অর্থনীতি ডেস্ক
ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প প্রতিষ্ঠান (এসএমই) খাতকে দেশের অর্থনীতির মূলধারায় অন্তর্ভুক্ত করার উদ্দেশ্যে সম্প্রতি চারটি বৈঠক করেছে বিনিয়োগ সমন্বয় কমিটি। বৈঠকগুলোতে সরকারি ও বেসরকারি খাতের শীর্ষ কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। এ বৈঠকে কমিটির সভাপতি ও প্রধান উপদেষ্টার আন্তর্জাতিক বিষয়ক বিশেষ দূত লুৎফে সিদ্দিকী, বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যান মো. আবদুর রহমান খানসহ অন্যান্য কর্মকর্তারা অংশ নেন।
প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং থেকে জানানো হয়েছে, সভাগুলোতে উদ্যোক্তাদের সরাসরি অংশগ্রহণ নিশ্চিত করার মাধ্যমে নীতিনির্ধারণ প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা ও কার্যকারিতা বৃদ্ধির ওপর বিশেষ গুরুত্বারোপ করা হয়েছে। এই লক্ষ্য বাস্তবায়নের জন্য ইতিমধ্যে কিছু প্রাথমিক সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে, যেমন— বৈদেশিক অর্ডার থেকে প্রাপ্ত অর্থের ১০ শতাংশ বাধ্যতামূলকভাবে ব্যাংকে জমা রাখার নিয়ম বাতিলের উদ্যোগ এবং ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের নামে বছরে ন্যূনতম ৩ হাজার মার্কিন ডলারের পৃথক বৈদেশিক মুদ্রা কোটা বরাদ্দের প্রস্তাব।
গত ৯ অক্টোবর বাংলাদেশ ব্যাংকের সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত বৈঠকে চারটি গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়। সভায় নতুন ফাইন্যানশিয়াল প্রোডাক্ট ডিজাইন, নীতিমালার কার্যকারিতা মূল্যায়ন, ট্রেড লাইসেন্সবিহীন ঋণ প্রদানের সম্ভাব্যতা যাচাই এবং সুদের হার পুনর্বিবেচনা বিষয়গুলো গুরুত্বসহকারে আলোচিত হয়।
এর আগে ২৮ আগস্ট প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে কমিটির বৈঠকে এসএমই খাতের চ্যালেঞ্জসমূহ যেমন পেমেন্ট, কাস্টমস, লাইসেন্স এবং ঋণ ব্যবস্থা নিয়ে আলোচনা হয়। ধারাবাহিকতায় ২১ সেপ্টেম্বর এসএমই ফাউন্ডেশনের সভাকক্ষে দুই ঘণ্টাব্যাপী বৈঠকে উদ্যোক্তাদের অভিজ্ঞতা ও প্রস্তাব শোনা হয়। এই প্রস্তাবগুলোর ভিত্তিতে বিভিন্ন সুপারিশ তৈরি করে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও সংস্থাগুলোতে পাঠানো হয়েছে।
এসএমই খাতে বাস্তবায়নাধীন সিদ্ধান্তের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো—
- স্যাম্পল ক্লিয়ারেন্স প্রক্রিয়া দ্রুত ও সহজ করতে এনবিআরের মনিটরিং জোরদার করা।
- ডিজিটাল ওয়ালেটের মাধ্যমে অর্থ প্রাপ্তিতে উদ্যোক্তাদের আইসিটি খাতের মতো সুবিধা প্রদানের জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকের নীতিমালা পরিবর্তনের উদ্যোগ।
- অনলাইন বিক্রির অর্থ দ্রুত উদ্যোক্তার ব্যাংক অ্যাকাউন্টে জমা নিশ্চিত করতে এসএসএল কমার্জ ও সংশ্লিষ্ট ব্যাংকগুলোর প্রতি নির্দেশনা।
- অনলাইন মার্কেটপ্লেসের মাধ্যমে রফতানিতে বিদ্যমান নীতিমালায় বি২বি ও বি২সি মডেল অন্তর্ভুক্ত করা।
- এসএমই উদ্যোক্তাদের জন্য নীতিমালা প্রচারে সচেতনতামূলক কার্যক্রম গ্রহণ।
- বিশেষ বৈদেশিক মুদ্রা বা এন্ডোর্সমেন্ট কার্ড চালুর প্রস্তাব।
- আন্তর্জাতিক ক্রেতা ও ক্লায়েন্টদের জন্য এসএমই খাত বিষয়ে রিপোর্ট প্রকাশ।
- বিদেশে দূতাবাসের মাধ্যমে স্ট্যান্ডার্ড অপারেটিং প্রসিডিউর বাস্তবায়নের জন্য প্রধান উপদেষ্টার দফতরের সঙ্গে সমন্বয়।
- অ্যাগ্রো-অর্গানিক সার্টিফিকেট ইস্যু সমস্যার সমাধান।
- ব্যাংক গ্যারান্টি ছাড়াই আগাম পেমেন্ট সীমা বৃদ্ধি।
- স্থানীয় বিমা কভারেজসহ ওপেন অ্যাকাউন্টে রফতানি লেনদেনের অনুমোদন।
- ব্যবসায়ীদের ট্রেড পেমেন্ট পদ্ধতি সহজভাবে উপস্থাপনের জন্য ফ্লোচার্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার।
এছাড়া, ২৮ আগস্টের বৈঠকে এনবিআর এইচএস কোড সংক্রান্ত জটিলতা নিরসনের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে। নতুন প্রক্রিয়ায় ৮ ডিজিটের মধ্যে প্রথম ৪ ডিজিট মিললেই কাস্টমস কর্তৃপক্ষ শুল্কায়ন সম্পন্ন করবে।
বিনিয়োগ সমন্বয় কমিটির আন্তর্জাতিক বিষয়ক বিশেষ দূত লুৎফে সিদ্দিকী বলেন, “এসএমই খাত আমাদের অর্থনীতিতে বিশাল অবদান রাখে। তাদের কণ্ঠ বড় ব্যবসার মতো জোরালো না হলেও সরকারকে তাদের ব্যবসা সহজ করার জন্য অর্থায়ন থেকে পেমেন্ট এবং লজিস্টিকস পর্যন্ত সহায়ক ভূমিকা পালন করতে হবে।”


