গণভোট প্রসঙ্গে শিবির সভাপতির মন্তব্য: ‘জাতীয় নির্বাচনের আগে বা পরে হলে তা হবে রাজনৈতিক প্রতারণা’

গণভোট প্রসঙ্গে শিবির সভাপতির মন্তব্য: ‘জাতীয় নির্বাচনের আগে বা পরে হলে তা হবে রাজনৈতিক প্রতারণা’

রাজনীতি ডেস্ক

ইসলামী ছাত্রশিবিরের সভাপতি জাহিদুল ইসলাম বলেছেন, জাতীয় নির্বাচনের আগে বা পরে গণভোট আয়োজন করা হলে তা হবে জনগণের সঙ্গে “নিরেট রাজনৈতিক প্রতারণা”। শনিবার (১ নভেম্বর) সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে এক পোস্টে তিনি এই মন্তব্য করেন।

ফেসবুক পোস্টে তিনি জুলাই মাসকে “আমূল পরিবর্তনের প্রতীক” হিসেবে উল্লেখ করেন এবং অন্তর্বর্তী সরকারের তিনটি প্রধান দায়িত্ব হিসেবে উল্লেখ করেন—গণহত্যার বিচার, রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান সংস্কার এবং নিরপেক্ষ ও সবার কাছে গ্রহণযোগ্য একটি জাতীয় নির্বাচন আয়োজন।

জাহিদুল ইসলাম অভিযোগ করেন, জুলাই গণহত্যার বিচারিক কার্যক্রম অত্যন্ত ধীরগতিতে এগোচ্ছে। তাঁর দাবি, পর্যাপ্ত তথ্য–প্রমাণ থাকা সত্ত্বেও এখনো কোনো রায় ঘোষণা করা হয়নি, ফলে শহীদ পরিবারের সদস্যরা দীর্ঘদিন অপেক্ষায় রয়েছেন।

রাষ্ট্রীয় সংস্কারের প্রসঙ্গে তিনি বলেন, গত এক বছরে সংস্কার বিষয়ে আলোচনা শুরু হলেই বিভিন্ন পক্ষের নেতিবাচক মনোভাব লক্ষ্য করা গেছে। তাঁর ভাষায়, কিছু মহল মনে করছে সংস্কারের অধিকার কেবল আগের শাসকগোষ্ঠীর ছিল বা ভবিষ্যতে তাদেরই থাকবে, অন্যদের এ বিষয়ে কথা বলার বা কাজ করার সুযোগ নেই।

ঐকমত্য কমিশনের কার্যক্রম নিয়েও সমালোচনা করেন শিবির সভাপতি। তিনি বলেন, “ঐকমত্য কমিশনের নামে রাষ্ট্রীয় অর্থ ব্যয়ে একটি সনদ তৈরি হয়েছে এবং তা নিয়ে প্রকাশ্যে স্বাক্ষরও দেওয়া হয়েছে। কিন্তু আশ্চর্যের বিষয়, সেটিকে এখনই আইনি স্বীকৃতি দেওয়া যাবে না বলা হচ্ছে।” তাঁর মতে, অন্তর্বর্তী সরকারের গণভোট আয়োজনের ঘোষণা রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত হতে পারে, এবং সরকার যদি কোনো দলের চাপে জুলাই সনদকে আইনি ভিত্তি দিতে গণভোট থেকে সরে আসে, তাহলে তা দেশের জন্য “অশুভ ইঙ্গিত” বহন করবে।

নির্বাচন প্রসঙ্গে জাহিদুল ইসলাম বলেন, নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অনেকাংশে সংস্কার বাস্তবায়নের ওপর নির্ভর করছে। তবে, তাঁর দাবি, অন্তর্বর্তী সরকারের কয়েকজন উপদেষ্টা ও প্রশাসনের একটি অংশ নিরপেক্ষ নির্বাচনে বাধা সৃষ্টির চেষ্টা করছে। তিনি সতর্ক করে বলেন, “যারা নিরপেক্ষ নির্বাচনের পথে বাধা সৃষ্টি করছে, তাদের খুনি হাসিনার পরিণতির কথা স্মরণ রাখা উচিত।”

পোস্টের শেষাংশে তিনি বলেন, জুলাই শুধুমাত্র ক্ষমতার পরিবর্তনের প্রতীক নয়; এটি প্রজন্মের আদর্শিক জাগরণের প্রতিফলন। তাঁর ভাষায়, “জুলাই মানে আমূল পরিবর্তন।”

রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, ইসলামী ছাত্রশিবির সভাপতির এই মন্তব্যে অন্তর্বর্তী সরকারের কার্যক্রম ও গণভোট প্রক্রিয়া নিয়ে বিরোধী পক্ষের সংশয় আরও স্পষ্ট হলো। গণভোটের বিষয়ে সরকার এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো তারিখ বা কাঠামো ঘোষণা করেনি। তবে সরকারের নীতিনির্ধারক মহল বলছে, জাতীয় নির্বাচন প্রক্রিয়ার সুষ্ঠুতা নিশ্চিত করতেই গণভোটের পরিকল্পনা বিবেচনায় রয়েছে।

বর্তমানে অন্তর্বর্তী সরকারের অধীনে জুলাই গণহত্যা–সংক্রান্ত মামলার বিচার কার্যক্রম, প্রশাসনিক সংস্কার ও নির্বাচন প্রস্তুতি—এই তিনটি বিষয়কে ঘিরে রাজনৈতিক অঙ্গনে ব্যাপক আলোচনা চলছে। বিশ্লেষকদের ধারণা, গণভোট সংক্রান্ত সিদ্ধান্তের ওপরই আগামী দিনের রাজনৈতিক পরিস্থিতির গতি অনেকাংশে নির্ভর করবে।

রাজনীতি