পরিবেশ রক্ষা করে সমন্বিত যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন ত্বরান্বিত করার আহ্বান প্রধান উপদেষ্টার

পরিবেশ রক্ষা করে সমন্বিত যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন ত্বরান্বিত করার আহ্বান প্রধান উপদেষ্টার

জাতীয়  ডেস্ক

প্রকৃতি, পরিবেশ ও নদীকে নেতিবাচক প্রভাব থেকে মুক্ত রেখে সড়ক, রেল, বিমান ও নৌপথের সম্মিলিত উন্নয়ন ত্বরান্বিত করার আহ্বান জানিয়েছেন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস।

রোববার (২ নভেম্বর) রাজধানীর রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় ‘সেন্ট্রাল ইন্টিগ্রেটেড মাল্টিমোডাল ট্রান্সপোর্ট সেক্টর মাস্টার প্ল্যান অব বাংলাদেশ’ শীর্ষক প্রান্তিক মূল্যায়ন ও কৌশলগত পরিকল্পনা বিষয়ক আন্তঃমন্ত্রণালয় বৈঠকে তিনি এ আহ্বান জানান।

বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন পরিকল্পনা উপদেষ্টা ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ, সড়ক পরিবহন ও সেতু এবং রেলপথ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান, বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন, নৌপরিবহন উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) ড. এম সাখাওয়াত হোসেন, স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া, সড়ক ও রেল মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী ড. শেখ মইনউদ্দিন, বিডা ও বেজার নির্বাহী চেয়ারম্যান চৌধুরী আশিক মাহমুদ বিন হারুন এবং ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী ফয়েজ আহমদ তৈয়্যবসহ সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের সচিব ও উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।

বৈঠকে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, দেশের যোগাযোগ ব্যবস্থা বর্তমানে অগোছালো অবস্থায় রয়েছে। এটি দ্রুত শৃঙ্খলায় না আনলে সামগ্রিক অর্থনীতি চাপে পড়বে। তিনি বলেন, “আমাদেরকে উন্নয়ন করতে হবে পরিবেশের কোনো ক্ষতি না করে। নদীর ওপর আঘাত করা যাবে না, কারণ পানি আমাদের জন্য বিরাট সম্পদ।”

সভায় সড়ক ও জনপথ বিভাগ প্রাথমিক কৌশলগত পরিকল্পনা উপস্থাপন করে, যা সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের সমন্বয়ে তৈরি হয়। এতে দেশের বিদ্যমান সড়ক, রেল ও নৌপরিবহন ব্যবস্থার সমন্বয় ঘটিয়ে একটি টেকসই ও কার্যকর যোগাযোগ কাঠামো তৈরির রূপরেখা তুলে ধরা হয়।

প্রস্তাবিত পরিকল্পনায় বলা হয়, বর্তমান রেল, সড়ক ও নৌপথের যথাযথ ব্যবহার এবং প্রয়োজন অনুযায়ী সম্প্রসারণের মাধ্যমে জাতীয় যোগাযোগ নেটওয়ার্কে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি আনা সম্ভব। এর মাধ্যমে দেশের পণ্য পরিবহন, শিল্পাঞ্চল সংযোগ এবং আঞ্চলিক যোগাযোগ ব্যবস্থায় নতুন গতি আসবে।

প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ইউনূস বলেন, “এই পরিকল্পনা প্রাথমিকভাবে একটি শক্ত ভিত্তি দিয়েছে। এখন এটিকে বাস্তবায়নের জন্য কার্যকর উদ্যোগ নিতে হবে।” তিনি আরও বলেন, “পুরো পরিকল্পনাটি অর্থনৈতিক সমৃদ্ধিকে সামনে রেখে তৈরি করতে হবে। শুধু অভ্যন্তরীণ নয়, আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক যোগাযোগ ব্যবস্থাকেও গুরুত্ব দিতে হবে।”

তিনি নদীকেন্দ্রিক যোগাযোগের ওপর গুরুত্বারোপ করে বলেন, “নদীগুলো আমাদের প্রাণ। তাই নদীর প্রাকৃতিক প্রবাহ ও স্বাস্থ্যের ক্ষতি না করে উন্নয়ন করতে হবে।”

বৈঠকে বিশেষ সহকারী ড. শেখ মইনউদ্দিন বলেন, যোগাযোগ ব্যবস্থার জন্য একটি সামষ্টিক মডেল গড়ে তোলার প্রচেষ্টা চলছে, যাতে অর্থনৈতিক লাইফলাইন গড়ে ওঠে। পরিকল্পনা উপদেষ্টা ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ বলেন, “যেসব স্থানে অল্পসংখ্যক সড়ক নির্মাণ করলেই পুরো অঞ্চল জাতীয় কানেকটিভিটিতে যুক্ত হবে, সেখানে দ্রুত পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে হবে।”

স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ জানান, স্থানীয় সরকার বিভাগের কার্যক্রম আরও সুসংগঠিত করতে একটি ‘প্ল্যানার্স উইং’ গঠনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

বিডা চেয়ারম্যান আশিক চৌধুরী বৈঠকে বলেন, “২০৩০ সালের মধ্যে চট্টগ্রামে তিনটি নতুন বন্দর চালু হবে। এ কারণে এসব বন্দর থেকে কার্যকর সড়ক সংযোগ স্থাপনে দ্রুত পদক্ষেপ নিতে হবে।”

বৈঠকে অংশগ্রহণকারী মন্ত্রণালয়গুলোর প্রতিনিধিরা একমত হন যে, সমন্বিত পরিবহন পরিকল্পনা বাস্তবায়ন হলে দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ত্বরান্বিত হবে এবং আঞ্চলিক যোগাযোগ উন্নয়নের মাধ্যমে বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে আরও শক্ত অবস্থান তৈরি করতে পারবে।

জাতীয় শীর্ষ সংবাদ