গণভোটের তারিখ ও বিষয়বস্তু নির্ধারণে দ্রুত সিদ্ধান্তের আহ্বান সরকারের উপদেষ্টা পরিষদের

গণভোটের তারিখ ও বিষয়বস্তু নির্ধারণে দ্রুত সিদ্ধান্তের আহ্বান সরকারের উপদেষ্টা পরিষদের

জাতীয় ডেস্ক

ঢাকা, সোমবার, ৩ নভেম্বর ২০২৫:
গণভোটের তারিখ ও বিষয়বস্তু নির্ধারণে দ্রুত চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণের প্রয়োজনীয়তার ওপর গুরুত্ব আরোপ করেছে সরকারের উপদেষ্টা পরিষদ। এ বিষয়ে ঐকমত্য কমিশনের প্রস্তাবগুলো বিবেচনা করে জরুরি ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত নিতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানানো হয়েছে। একই সঙ্গে ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলনের দীর্ঘদিনের মিত্র রাজনৈতিক দলগুলোকে আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে নিজেদের মধ্যে আলোচনা করে সরকারের জন্য ঐক্যবদ্ধ দিকনির্দেশনা প্রদানের আহ্বান জানানো হয়েছে।

সোমবার (৩ নভেম্বর) রাজধানীর তেজগাঁওয়ে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের ‘করবী হলে’ আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা জানান আইন উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল।

ড. আসিফ নজরুল বলেন, “ঐকমত্য প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন ও সংশ্লিষ্ট রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতি কৃতজ্ঞতা জানানো হয়েছে। কমিশনের প্রস্তাবিত জুলাই জাতীয় সনদ সংবিধান সংশোধন আদেশ, গণভোটের আয়োজন ও তার বিষয়বস্তু নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা সভায় অনুষ্ঠিত হয়।”

সভায় উপদেষ্টা পরিষদ লক্ষ্য করে যে, ঐকমত্য কমিশনের আলোচনার পরও কয়েকটি সংস্কার প্রস্তাবের বিষয়ে এখনো ভিন্নমত বিদ্যমান। বিশেষ করে, গণভোট কবে অনুষ্ঠিত হবে এবং এর বিষয়বস্তু কী হবে—এই দুটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে মতভেদ স্পষ্ট। এই পরিস্থিতিতে সভা থেকে উদ্বেগ প্রকাশ করা হয় এবং দ্রুত সিদ্ধান্তের আহ্বান জানানো হয়।

আইন উপদেষ্টা আরও জানান, সরকারের উপদেষ্টা পরিষদ মনে করে, গণভোটের সময়সূচি ও বিষয়বস্তু নির্ধারণ, এবং জুলাই সনদের আলোচনায় উঠে আসা ভিন্নমত মোকাবিলায় সমন্বিত পদক্ষেপ গ্রহণ অপরিহার্য। তিনি বলেন, “বর্তমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে সময়ক্ষেপণের কোনো সুযোগ নেই; তাই দ্রুত সিদ্ধান্ত গ্রহণের মধ্য দিয়েই স্থিতিশীলতা ও গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার ধারাবাহিকতা বজায় রাখা সম্ভব।”

সভায় আলোচনার প্রেক্ষিতে রাজনৈতিক দলগুলোকে নিজস্ব উদ্যোগে আলোচনার মাধ্যমে ঐকমত্যে পৌঁছে সরকারের জন্য দিকনির্দেশনা তৈরির অনুরোধ জানানো হয়। উপদেষ্টা পরিষদের মতে, রাজনৈতিক দলগুলো থেকে সুস্পষ্ট দিকনির্দেশনা পেলে সরকারের পক্ষে সিদ্ধান্ত গ্রহণ অনেক সহজ হবে।

এছাড়া বৈঠকে ২০২৬ সালের ফেব্রুয়ারি মাসের প্রথমার্ধে জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানের বিষয়ে সরকারের পূর্বঘোষিত অবস্থান পুনর্ব্যক্ত করা হয়। সভায় অংশগ্রহণকারী উপদেষ্টারা মনে করেন, গণভোট ও আসন্ন নির্বাচনের প্রস্তুতি একই ধারাবাহিকতার মধ্যে রেখে জাতীয় ঐক্য ও গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে সুদৃঢ় করা প্রয়োজন।

সভায় আরও আলোচনা হয়, গণভোটের ফলাফল জাতীয় সনদ বাস্তবায়নের পথে একটি গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক হতে পারে। তবে সেই প্রক্রিয়া যাতে রাজনৈতিক মতভেদে জটিল না হয়, সে বিষয়ে সকল পক্ষের দায়িত্বশীল ভূমিকা প্রত্যাশা করা হয়।

উপদেষ্টা পরিষদ সভার সার্বিক পর্যালোচনায় উপসংহার টানে যে, ঐকমত্য কমিশনের প্রস্তাবের ভিত্তিতে দ্রুত সিদ্ধান্ত ও রাজনৈতিক সমঝোতা অর্জন না হলে সংস্কার প্রক্রিয়া বিলম্বিত হতে পারে, যা গণতান্ত্রিক রূপান্তর প্রচেষ্টার গতি শ্লথ করবে। তাই গণভোটের তারিখ, বিষয়বস্তু ও জুলাই সনদের ভিন্নমত সমাধানে জরুরি পদক্ষেপ গ্রহণের প্রস্তাবই সভার প্রধান সিদ্ধান্ত হিসেবে গৃহীত হয়।

জাতীয়