আন্তর্জাতিক ডেস্ক
ভারতের কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ বলেছেন, শতবর্ষে পদার্পণ করা রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘ (আরএসএস) দেশের জন্য অমূল্য অবদান রেখেছে। তিনি বলেন, এই সংগঠন থেকেই ভারতের ইতিহাসের দুই জনপ্রিয় প্রধানমন্ত্রী—অটল বিহারী বাজপেয়ী ও নরেন্দ্র মোদি—উত্থান ঘটেছেন।
শনিবার (১ নভেম্বর) বিহারের রাজধানী পাটনায় আয়োজিত ‘বিহার পাওয়ার প্লে কনক্লেভ’-এ বক্তব্য দিতে গিয়ে অমিত শাহ এই মন্তব্য করেন। তাঁর এই বক্তব্য কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খাড়গের আরএসএস নিষিদ্ধের দাবির জবাবে আসে।
অমিত শাহ বলেন, “খাড়গে সাহেব কোনো কারণ উল্লেখ করেননি। আরএসএস এমন একটি সংগঠন, যা কোটি কোটি তরুণকে দেশগঠনে অনুপ্রাণিত করেছে। এই সংগঠন দেশপ্রেম, শৃঙ্খলা ও সমাজের ঐক্যের শিক্ষা দেয়। এখান থেকেই উঠে এসেছেন ভারতের দুই সেরা প্রধানমন্ত্রী—অটল বিহারী বাজপেয়ী ও নরেন্দ্র মোদি।”
তিনি আরও বলেন, “দেশের উন্নয়ন, সমাজকে সঠিক পথে পরিচালনা এবং তরুণ প্রজন্মকে দেশসেবায় উদ্বুদ্ধ করার ক্ষেত্রে আরএসএসের অবদান অনন্য। খাড়গে সাহেবের উদ্দেশ্য আমি বুঝতে পারছি, কিন্তু তাঁর দাবি কখনোই বাস্তবায়িত হবে না।”
আরএসএস ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি) আদর্শিক মূল সংগঠন, যার কর্মীরা দলীয় প্রচার ও সাংগঠনিক কার্যক্রমে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন।
এর আগে শুক্রবার কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খাড়গে দাবি করেন, যদি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি সত্যিই ভারতের প্রথম উপ-প্রধানমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সর্দার বল্লভভাই প্যাটেলের মতাদর্শকে সম্মান করেন, তবে আরএসএসকে নিষিদ্ধ করা উচিত।
খাড়গে অভিযোগ করেন, “দেশের বিভিন্ন আইনশৃঙ্খলার সমস্যা ও অন্যায়ের পেছনে বিজেপি ও আরএসএসের ভূমিকা রয়েছে।” তবে তাঁর দলের সহকর্মী ও সংসদ সদস্য কার্তি চিদম্বরম এই প্রস্তাবের বাস্তবায়নযোগ্যতা নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেন।
কার্তি চিদম্বরম বলেন, “এই ধরনের দাবি কার্যকর হবে না। অতীতে আরএসএস তিনবার নিষিদ্ধ হয়েছিল, পরে সেই নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করা হয়। বর্তমান আইনগত পরিবেশে এমন নিষেধাজ্ঞা টেকসই হবে না।”
১৯২৫ সালে মহারাষ্ট্রের নাগপুরে কেশব বালিরাম হেডগেওয়ারের উদ্যোগে আরএসএস প্রতিষ্ঠিত হয়। স্বাধীন ভারতের ইতিহাসে সংগঠনটি তিন দফা নিষিদ্ধ হয়েছিল—প্রথমে ১৯৪৮ সালে মহাত্মা গান্ধী হত্যার পর, পরে ১৯৭৫ সালের জরুরি অবস্থার সময় এবং ১৯৯২ সালে অযোধ্যার বাবরি মসজিদ ধ্বংসের পর।
চলতি বছরের মার্চ মাসে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি নাগপুরে আরএসএসের সদর দপ্তর পরিদর্শন করেন। তিনি বলেন, “আরএসএস ভারতের অমর সংস্কৃতি ও আধুনিকতার প্রতীক। শতবর্ষে পদার্পণ করে সংগঠনটি বিশ্বের বৃহত্তম স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনে পরিণত হয়েছে এবং অসংখ্য দেশপ্রেমিক তৈরি করেছে।”
অমিত শাহ তাঁর বক্তব্যের শেষে বলেন, “আরএসএস একটি দেশপ্রেমিক সংগঠন। যারা এই সংগঠন নিষিদ্ধের কথা বলছেন, তারা ভুলে যাচ্ছেন যে দেশে এখন নির্বাচন চলছে। জনগণই তাদের জবাব দেবে।”
সূত্র: এনডিটিভি


