রাজনৈতিক ডেস্ক
জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দেশের সবগুলো আসনে প্রার্থী দেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে। দলটির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম জানিয়েছেন, তারা ৩০০ আসন ধরে নির্বাচনী পরিকল্পনা এগিয়ে নিচ্ছেন এবং নিজে ঢাকা থেকে নির্বাচন করবেন। চলতি মাসেই প্রার্থীদের তালিকা প্রকাশের সম্ভাবনাও রয়েছে।
রোববার (২ নভেম্বর) দুপুরে রাজধানীর বাংলামোটরে এনসিপির অস্থায়ী কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ ব্রিফিংয়ে নাহিদ ইসলাম এসব তথ্য জানান।
এসময় তিনি বলেন, “আমরা ৩০০ আসন ধরে এগোচ্ছি। আমি ঢাকা থেকেই প্রার্থী হবো। কে কোন আসনে দাঁড়াবে, সেই প্রার্থী তালিকা আমরা এ মাসেই দিতে পারি।”
তিনি আরও বলেন, জামায়াতে ইসলামীর সাম্প্রতিক রাজনৈতিক অবস্থান থেকে মনে হচ্ছে, তারা নির্বাচন পেছানোর কোনো অভিসন্ধি রাখছে কি না, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। বিএনপি ও জামায়াতের প্রসঙ্গে নাহিদ ইসলাম বলেন, “এক দল সংস্কার ভেস্তে দিচ্ছে, আরেক দল নির্বাচন পিছিয়ে দিতে চাইছে। আমরা এর কোনোটি চাই না। আমরা চাই যথাসময়ে নির্বাচন হোক এবং জুলাই সনদ আইনি ভিত্তি পাক।”
নাহিদ ইসলাম আহ্বান জানান, বিএনপি-জামায়াতসহ সব রাজনৈতিক দল যেন ঐক্যবদ্ধভাবে নির্বাচনমুখী পরিবেশ তৈরি করে। তার মতে, বর্তমান রাজনৈতিক অচলাবস্থা থেকে উত্তরণের জন্য দলগুলোর সমঝোতা প্রয়োজন।
গণভোটের বিষয়ে তিনি বলেন, “গণভোট নির্বাচনের আগে বা নির্বাচনের দিন—যেকোনো সময় হতে পারে। এটি কখন হবে সেটি মূল বিষয় নয়; বরং আদেশ জারি ও বাস্তবায়ন করাটাই প্রধান বিষয়।”
‘জুলাই সনদ’ প্রসঙ্গে এনসিপি আহ্বায়ক বলেন, “এটি যদি প্রেসিডেন্ট অফিস থেকে জারি হয়, তাহলে এর আইনি বা রাজনৈতিক ভিত্তি তৈরি হবে না। বরং জুলাই গণঅভ্যুত্থানের চেতনার পরিপন্থী হবে। তাই এই সনদ প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের মাধ্যমেই জারি করতে হবে।”
ভারতের ভূমিকা প্রসঙ্গে নাহিদ ইসলাম বলেন, “গত ১৬ বছরে আওয়ামী লীগ জনগণের ভোটাধিকার হরণ করে ক্ষমতায় টিকে ছিল, যেখানে ভারতের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ সমর্থন ছিল। ভারত যদি বাংলাদেশের সঙ্গে সুসম্পর্ক চায়, তবে তাদের উচিত হবে আওয়ামী লীগের দৃষ্টিকোণ থেকে বাংলাদেশকে দেখা বন্ধ করা এবং সরাসরি জনগণের সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপন করা।”
তিনি বলেন, “ভারত সবসময় বাংলাদেশের রাজনীতিতে প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা করেছে। এখন সময় এসেছে সমতা ও মর্যাদার ভিত্তিতে সম্পর্ক গড়ে তোলার। নদী ও সীমান্ত হত্যার মতো ঝুলে থাকা বিষয়গুলো সমাধান করতে হবে।”
নাহিদ ইসলাম আরও বলেন, “গণহত্যাকারীদের আশ্রয় দিয়ে ভারত ভুল বার্তা দিয়েছে। শেখ হাসিনাকে আশ্রয় দেওয়ার মাধ্যমে তারা গণহত্যাকারীদের পক্ষে অবস্থান নিয়েছে। ভারত যতদিন জুলাই গণঅভ্যুত্থান প্রসঙ্গে তার অবস্থান স্পষ্ট না করছে, ততদিন বাংলাদেশের জনগণের সঙ্গে উষ্ণ সম্পর্ক পুনর্গঠন সম্ভব নয়।”
তিনি বলেন, এনসিপি সংস্কার ও জাতীয় পুনর্গঠনের রাজনীতিতে বিশ্বাসী। “সংস্কারের পক্ষে কেউ না থাকলে তাদের সঙ্গে জোট করা সম্ভব নয়। আমরা আমাদের মতো প্রস্তুতি নিচ্ছি। মৌলিক দাবি হলো—সংস্কার, আওয়ামী ফ্যাসিবাদ থেকে দেশকে মুক্ত করা এবং বৈদেশিক আধিপত্যবাদ থেকে বাংলাদেশকে বের করে আনা।”
দলের ভবিষ্যৎ ঐক্যের সম্ভাবনা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “আমাদের দাবির সঙ্গে যার অবস্থান কাছাকাছি, তাদের সঙ্গে ঐক্য বা সমঝোতা হতে পারে। দরজা খোলা আছে, তবে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হয়নি।”


