আন্তর্জাতিক ডেস্ক
ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় যুদ্ধবিরতি চুক্তি ভঙ্গ করে নতুন করে বিমান হামলা চালিয়েছে ইসরায়েলি বাহিনী। স্থানীয় সময় মঙ্গলবার সন্ধ্যা থেকে শুরু হওয়া এ হামলায় অন্তত ৩০ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। হতাহতদের মধ্যে নারী ও শিশুরাও রয়েছেন বলে জানিয়েছে গাজার স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষ।
বুধবার (২৯ অক্টোবর) আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমগুলোর প্রতিবেদন অনুযায়ী, গাজাজুড়ে একাধিক স্থানে ইসরায়েলি বিমান থেকে বোমা ও ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করা হয়। এ হামলার ফলে বিভিন্ন ভবন ধসে পড়ে এবং বহু মানুষ ধ্বংসস্তূপের নিচে আটকা পড়ে। স্থানীয় কর্তৃপক্ষ জানায়, এই হামলাগুলো চলমান যুদ্ধবিরতি চুক্তির প্রকাশ্য লঙ্ঘন।
ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী দাবি করেছে, তাদের লক্ষ্য ছিল তথাকথিত “প্রতিরোধ যোদ্ধাদের ঘাঁটি”। তবে হামাস বা অন্য কোনো ফিলিস্তিনি গোষ্ঠীর কাছ থেকে তাৎক্ষণিকভাবে পাল্টা প্রতিক্রিয়া জানানো হয়নি। ইসরায়েলি কর্মকর্তারা বলেন, হামাসের একটি ইউনিট একজন ইসরায়েলি সেনাকে হত্যা করেছে, এবং এই হামলা তার প্রতিশোধ হিসেবে চালানো হয়েছে।
তবে ইসরায়েল এখনো পর্যন্ত হামাসের বিরুদ্ধে উত্থাপিত এই অভিযোগের কোনো প্রমাণ প্রকাশ করেনি। গাজার স্থানীয় প্রশাসন বলেছে, হামলাগুলো বেসামরিক এলাকায় হয়েছে এবং এর শিকার হয়েছেন সাধারণ মানুষ, যা যুদ্ধবিরতির শর্তের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছেন, তার মধ্যস্থতায় অর্জিত গাজা যুদ্ধবিরতি “ঝুঁকিতে নেই”। মঙ্গলবার এয়ার ফোর্স ওয়ান বিমানে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি বলেন, “গাজায় যুদ্ধবিরতি ভাঙার কোনো আশঙ্কা নেই। কিছুই সেটাকে বিপন্ন করবে না।”
ট্রাম্প আরও বলেন, “হামাস একজন ইসরায়েলি সেনাকে হত্যা করেছে, তাই ইসরায়েল পাল্টা আঘাত করেছে। এটাই তাদের করা উচিত ছিল।”
চলতি বছরের ১০ অক্টোবর ট্রাম্পের প্রস্তাবিত ২০ দফা শান্তি পরিকল্পনার অধীনে গাজায় যুদ্ধবিরতি কার্যকর হয়। ওই চুক্তির আওতায় ইসরায়েলি জিম্মিদের বিনিময়ে প্রায় দুই হাজার ফিলিস্তিনি বন্দিকে মুক্তি দেওয়ার কথা ছিল। পাশাপাশি গাজা পুনর্গঠনের জন্য আন্তর্জাতিক সহযোগিতায় একটি অর্থায়ন কাঠামো গঠনের উদ্যোগ নেওয়া হয়।
কূটনৈতিক সূত্র জানায়, সাম্প্রতিক এই হামলার ফলে চুক্তির বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া ব্যাহত হতে পারে। বিশেষত বন্দি বিনিময় ও মানবিক সহায়তা পৌঁছানোর ক্ষেত্রে নতুন বাধা সৃষ্টি হতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
২০২৩ সালের অক্টোবরে ইসরায়েলি হামলা শুরুর পর থেকে এ পর্যন্ত ৬৮ হাজার ৫০০ জনেরও বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন বলে গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে। আহত হয়েছেন আরও প্রায় ১ লাখ ৭০ হাজার মানুষ। নিহতদের বড় অংশই নারী ও শিশু। অবকাঠামোগত ক্ষয়ক্ষতি এত ব্যাপক যে গাজার বহু এলাকা এখনো ধ্বংসস্তূপে পরিণত।
জাতিসংঘের মানবিক সংস্থাগুলো বলছে, গাজায় বর্তমানে খাদ্য, পানি ও চিকিৎসা সরঞ্জামের তীব্র সংকট বিরাজ করছে। হাসপাতালগুলোতে পর্যাপ্ত জ্বালানি ও ওষুধের অভাবে চিকিৎসাসেবা প্রায় বন্ধের পথে।
ইসরায়েলের সর্বশেষ হামলার ঘটনায় মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশ উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। মিসর, কাতার ও তুরস্কসহ একাধিক রাষ্ট্র যুদ্ধবিরতি চুক্তি রক্ষার আহ্বান জানিয়েছে। তারা বলছে, এই হামলা শান্তি প্রচেষ্টাকে ক্ষতিগ্রস্ত করবে এবং মানবিক পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলবে।
বিশ্লেষকদের মতে, গাজায় নতুন করে সহিংসতা শুরু হলে তা কেবল ইসরায়েল-ফিলিস্তিন সংঘাতকেই নয়, বরং বৃহত্তর মধ্যপ্রাচ্যের স্থিতিশীলতাকেও হুমকির মুখে ফেলতে পারে। বর্তমান পরিস্থিতিতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের মধ্যস্থতা ও তাৎক্ষণিক সংযম প্রদর্শনই একমাত্র পথ হতে পারে শান্তি পুনরুদ্ধারের জন্য।


