অর্থনীতি ডেস্ক
নতুন টেলিকম নীতিমালার খসড়া সংশোধনের দাবি জানিয়ে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি) কার্যালয়ের সামনে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছেন দেশের ইন্টারনেট সেবাদাতারা। তাদের অভিযোগ, প্রস্তাবিত নীতিমালা কার্যকর হলে গ্রাহক পর্যায়ে ইন্টারনেটের দাম প্রায় ২০ শতাংশ এবং ব্যবসায়ী পর্যায়ে ১৪ শতাংশ পর্যন্ত বৃদ্ধি পেতে পারে, যা খাতটির টেকসই উন্নয়নে নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে।
সোমবার (২৭ অক্টোবর) বিকেল ৩টা থেকে রাজধানীর ইস্কাটনে বিটিআরসি ভবনের সামনে জড়ো হতে থাকেন ইন্টারনেট ব্যবসায়ীরা। পরে তারা ভবনের মূল প্রবেশমুখে অবস্থান নেন এবং নীতিমালা সংশোধনের দাবিতে শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি পালন করেন।
অংশগ্রহণকারীরা বলেন, প্রস্তাবিত টেলিকম নীতিমালায় যে রাজস্ব ভাগাভাগি (রেভিনিউ শেয়ার) ও অতিরিক্ত লাইসেন্স ফি নির্ধারণ করা হয়েছে, তা বাস্তবায়িত হলে ইন্টারনেট সেবা ব্যয় বাড়বে এবং গ্রাহক পর্যায়ে অন্তত ২০ শতাংশ পর্যন্ত মূল্য বৃদ্ধি পাবে। তাদের মতে, এটি শুধু ব্যবসার পরিবেশকে সংকুচিত করবে না, বরং দেশের ডিজিটাল রূপান্তরের অগ্রযাত্রাকেও বাধাগ্রস্ত করবে।
ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, নতুন গাইডলাইনে মোবাইল অপারেটরদের তুলনামূলক বেশি সুবিধা দেওয়া হয়েছে, যা ক্ষুদ্র ও মাঝারি ইন্টারনেট সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে বৈষম্য তৈরি করবে। তারা দাবি জানান, সরকার যেন গাইডলাইনটি পুনর্বিবেচনা করে এবং সকল পক্ষের মতামত নিয়ে চূড়ান্ত নীতিমালা প্রণয়ন করে।
এর আগে, রাজধানীর মহাখালীতে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (আইএসপিএবি) নতুন নীতিমালা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে। সংগঠনের পক্ষ থেকে বলা হয়, প্রস্তাবিত গাইডলাইনে উচ্চ লাইসেন্স ফি, অতিরিক্ত রাজস্ব ভাগাভাগি এবং সামাজিক দায়বদ্ধতা তহবিলে অতিরিক্ত অর্থ প্রদানের শর্ত আরোপ করা হয়েছে। এতে সেবা প্রদানকারীদের পরিচালন ব্যয় বেড়ে যাবে, যার প্রভাব সরাসরি গ্রাহকের ওপর পড়বে।
আইএসপিএবির সভাপতি আমিনুল হাকিম জানান, নতুন নীতিমালা অনুসারে ঢাকায় ইন্টারনেট সেবার মূল্য প্রায় ১১ শতাংশ এবং ঢাকার বাইরে গ্রামীণ এলাকায় ১৮.৪০ শতাংশ পর্যন্ত বাড়তে পারে। তিনি বলেন, “এই নীতিমালা দেশের জনগণের প্রত্যাশা ও ডিজিটাল বাংলাদেশের লক্ষ্য পূরণের পথে বাধা সৃষ্টি করবে। সরকারকে অবশ্যই খাতটির বাস্তব চিত্র বিবেচনা করে গাইডলাইনটি সংশোধন করতে হবে।”
খাত সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞদের মতে, প্রস্তাবিত ফি ও রাজস্ব ভাগাভাগির কাঠামো বাস্তবায়িত হলে স্থানীয় ক্ষুদ্র উদ্যোক্তারা প্রতিযোগিতায় টিকতে পারবেন না। এতে ইন্টারনেট অবকাঠামো উন্নয়ন ও সেবা সম্প্রসারণের গতি শ্লথ হতে পারে।
এদিকে বিটিআরসি সূত্রে জানা গেছে, টেলিকম খাতের খসড়া নীতিমালা এখনো পর্যালোচনার পর্যায়ে রয়েছে এবং সংশ্লিষ্ট অংশীজনদের মতামত নেওয়ার প্রক্রিয়া চলছে। নীতিমালার চূড়ান্ত খসড়া প্রকাশের আগে স্টেকহোল্ডারদের সুপারিশ বিবেচনা করা হবে বলে জানানো হয়েছে।
ইন্টারনেট ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, যদি তাদের প্রস্তাবিত সংশোধনী বিবেচনা করা না হয়, তবে তারা আগামী সপ্তাহে সারাদেশব্যাপী আরও কর্মসূচি ঘোষণা করবেন।


