জাতীয় ডেস্ক
অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সভাপতিত্বে গঠিত জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের মেয়াদ শেষ হয়েছে শুক্রবার (৩১ অক্টোবর)। চলতি বছরের ১২ ফেব্রুয়ারি গঠিত এই কমিশনের ছয় মাস মেয়াদ শেষ হওয়ার পর আগস্ট ও অক্টোবর মাসে দুই দফায় মেয়াদ বাড়ানো হয়েছিল। সর্বশেষ ৩১ অক্টোবর মেয়াদ শেষ হওয়ায় কমিশনের কার্যক্রম আনুষ্ঠানিকভাবে সমাপ্ত হয়েছে।
কমিশনের সহসভাপতি ও সংবিধান সংস্কার কমিশনের প্রধান অধ্যাপক আলী রীয়াজ জানিয়েছেন, কমিশনের প্রণীত ‘জুলাই জাতীয় সনদ’ সরকারকে বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, “দলগুলো যদি সনদে স্বাক্ষর করতে চায়, তবে সরকারের সঙ্গে যোগাযোগ করে তা করতে পারবে।” শেষ দিন পর্যন্ত এনসিপিসহ পাঁচটি রাজনৈতিক দল সনদে স্বাক্ষর করেনি।
জাতীয় ঐকমত্য কমিশন গঠিত হয় সংবিধান, নির্বাচন ব্যবস্থা, বিচার বিভাগ, জনপ্রশাসন, দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) ও পুলিশ সংস্কার বিষয়ক ছয়টি পৃথক কমিশনের প্রধান ও সদস্যদের নিয়ে। এসব সংস্কার কমিশন গত জানুয়ারিতে তাদের প্রতিবেদন জমা দেয়। এরপর ঐ প্রতিবেদনগুলো পর্যালোচনা ও বাস্তবায়নের বিষয়ে রাজনৈতিক ঐকমত্য গঠনের লক্ষ্যে ১২ ফেব্রুয়ারি জাতীয় ঐকমত্য কমিশন গঠন করা হয়।
১৫ ফেব্রুয়ারি প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সভাপতিত্বে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপের মাধ্যমে কমিশনের কার্যক্রম শুরু হয়। মার্চ মাসে কমিশন প্রথম দফার সংলাপ আয়োজন করে, যেখানে ছয় সংস্কার কমিশনের ১৬৬টি সুপারিশ নিয়ে আলোচনা হয়। ২২ মার্চ থেকে ১৯ মে পর্যন্ত ৪৪টি বৈঠকে অংশ নেয় বিভিন্ন রাজনৈতিক দল। এই সংলাপের ভিত্তিতে সরকার ৬২টি সংস্কার বিষয়ে সংখ্যাগরিষ্ঠ মতামতের ভিত্তিতে ঐকমত্য ঘোষণা করে।
৩ জুন শুরু হয় কমিশনের দ্বিতীয় দফার সংলাপ, যা ৩১ জুলাই পর্যন্ত চলে। এই পর্যায়ে ২২টি মৌলিক সংস্কার প্রস্তাব নিয়ে ঐকমত্যে পৌঁছে কমিশন। দুই দফা সংলাপের ফলাফলের ভিত্তিতে প্রণয়ন করা হয় ‘জুলাই জাতীয় সনদ’, যাতে মোট ৮৪টি সংস্কার প্রস্তাব অন্তর্ভুক্ত ছিল।
এরপর আগস্টে কমিশনের মেয়াদ এক মাস বাড়ানো হয় এবং ১৭ সেপ্টেম্বর রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সনদ বাস্তবায়নের পদ্ধতি নিয়ে আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়। অক্টোবর মাসে কমিশনের মেয়াদ দ্বিতীয়বারের মতো বৃদ্ধি পেয়ে ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত বাড়ানো হয়। ওই সময় পর্যন্ত কমিশন দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা অব্যাহত রাখে।
১৭ অক্টোবর সংসদের দক্ষিণ প্লাজায় অনুষ্ঠিত এক অনুষ্ঠানে বিএনপি, জামায়াতসহ ২৪টি রাজনৈতিক দল ‘জুলাই সনদে’ স্বাক্ষর করে। পরদিন আরও একটি দল সনদে স্বাক্ষর করে। তবে এনসিপি ও আরও চারটি দল স্বাক্ষর থেকে বিরত থাকে।
কমিশন গত ২৮ অক্টোবর সরকারের কাছে ‘জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়নের সুপারিশ’ এবং ‘জুলাই সনদ বাস্তবায়ন (সংবিধান সংস্কার) আদেশের খসড়া’ জমা দেয়। সে সময় জানানো হয়, মেয়াদ শেষ হওয়ার আগে পর্যন্ত ইচ্ছুক দলগুলো সনদে স্বাক্ষর করতে পারবে। এনসিপির যুগ্ম আহ্বায়ক জাবেদ রাসিন বলেন, “সরকারের আদেশ জারির পর আমরা সনদে স্বাক্ষরের বিষয়টি বিবেচনা করব।”
কমিশনের প্রশাসনিক ও কারিগরি সহায়তা প্রদান করেছে জাতীয় সংসদ সচিবালয়। অধ্যাপক আলী রীয়াজ জানিয়েছেন, বৃহস্পতিবার কমিশনের শেষ কর্মদিবসে কার্যালয়ের একাংশ সংসদ সচিবালয়কে বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে, বাকি অংশ রোববার হস্তান্তর করা হবে।
জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের কার্যক্রমের সমাপ্তির মধ্য দিয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের সংস্কার উদ্যোগ একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশাসনিক পর্যায় অতিক্রম করল। এখন সরকারের হাতে থাকা ‘জুলাই সনদ’ ও তার বাস্তবায়ন প্রস্তাবগুলো কত দ্রুত কার্যকর হয়, সেটিই হবে পরবর্তী পর্যবেক্ষণের বিষয়।


