রাজনীতি ডেস্ক
ঢাকা, ৩ নভেম্বর ২০২৫: বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেছেন, দেশের চারপাশে সুপ্ত আকাঙ্ক্ষায় গুপ্ত স্বৈরাচার ওত পেতে আছে। তিনি দলীয় নেতা-কর্মীদের সতর্ক থেকে একক প্রার্থীর বিজয় নিশ্চিত করতে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার আহ্বান জানিয়েছেন।
রোববার রাতে রাজধানীর গুলশানের হোটেল লেকশোরে বিএনপির প্রবাসী নেতা-কর্মীদের প্রাথমিক সদস্যপদ নবায়ন ও নতুন সদস্য গ্রহণ কর্মসূচির অংশ হিসেবে দলের ওয়েবসাইটে অনলাইন পেমেন্ট গেটওয়ে উদ্বোধন অনুষ্ঠানে তিনি ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে এ আহ্বান জানান।
তারেক রহমান জানান, শিগগিরই বিএনপির একক প্রার্থীর নাম ঘোষণা করা হবে। তিনি বলেন, “পর্যায়ক্রমে বিভিন্ন আসনে দলের মনোনীত প্রার্থীদের নাম জানানো হবে। দল যাকে মনোনয়ন দেবে, তাকে বিজয়ী করতে সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে।”
তিনি নেতা-কর্মীদের উদ্দেশে বলেন, “আপনাদের চারপাশে সুপ্ত আকাঙ্ক্ষা নিয়ে গুপ্ত স্বৈরাচার ওত পেতে আছে। নিজেদের মধ্যে কোনো রেষারেষি, বিবাদ বা বিভক্তি তৈরি করা ঠিক হবে না, যাতে প্রতিপক্ষ সুযোগ নিতে পারে।”
অনুষ্ঠানে বিএনপির কোষাধ্যক্ষ রশিদুজ্জামান মিল্লাত স্বাগত বক্তব্য রাখেন। তারেক রহমান বলেন, “প্রতি সংসদীয় আসনে একাধিক প্রার্থী মনোনয়ন প্রত্যাশা করছেন, যা একটি জনপ্রিয় দলের জন্য স্বাভাবিক বিষয়। তবে সবাইকে দলের সিদ্ধান্তকে শ্রদ্ধা করতে হবে। দল যাকে মনোনয়ন দেবে, তিনি জয়ী হলে দেশ ও গণতন্ত্রই জয়ী হবে।”
তিনি আরও বলেন, “স্বাধীনতার ঘোষকের প্রতি অমর্যাদা বা মাদার অব ডেমোক্রেসির অবদান প্রশ্নবিদ্ধ করার মতো আচরণ থেকে সবাইকে বিরত থাকতে হবে। দলের কর্মী হিসেবে জনগণের সঙ্গে থাকতে হবে ও তাদের আস্থা বজায় রাখতে হবে।”
তারেক রহমান জানান, অন্তর্বর্তী সরকারের অধীনে আগামী ফেব্রুয়ারিতে জাতীয় নির্বাচন আয়োজনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে এবং নির্বাচন কমিশন যথাসময়ে তফসিল ঘোষণা করবে। তিনি বলেন, “গণতন্ত্রকামী জনগণকে সঙ্গে নিয়ে বিএনপি সব ধরনের প্রস্তুতি সম্পন্ন করছে। তিনশ আসনে দলীয় ও সমর্থিত প্রার্থীদের মনোনয়ন প্রায় চূড়ান্ত।”
রাজপথে ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলনে অংশ নেওয়া অন্যান্য রাজনৈতিক দলের প্রার্থীদেরও বিএনপি সমর্থন দেবে বলে জানান তিনি। এ প্রসঙ্গে তারেক রহমান বলেন, “এই বাস্তবতায় কিছু আসনে হয়তো বিএনপি দলীয় প্রার্থী বঞ্চিত হতে পারেন, তবে দেশ ও গণতন্ত্রের স্বার্থে এই বাস্তবতাকে মেনে নিতে হবে।”
তিনি দলীয় নেতাকর্মীদের স্মরণ করিয়ে দেন, “ব্যক্তির চেয়ে দল বড়, দলের চেয়ে দেশ বড়।” তিনি অভিযোগ করেন, “অতীতে স্বৈরাচারী শাসনে নির্বাচনী ব্যবস্থা ধ্বংস করা হয়েছিল। এখনো বিএনপির বিজয় ঠেকাতে অপপ্রচার ও অপকৌশল চলছে। তবে জাতীয়তাবাদী শক্তিতে বিশ্বাসী জনগণ ঐক্যবদ্ধ থাকলে কোনো ষড়যন্ত্রই বিএনপিকে জনগণ থেকে বিচ্ছিন্ন করতে পারবে না।”
নির্বাচন আয়োজন নিয়ে জনমনে সৃষ্ট সংশয় প্রসঙ্গে তারেক রহমান বলেন, “এমন প্রশ্নের উদ্ভব গণতন্ত্রের উত্তরণের পথে সংকট সৃষ্টি করতে পারে। বিএনপি শুরু থেকেই ফ্যাসিবাদবিরোধী জাতীয় ঐক্য বজায় রাখার স্বার্থে সর্বোচ্চ সহযোগিতা করছে। কিন্তু নিত্যনতুন শর্ত আরোপ করে গণতন্ত্রের অগ্রযাত্রাকে জটিল করে তোলা হচ্ছে, যা নিয়ে সতর্ক থাকা জরুরি।”
তিনি বলেন, “কৌশল ও অপকৌশলের মধ্যে পার্থক্য বুঝতে না পারলে অগণতান্ত্রিক শক্তির কাছে আত্মসমর্পণের ঝুঁকি থাকে। দেশের গণতান্ত্রিক দলগুলোকে এই বিপদের কথা মনে রাখতে হবে।”
প্রবাসী ভোটাধিকার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “এবার প্রথমবারের মতো প্রবাসীদের ভোটের সুযোগ সৃষ্টির জন্য নির্বাচন কমিশনকে ধন্যবাদ জানাই। ভবিষ্যতে বিএনপি ক্ষমতায় গেলে এই প্রক্রিয়া আরও সহজ করা হবে।”
নারী নিরাপত্তা ইস্যুতে তিনি বলেন, “দেশে নারীদের প্রতি সহিংসতা উদ্বেগজনকভাবে বেড়েছে। আগস্ট মাসে ৯৩ জন নারী নির্যাতনের শিকার হয়েছেন, যার মধ্যে ১৪টি ধর্ষণ ও সাতটি ধর্ষণের পর হত্যার ঘটনা ঘটেছে। নারী ও শিশুদের নিরাপত্তা নিশ্চিতে রাষ্ট্র, সমাজ ও রাজনৈতিক দলের সবাইকে ভূমিকা রাখতে হবে।”
আলোচনা সভায় বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সভাপতিত্বে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, আবদুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, অধ্যাপক জাহিদ হোসেন, যুগ্ম মহাসচিব হুমায়ুন কবিরসহ অন্য নেতারা বক্তব্য রাখেন। অনুষ্ঠানের সঞ্চালনা করেন নির্বাহী কমিটির সদস্য আবদুস সাত্তার পাটোয়ারি।


