ইসলামী ব্যাংকের চাকরিচ্যুত কর্মকর্তাদের মানববন্ধন, চাকরিচ্যুতি অবৈধ ঘোষণার দাবি

ইসলামী ব্যাংকের চাকরিচ্যুত কর্মকর্তাদের মানববন্ধন, চাকরিচ্যুতি অবৈধ ঘোষণার দাবি

অর্থনীতি ডেস্ক

চাকরিচ্যুতি অবৈধ ঘোষণা ও নতুন নিয়োগ প্রক্রিয়া স্থগিত রাখার দাবিতে মানববন্ধন করেছেন ইসলামী ব্যাংকের চাকরিচ্যুত কর্মকর্তারা। শুক্রবার (৩১ অক্টোবর) চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবের সামনে তারা এ কর্মসূচি পালন করেন। ব্যানার ও ফেস্টুন হাতে কর্মকর্তারা চাকরিতে পুনর্বহালের দাবিতে স্লোগান দেন।

এর আগে বৃহস্পতিবার ঢাকার পঞ্চম যুগ্ম জেলা জজ আদালতে ইসলামী ব্যাংকের চাকরিচ্যুত কর্মকর্তাদের পক্ষ থেকে একটি মামলা দায়ের করা হয়। মামলায় চাকরিচ্যুতির সিদ্ধান্ত অবৈধ ঘোষণা ও নতুন নিয়োগ প্রক্রিয়া স্থগিত রাখার আবেদন জানানো হয়। আদালত ইসলামী ব্যাংকের বিরুদ্ধে সমন জারি করে বিবাদীদের আগামী ১৪ জানুয়ারি আদালতে হাজির হওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন।

প্রায় পাঁচ হাজার কর্মকর্তাকে চাকরিচ্যুত করার পর সম্প্রতি ইসলামী ব্যাংক নতুন করে জনবল নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি দেয়। ব্যাংকের ‘ট্রেইনি অ্যাসিস্ট্যান্ট অফিসার’ এবং ‘ট্রেইনি অ্যাসিস্ট্যান্ট অফিসার (ক্যাশ)’ পদে নিয়োগ পরীক্ষার তারিখ আগামীকাল শনিবার নির্ধারণ করা হয়েছে। এই নিয়োগ প্রক্রিয়ার বিরোধিতা করে মানববন্ধনে উপস্থিত কর্মকর্তারা দাবি করেন, তাদের বরখাস্তের পর নতুন নিয়োগের উদ্যোগ ব্যাংক কর্তৃপক্ষের ‘অন্যায্য ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত পদক্ষেপ’।

মানববন্ধনে বক্তব্য রাখেন চাকরিচ্যুত কর্মকর্তা এস. এম. এমদাদ হোসাইন। তিনি বলেন, যথাযথ নিয়মে নিয়োগ ও পদোন্নতি প্রাপ্ত কর্মকর্তাদের কোনো কারণ ছাড়াই চাকরিচ্যুত করা হয়েছে। ব্যাংকের বর্তমান পরিচালনা পর্ষদ আইনি প্রক্রিয়া অমান্য করে স্বেচ্ছাচারী সিদ্ধান্ত নিয়েছে বলেও অভিযোগ করেন তিনি। নতুন নিয়োগ প্রক্রিয়া বন্ধ করে বরখাস্ত কর্মকর্তাদের পুনর্বহালের দাবি জানান তিনি।

এসময় তিনি নিয়োগ পরীক্ষায় অংশগ্রহণ না করার আহ্বান জানান। উপস্থিত কর্মকর্তাদের পক্ষ থেকে বলা হয়, নতুন আবেদনকারীদের নিয়োগের নামে প্রতারণার শিকার হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে, তাই তারা যেন এ পরীক্ষায় অংশ না নেন।

মানববন্ধনে আরও বক্তব্য দেন চাকরিচ্যুত কর্মকর্তা মোক্তার হুসেন রসিদ, মোহাম্মদ হুমায়ুনসহ কয়েকজন প্রাক্তন কর্মকর্তা। তারা বলেন, ইসলামী ব্যাংকে একযোগে বিপুলসংখ্যক কর্মকর্তাকে চাকরিচ্যুত করার কারণে হাজারো পরিবার মানবিক সংকটে পড়েছে। অনেকে পরিবার চালাতে হিমশিম খাচ্ছেন, সন্তানদের শিক্ষা ও চিকিৎসা ব্যাহত হচ্ছে বলে তারা অভিযোগ করেন।

চাকরিচ্যুত কর্মকর্তারা অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের হস্তক্ষেপ কামনা করেন। তারা বলেন, প্রধান উপদেষ্টার কার্যকর উদ্যোগে যদি সমস্যার সমাধান হয়, তবে বহু পরিবার আর্থিক ও সামাজিক সংকট থেকে মুক্তি পাবে।

মানববন্ধনে উপস্থিত কর্মকর্তারা জানান, আদালতের নির্দেশ অনুযায়ী পরবর্তী শুনানি পর্যন্ত তারা আইনি লড়াই চালিয়ে যাবেন। দাবি পূরণ না হলে ভবিষ্যতে ঢাকাসহ সারা দেশে আরও বৃহত্তর কর্মসূচির ঘোষণা দেওয়া হবে বলেও তারা সতর্ক করেন।

চাকরিচ্যুত কর্মকর্তাদের অভিযোগ, ব্যাংকের নতুন ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ নিয়োগ ও পদোন্নতির পুরোনো কাঠামো পরিবর্তন করে অভিজ্ঞ কর্মকর্তাদের সরিয়ে নতুন নিয়োগের মাধ্যমে সাংগঠনিক পুনর্গঠনের চেষ্টা করছে। এতে ব্যাংকের সেবা কার্যক্রম ও অভ্যন্তরীণ স্থিতিশীলতা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে বলে তাদের আশঙ্কা।

ইসলামী ব্যাংকের পক্ষ থেকে এখনো এ বিষয়ে কোনো আনুষ্ঠানিক মন্তব্য পাওয়া যায়নি। আদালতের নির্দেশ অনুযায়ী আগামী জানুয়ারিতে মামলার শুনানিতে ব্যাংক কর্তৃপক্ষের জবাব দাখিলের পর পরবর্তী পদক্ষেপ নির্ধারিত হবে।

অর্থ বাণিজ্য