্ষণাবেক্ষণে অবহেলার কারণে প্রাণহানি ঘটলে কেন দায়ীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে না। একই সঙ্গে মেট্রোরেল কর্তৃপক্ষ, ঢাকা মাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেড (ডিএমটিসিএল), সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয় এবং রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক)–কে আগামী চার সপ্তাহের মধ্যে রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে।
আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী, গঠিত বিশেষজ্ঞ কমিটিতে সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর, বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট), রাজউক ও মেট্রোরেল প্রকল্পের সংশ্লিষ্ট প্রকৌশল বিশেষজ্ঞদের অন্তর্ভুক্ত করা হবে। কমিটি মেট্রোরেল ও অন্যান্য উড়ালসড়কের বিয়ারিং প্যাডের গুণগত মান, রক্ষণাবেক্ষণ ব্যবস্থা এবং দুর্ঘটনার ঝুঁকি মূল্যায়ন করবে।
হাইকোর্ট আদেশে বলেছেন, “জনসাধারণের চলাচলের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা রাষ্ট্রের দায়িত্ব। যেসব প্রকল্পে জনজীবনের ঝুঁকি তৈরি হতে পারে, সেসব ক্ষেত্রে প্রকৌশল ও নিরাপত্তা মান যাচাই অত্যাবশ্যক।”
এর আগে, মেট্রোরেল ও দেশের সব ফ্লাইওভারে ব্যবহৃত বিয়ারিং প্যাডের মান নির্ণয়ে একটি বিশেষ কমিটি গঠনের নির্দেশনা চেয়ে হাইকোর্টে দুটি পৃথক রিট দায়ের করা হয়। এর একটি ছিল গুণগত মান যাচাই সংক্রান্ত রিট, আরেকটি ছিল ক্ষতিপূরণের আবেদন–যেখানে নিহতের পরিবারের জন্য দুই কোটি টাকা দাবি করা হয়।
রিটে বলা হয়, দুর্ঘটনাটি মেট্রোরেল নির্মাণ ও রক্ষণাবেক্ষণ সংক্রান্ত নিরাপত্তা ঘাটতির ফল। আদালতের হস্তক্ষেপ না হলে ভবিষ্যতে এমন ঘটনা আরও ঘটতে পারে।
গত ২৬ অক্টোবর দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে রাজধানীর ফার্মগেট এলাকায় মেট্রোরেলের একটি অংশ থেকে বিয়ারিং প্যাড খুলে পড়ে রাস্তায় চলাচলরত আবুল কালাম নামের এক যুবকের ওপর আঘাত লাগে। তিনি ঘটনাস্থলেই মারা যান। নিহত আবুল কালাম শরীয়তপুর জেলার নড়িয়া উপজেলার ঈশরপাটি গ্রামের বাসিন্দা ছিলেন।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, দুর্ঘটনার সময় এলাকায় প্রচণ্ড শব্দ শোনা যায় এবং আশপাশের মানুষ আতঙ্কিত হয়ে পড়ে। ঘটনাস্থলে পুলিশ, ফায়ার সার্ভিস ও মেট্রোরেল কর্তৃপক্ষের কর্মকর্তারা পৌঁছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন।
ঘটনার পর মেট্রোরেল কর্তৃপক্ষ তাৎক্ষণিকভাবে একটি অভ্যন্তরীণ তদন্ত কমিটি গঠন করে। প্রাথমিক প্রতিবেদনে জানা যায়, বিয়ারিং প্যাডের একটি অংশ সম্ভবত যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে খুলে যায়। এ ঘটনায় সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের ভূমিকা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
তবে হাইকোর্টের নির্দেশনা অনুসারে এখন একটি স্বতন্ত্র বিশেষজ্ঞ কমিটি গঠিত হবে, যা পূর্ববর্তী তদন্তের তথ্য যাচাই করবে এবং ভবিষ্যৎ ঝুঁকি প্রতিরোধে সুপারিশ দেবে।
আইন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আদালতের এই রুল এবং কমিটি গঠনের নির্দেশ ভবিষ্যতে বড় অবকাঠামোগত প্রকল্পগুলোর নিরাপত্তা মান ও দায়বদ্ধতা নিশ্চিত করার দৃষ্টান্ত তৈরি করবে। বিশেষ করে নগরায়ণের দ্রুততার কারণে জননিরাপত্তা ঝুঁকি বাড়ছে, সেখানে এই ধরনের রিট ও বিচারিক তদারকি নাগরিক সুরক্ষায় ইতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।
হাইকোর্ট নির্ধারিত সময় শেষে প্রতিবেদন পাওয়ার পর পরবর্তী শুনানির তারিখ ঘোষণা করবে।


