ইলিশের টেকসই সংরক্ষণে শুরু হলো আট মাসের জাটকা আহরণ নিষেধাজ্ঞা

ইলিশের টেকসই সংরক্ষণে শুরু হলো আট মাসের জাটকা আহরণ নিষেধাজ্ঞা

অর্থনীতি ডেস্ক

দেশে ইলিশের উৎপাদন বৃদ্ধি ও টেকসই সংরক্ষণ নিশ্চিত করতে আজ শুক্রবার (১ নভেম্বর) থেকে শুরু হয়েছে জাটকা ইলিশ আহরণে নিষেধাজ্ঞা, যা আগামী ৩০ জুন পর্যন্ত বলবৎ থাকবে। মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের তত্ত্বাবধানে এবং মৎস্য অধিদপ্তরের বাস্তবায়নে সারাদেশে একযোগে এ কার্যক্রম শুরু হয়েছে।

আট মাসব্যাপী এই নিষেধাজ্ঞার আওতায় ২৫ সেন্টিমিটারের কম দৈর্ঘ্যের ইলিশ (জাটকা) আহরণ, পরিবহন, বাজারজাতকরণ, ক্রয়-বিক্রয় ও মজুত সম্পূর্ণভাবে নিষিদ্ধ থাকবে। মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, জাটকা রক্ষা না করা হলে ইলিশের প্রজনন চক্র ব্যাহত হয়, যা দেশের সামগ্রিক মাছ উৎপাদনে নেতিবাচক প্রভাব ফেলে।

এর আগে ৪ অক্টোবর থেকে ২৫ অক্টোবর পর্যন্ত ইলিশের প্রধান প্রজনন মৌসুমে প্রজননক্ষম ইলিশ রক্ষায় ‘ইলিশ সংরক্ষণ অভিযান–২০২৫’ পরিচালনা করা হয়। ওই সময়ে মা ইলিশ ধরায় নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছিল। বিশেষজ্ঞরা জানান, এই সময়ে ডিমওয়ালা ইলিশ থেকে নিঃসৃত ডিমের পরিস্ফুটনের মাধ্যমে উৎপন্ন পোনা বর্তমানে উপকূলীয় নদ–নদী ও মোহনায় বিচরণ করছে। এসব পোনা নিরাপদে বেড়ে উঠলে আগামী মৌসুমে ইলিশের উৎপাদন উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পাবে বলে আশা করা হচ্ছে।

মৎস্য অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা জানান, ইলিশ বাংলাদেশের সবচেয়ে মূল্যবান প্রাকৃতিক সম্পদগুলোর একটি, যা দেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। ইলিশ রক্ষায় দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনার অংশ হিসেবে সরকার প্রতি বছর জাটকা সংরক্ষণে এই মৌসুমি নিষেধাজ্ঞা কার্যকর করে আসছে।

মৎস্য সুরক্ষা ও সংরক্ষণ (সংশোধিত) অধ্যাদেশ, ২০২৫ এবং মৎস্য সুরক্ষা ও সংরক্ষণ বিধিমালা, ১৯৮৫ অনুযায়ী, এ নিষেধাজ্ঞা লঙ্ঘন করলে সর্বোচ্চ দুই বছরের সশ্রম কারাদণ্ড বা সর্বোচ্চ পাঁচ লাখ টাকা পর্যন্ত অর্থদণ্ড, কিংবা উভয় দণ্ডের বিধান রয়েছে।

নিষেধাজ্ঞা কার্যকরে কঠোর নজরদারির অংশ হিসেবে মৎস্য অধিদপ্তর সারাদেশে জেলা ও উপজেলা প্রশাসনের পাশাপাশি নৌবাহিনী, কোস্টগার্ড, নৌ পুলিশ, র‍্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব) এবং স্থানীয় আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোর সমন্বয়ে বিশেষ টাস্কফোর্স গঠন করেছে। এই টাস্কফোর্স নদ-নদী, মৎস্যঘাট ও বাজার এলাকায় অভিযান পরিচালনা করবে।

মৎস্য অধিদপ্তর জানিয়েছে, এই নিষেধাজ্ঞা বাস্তবায়নের মাধ্যমে ভবিষ্যতে ইলিশ উৎপাদন টেকসই পর্যায়ে পৌঁছানো এবং মৎস্যজীবীদের আয় বৃদ্ধি নিশ্চিত করা সম্ভব হবে। পাশাপাশি, সরকার জাটকা আহরণে ক্ষতিগ্রস্ত জেলেদের জন্য বিকল্প কর্মসংস্থান ও সহায়তা কার্যক্রম চালু রাখার পরিকল্পনাও করছে।

বিশেষজ্ঞদের মতে, এ ধরনের দীর্ঘমেয়াদি সংরক্ষণ নীতি ইলিশ সম্পদের পুনরুত্পাদন ও প্রাকৃতিক ভারসাম্য রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে, যা দেশের খাদ্য নিরাপত্তা ও অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতার জন্য ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে।

অর্থ বাণিজ্য