অর্থনীতি ডেস্ক
বাংলাদেশে আজ বুধবার (২৯ অক্টোবর) থেকে কোনো জাতীয় পরিচয়পত্রের (এনআইডি) বিপরীতে সর্বোচ্চ ১০টি সক্রিয় সিম রাখার নিয়ম কার্যকর হয়েছে। বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি) জানিয়েছে, মোবাইল অপারেটরগুলো আজ থেকেই অতিরিক্ত সিম নিষ্ক্রিয় করার প্রক্রিয়া শুরু করেছে।
এর আগে একজন গ্রাহক একই এনআইডিতে সর্বোচ্চ ১৫টি সিম ব্যবহার করতে পারতেন। নতুন নির্দেশনা অনুযায়ী, এখন থেকে সব অপারেটর মিলিয়ে একজন গ্রাহকের নামে ১০টির বেশি সিম সক্রিয় রাখা যাবে না।
বিটিআরসি চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব.) এমদাদ উল বারী সম্প্রতি এক বক্তব্যে জানান, আগামী ১ নভেম্বর থেকে অপারেটররা ধাপে ধাপে অতিরিক্ত সিম নিষ্ক্রিয় করবে। ডিসেম্বরের মধ্যে নিশ্চিত করা হবে যে, কোনো এনআইডির নামে ১০টির বেশি সিম সক্রিয় থাকবে না।
বিটিআরসি সূত্র জানিয়েছে, সিম ব্যবস্থাপনায় শৃঙ্খলা আনা, জালিয়াতি প্রতিরোধ এবং সিমের অপব্যবহার বন্ধের লক্ষ্যে এই সিদ্ধান্ত কার্যকর করা হয়েছে। কমিশনের নির্দেশনা অনুযায়ী, গ্রাহকরা চাইলে অনলাইনে বা *১৬০০২# ডায়াল করে নিজেদের এনআইডিতে নিবন্ধিত সিমের সংখ্যা যাচাই করতে পারবেন।
সিম নিষ্ক্রিয় করার ক্ষেত্রে ‘দৈবচয়ন’ বা র্যান্ডম সিলেকশনের নীতি অনুসরণ করা হবে বলে জানিয়েছে বিটিআরসি। প্রতিষ্ঠানটির এক কর্মকর্তা জানান, অতিরিক্ত সিম নিষ্ক্রিয় করার প্রক্রিয়ায় কোনো মানবিক হস্তক্ষেপ বা সিদ্ধান্তের সুযোগ থাকবে না। এটি সম্পূর্ণভাবে স্বয়ংক্রিয় কম্পিউটার অ্যালগরিদমের মাধ্যমে পরিচালিত হবে, যা এলোমেলোভাবে নির্দিষ্ট কিছু সিম বেছে নিয়ে নিষ্ক্রিয় করবে। অর্থাৎ, যাদের নামে ১০টির বেশি সিম রয়েছে, তাদের ক্ষেত্রে কোন সিমগুলো বন্ধ হবে তা কোনো ব্যক্তি নয়, বরং কম্পিউটার স্বয়ংক্রিয়ভাবে নির্ধারণ করবে।
বিটিআরসি আরও জানায়, এই পদক্ষেপের মাধ্যমে অবৈধ সিম ব্যবহার ও প্রতারণামূলক কার্যক্রম উল্লেখযোগ্যভাবে কমে আসবে বলে আশা করা হচ্ছে। কমিশন মনে করে, অতিরিক্ত সিমের কারণে একাধিক নাম-পরিচয়ে মোবাইল সংযোগ ব্যবহার করে আর্থিক প্রতারণা, জাল লেনদেন ও অপরাধমূলক কার্যক্রম সংঘটনের ঝুঁকি বেড়ে যায়।
বর্তমানে দেশে মোবাইল সংযোগের সংখ্যায় প্রকৃত ব্যবহারকারীর তুলনায় বড় ধরনের ব্যবধান রয়েছে। ২০২৫ সালের মার্চ পর্যন্ত দেশে সক্রিয় মোবাইল সিমের সংখ্যা ছিল প্রায় ১৮ কোটি ৬২ লাখ, যেখানে প্রকৃত মোবাইল গ্রাহক মাত্র ৬ কোটি ৭৫ লাখ। পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ৮০ শতাংশের বেশি গ্রাহকের নামে ৫টির কম সিম রয়েছে। প্রায় ১৬ শতাংশ গ্রাহকের নামে ৬ থেকে ১০টি সিম নিবন্ধিত, আর ১১টির বেশি সিম ব্যবহার করেন মাত্র ৩ শতাংশ গ্রাহক।
বিটিআরসি জানায়, এই সীমা কার্যকর হলে অপারেটরদের সিম ব্যবস্থাপনায় স্বচ্ছতা বাড়বে এবং মোবাইল যোগাযোগ খাতে গ্রাহক তথ্যভান্ডার আরও নির্ভুল হবে। পাশাপাশি অবৈধ সিম বেচাকেনা ও চোরাই সংযোগ ব্যবহার বন্ধে এই পদক্ষেপ সহায়ক ভূমিকা রাখবে বলে কমিশন আশা করছে।


