খেলাধুলা ডেস্ক
বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দলে আবারও নেতৃত্বে ফিরছেন নাজমুল হোসেন শান্ত। চলতি নভেম্বরে শুরু হতে যাওয়া আয়ারল্যান্ড সিরিজকে সামনে রেখে তাকে টেস্ট দলের অধিনায়ক হিসেবে পুনর্বহাল করেছে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি)। চট্টগ্রামে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে টি-টোয়েন্টি সিরিজে হোয়াইটওয়াশ হওয়ার পরই বোর্ড কর্তারা নতুন টেস্ট অধিনায়ক নির্বাচনের সিদ্ধান্ত নেন এবং শেষ পর্যন্ত শান্তকেই পুনরায় দায়িত্ব দেওয়ার সিদ্ধান্তে উপনীত হন।
গত জুনে শ্রীলঙ্কা সফরে যাওয়ার এক দিন আগে বাংলাদেশ দলে নেতৃত্ব পরিবর্তনের সূত্রপাত ঘটে। দেশে সিরিজপূর্ব সংবাদ সম্মেলন শেষে নাজমুল হোসেন শান্ত জানতে পারেন, তিনি আর ওয়ানডে অধিনায়ক নন। বিসিবি তার পরিবর্তে মেহেদী হাসান মিরাজকে ওয়ানডে দলের নেতৃত্বে আনে, যা শান্তকে আগেভাগে না জানানোয় বিতর্ক সৃষ্টি করে। যদিও তখন প্রকাশ্যে কোনো প্রতিক্রিয়া না জানিয়ে শান্ত বিষয়টি নীরবে মেনে নেন, তবে কলম্বোর সিংহলিজ স্পোর্টস ক্লাব মাঠে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে সফরের দ্বিতীয় টেস্ট শেষে তিনি স্বেচ্ছায় টেস্ট নেতৃত্ব ছাড়ার ঘোষণা দেন।
এরপর টেস্ট খেলার নির্ধারিত সূচি না থাকায় নতুন অধিনায়ক বেছে নেওয়ার প্রয়োজন হয়নি। প্রায় চার মাস পর, আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে টেস্ট সিরিজ ঘনিয়ে আসায় বিসিবিকে নতুন অধিনায়ক নিয়োগ দিতে হয়। এই প্রেক্ষাপটে বোর্ডের একাধিক পরিচালক শান্তকে পুনরায় নেতৃত্বে ফিরতে রাজি করান। বিসিবির একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে, সাম্প্রতিক আলোচনার পর শান্ত নিজেও দায়িত্ব গ্রহণে সম্মতি দিয়েছেন।
টি-টোয়েন্টি সিরিজের পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠান শেষে বিসিবি সভাপতি আমিনুল ইসলাম বোর্ড পরিচালকদের সঙ্গে বৈঠক করে টেস্ট অধিনায়ক নির্ধারণে আলোচনা করেন। বৈঠকে সম্ভাব্য প্রার্থীদের মধ্যে ছিলেন লিটন কুমার দাস ও মেহেদী হাসান মিরাজ। তবে সূত্রমতে, ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে প্রথম টি-টোয়েন্টি ম্যাচে পরাজয়ের পর সতীর্থ শামীম হোসেনকে নিয়ে লিটনের মন্তব্য তার নেতৃত্ব সম্ভাবনাকে নেতিবাচকভাবে প্রভাবিত করে। অন্যদিকে, মিরাজকেও বোর্ড পরিচালকেরা টেস্ট অধিনায়ক হিসেবে উপযুক্ত মনে করেননি।
ফলে টেস্টে অভিজ্ঞতা ও দলের অভ্যন্তরীণ স্থিতি বিবেচনায় নাজমুল হোসেন শান্তকেই পুনরায় দায়িত্ব দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। বিসিবি সূত্র জানায়, বোর্ড এখনো তিন ফরম্যাটে আলাদা অধিনায়ক রাখার নীতি থেকে সরে আসতে চায় না। সেই কৌশল অনুযায়ী লিটন ও মিরাজের নেতৃত্ব সীমিত ওভারের ফরম্যাটে বহাল থাকছে, আর শান্ত ফিরছেন দীর্ঘ ফরম্যাটে।
নাজমুল হোসেন শান্তর নেতৃত্বে বাংলাদেশ সর্বশেষ টেস্ট খেলেছিল শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে। তার অধীনে দলটি টেস্ট সিরিজে প্রতিযোগিতামূলক পারফরম্যান্স দেখাতে পারলেও ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে পারেনি। বিসিবি মনে করছে, দলের তরুণদের সঙ্গে শান্তর যোগাযোগ ও মাঠে ঠাণ্ডা মাথার সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা তাকে পুনরায় নেতৃত্বে ফিরিয়ে আনার অন্যতম কারণ।
আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে আসন্ন টেস্ট সিরিজ বাংলাদেশের জন্য গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে, বিশেষত ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে সাম্প্রতিক টি-টোয়েন্টি ব্যর্থতার পর দলকে মানসিকভাবে পুনরুজ্জীবিত করার লক্ষ্যেই নেতৃত্বে এই পরিবর্তন আনা হয়েছে বলে ক্রিকেট সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন। শান্তর নেতৃত্বে টেস্ট দল মাঠে নামলে সেটি হবে তার নেতৃত্বে পুনরায় দায়িত্ব গ্রহণের পর প্রথম আন্তর্জাতিক ম্যাচ।


