ইসরায়েলের আটক কেন্দ্রে নিহত ৩০ ফিলিস্তিনির মরদেহ গাজায় ফেরত

ইসরায়েলের আটক কেন্দ্রে নিহত ৩০ ফিলিস্তিনির মরদেহ গাজায় ফেরত

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষের হাতে আটক অবস্থায় নিহত আরও ৩০ জন ফিলিস্তিনির মরদেহ গাজা উপত্যকায় ফেরত দিয়েছে ইসরায়েল। ফেরত দেওয়া অধিকাংশ মরদেহে নির্যাতনের সুস্পষ্ট চিহ্ন পাওয়া গেছে বলে জানিয়েছে স্থানীয় সূত্র।

শুক্রবার (২৮ অক্টোবর) আন্তর্জাতিক রেডক্রস কমিটির (আইসিআরসি) মাধ্যমে মরদেহগুলো ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের কাছে হস্তান্তর করা হয়। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, সাম্প্রতিক এই হস্তান্তরের ফলে এখন পর্যন্ত মোট ২২৫টি মরদেহ গাজায় ফেরত আনা হয়েছে। এদের মধ্যে অনেকেই ইসরায়েলের বিভিন্ন আটক কেন্দ্রে নির্যাতনের শিকার হয়ে মারা গেছেন বলে ফিলিস্তিনি প্রশাসনের দাবি।

এদিকে, তথাকথিত যুদ্ধবিরতির মধ্যেও ইসরায়েলি বাহিনী শুক্রবার গাজার বিভিন্ন স্থানে নতুন করে বিমান ও স্থল হামলা চালিয়েছে। ফিলিস্তিনি সংবাদ সংস্থা ওয়াফা জানিয়েছে, এসব হামলায় অন্তত তিনজন নিহত হয়েছেন। পূর্ব গাজা সিটির শুজাইয়া এলাকায় ইসরায়েলি সেনাদের গুলিতে একজন ফিলিস্তিনি নিহত ও তার ভাই আহত হন। একই দিন জাবালিয়া শরণার্থী শিবিরে গোলাবর্ষণে একজন মারা যান এবং আরেকজন আহত ব্যক্তি চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান।

গাজার সিভিল ডিফেন্স কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, মধ্য গাজার আজ-জাহরা এলাকায় আবু মেদেইন পরিবারের ধ্বংসস্তূপ থেকে আরও এক ফিলিস্তিনির মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। এছাড়া দক্ষিণ গাজার খান ইউনিস এলাকাতেও ইসরায়েলি যুদ্ধবিমান কয়েকটি ভবনে হামলা চালিয়েছে, যার ফলে বেশ কয়েকটি স্থাপনা ধ্বংস হয়েছে এবং অনেকে আহত হয়েছেন।

ফিলিস্তিনি কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ফেরত পাওয়া মরদেহগুলোর বেশিরভাগই বন্দি-বিনিময় চুক্তির অংশ হিসেবে হস্তান্তর করা হচ্ছে। এ বিষয়ে ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষ এখনো কোনো আনুষ্ঠানিক মন্তব্য করেনি।

মানবাধিকার সংস্থাগুলো বলছে, গাজার সংঘাত চলাকালীন আটক ফিলিস্তিনিদের মানবিক অবস্থা নিয়ে উদ্বেগ বাড়ছে। দীর্ঘদিনের অবরোধ ও অব্যাহত সামরিক অভিযানের ফলে গাজার কারাগার ও আটক কেন্দ্রে মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ ক্রমেই জোরালো হচ্ছে।

জাতিসংঘ ও আন্তর্জাতিক রেডক্রস কমিটি ফিলিস্তিনি বন্দিদের অবস্থা সম্পর্কে নিয়মিত তথ্য সংগ্রহ করছে। সংস্থাগুলো জানিয়েছে, গাজায় অব্যাহত সংঘাত ও আটক অভিযান ফিলিস্তিনের মানবিক সংকটকে আরও গভীর করছে।

গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় সতর্ক করেছে, নির্যাতন ও আটক মৃত্যুর সংখ্যা বাড়তে থাকলে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইনের মারাত্মক লঙ্ঘন হিসেবে তা গণ্য হবে। একই সঙ্গে তারা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে হস্তক্ষেপের আহ্বান জানিয়েছে, যাতে যুদ্ধবিরতি বাস্তবায়ন ও মানবিক সহায়তা কার্যক্রম নির্বিঘ্নভাবে পরিচালনা করা যায়।

বর্তমানে গাজা উপত্যকায় মানবিক পরিস্থিতি দ্রুত অবনতি হচ্ছে। হাসপাতালগুলোতে চিকিৎসা সামগ্রীর সংকট, খাদ্য ও বিশুদ্ধ পানির ঘাটতি এবং বাস্তুচ্যুত মানুষের সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। এই প্রেক্ষাপটে আটক অবস্থায় নিহত ফিলিস্তিনিদের মরদেহ ফেরত আসা গাজার মানবাধিকার সংকটের ভয়াবহতা আরও স্পষ্ট করেছে।

আন্তর্জাতিক