বয়স নয়, দক্ষতাই মুখ্য: অভিনয়ে নতুন দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে তামান্না ভাটিয়া

বয়স নয়, দক্ষতাই মুখ্য: অভিনয়ে নতুন দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে তামান্না ভাটিয়া

বিনোদন ডেস্ক

দক্ষিণী চলচ্চিত্রের জনপ্রিয় অভিনেত্রী তামান্না ভাটিয়া জানিয়েছেন, চলচ্চিত্রজগতে নারীদের প্রতি প্রচলিত ধারণা ধীরে ধীরে বদলে যাচ্ছে। এক সময় মনে করা হতো, নির্দিষ্ট বয়স পেরিয়ে গেলে অভিনেত্রীদের আর লাস্যময়ী বা রোমান্টিক চরিত্রে কাস্ট করা হয় না। কিন্তু বর্তমান প্রেক্ষাপটে সেই ধারণা সম্পূর্ণ ভুল প্রমাণিত হচ্ছে বলে মত দিয়েছেন তিনি।

সম্প্রতি এক সাক্ষাৎকারে তামান্না বলেন, “আমি একসময় ভেবেছিলাম, হয়তো মাত্র ১০ বছর কাজ করব। ৩০ বছর বয়স পেরোলেই বিয়ে করে সংসার জীবন শুরু করব। কারণ তখনকার সময়ে কমবয়সী অভিনেত্রীদেরই বেশি সুযোগ দেওয়া হতো।”

তিনি যোগ করেন, “সেই সময়ের চলচ্চিত্র শিল্পে এক ধরনের মানসিক বাধা ছিল। কিন্তু সময় বদলেছে। এখন আমি মনে করি, বয়স কোনো বাধা নয়। আমার এখনও ইন্ডাস্ট্রিকে দেওয়ার মতো অনেক কিছু বাকি আছে।”

তামান্না জানান, ৩০ বছর পার করার পরও নারী অভিনেত্রীরা বিভিন্ন ধরনের গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রে কাজ করছেন। পূর্বে যেসব চরিত্র কেবল তরুণ অভিনেত্রীদের জন্য বিবেচিত হতো, এখন সেগুলোতেও মধ্যবয়সী শিল্পীরা সমান দক্ষতার সঙ্গে কাজ করছেন।

তার ভাষায়, “এখন চলচ্চিত্র নির্মাতারা বুঝতে পারছেন, অভিজ্ঞতা একটা বড় সম্পদ। গল্পনির্ভর সিনেমায় বয়সকে কেন্দ্র করে চরিত্রের গভীরতা বেড়েছে। এর ফলে পর্দায় মধ্যবয়সী নারীরাও এখন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকায় আসছেন।”

দীর্ঘ দুই দশকের অভিনয় জীবনে তামান্না দেখেছেন, দক্ষিণী সিনেমা ইন্ডাস্ট্রিতে নারী শিল্পীদের অবস্থান ক্রমেই শক্তিশালী হচ্ছে। তিনি বলেন, “আগে প্রযোজক-পরিচালকেরা ভাবতেন, দর্শক কেবল তরুণ মুখই দেখতে চান। কিন্তু এখন দর্শকরা গল্প ও চরিত্রের বাস্তবতা খুঁজছেন। এই পরিবর্তন নারী অভিনেত্রীদের জন্য একটি ইতিবাচক দিগন্ত উন্মোচন করেছে।”

চলচ্চিত্র বিশেষজ্ঞদের মতে, দক্ষিণী ইন্ডাস্ট্রির এই রূপান্তর ভারতীয় সিনেমায় এক নতুন ধারার সূচনা করেছে। এখন অনেক নির্মাতা নারী-নির্ভর কাহিনিকে প্রাধান্য দিচ্ছেন, যেখানে বয়স নয়, বরং চরিত্রের গভীরতা ও বাস্তবতা মুখ্য হয়ে উঠছে।

তামান্না উল্লেখ করেন, সাম্প্রতিক সময়ে নারী চরিত্রের উপস্থাপনায় বৈচিত্র্য এসেছে। একসময় নারী চরিত্রগুলো কেবল গ্ল্যামার বা পার্শ্বচরিত্রে সীমাবদ্ধ ছিল, কিন্তু এখন সেগুলো গল্পের মূল চালিকাশক্তি হয়ে উঠছে। “এখন মধ্যবয়সী অভিনেত্রীদের জন্য আলাদা করে চরিত্র তৈরি হচ্ছে, যেগুলোর গুরুত্ব সিনেমার গতিপথই বদলে দিতে পারে,” বলেন তিনি।

বর্তমানে তামান্না ভাটিয়া একাধিক দক্ষিণী ও হিন্দি চলচ্চিত্রে কাজ করছেন। তিনি জানিয়েছেন, তার লক্ষ্য এখন গল্পনির্ভর ও চরিত্রকেন্দ্রিক সিনেমায় বেশি কাজ করা। “আমি এখন এমন চরিত্র খুঁজছি, যেখানে নারী জীবনের বাস্তবতা ও আবেগের গভীরতা প্রকাশ পায়,” বলেন তামান্না।

চলচ্চিত্র সমালোচকদের মতে, তামান্না ভাটিয়ার এই মন্তব্য শুধু ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতার প্রতিফলন নয়, বরং দক্ষিণ ভারতীয় চলচ্চিত্রশিল্পে নারী অভিনেত্রীদের প্রতি দৃষ্টিভঙ্গির ইতিবাচক পরিবর্তনের একটি ইঙ্গিতও বটে।

দীর্ঘ অভিনয় ক্যারিয়ারে অর্জিত অভিজ্ঞতা ও আত্মবিশ্বাসের জোরেই তামান্না এখন বিশ্বাস করেন— সিনেমায় স্থায়িত্ব নির্ভর করে শিল্পীর বয়সে নয়, বরং তার অভিনয়ক্ষমতা, পেশাদারিত্ব ও চরিত্র নির্বাচনের ওপর।

বিনোদন