ভয়াবহ ভূমিকম্পে আফগানিস্তানের ঐতিহাসিক নীল মসজিদ ক্ষতিগ্রস্ত, নিহত অন্তত ১০

ভয়াবহ ভূমিকম্পে আফগানিস্তানের ঐতিহাসিক নীল মসজিদ ক্ষতিগ্রস্ত, নিহত অন্তত ১০

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

আফগানিস্তানের উত্তরাঞ্চলীয় শহর মাজার-ই-শরীফে সোমবার রাতের ভয়াবহ ভূমিকম্পে ঐতিহাসিক নীল মসজিদটি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। স্থানীয় সময় রাত প্রায় ১টার দিকে ৬ দশমিক ৩ মাত্রার এই ভূমিকম্পে শহরজুড়ে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। দেশটির বিভিন্ন অঞ্চলে ভবন ধসের ঘটনায় অন্তত ১০ জন নিহত ও দেড় শতাধিক মানুষ আহত হয়েছেন বলে প্রাথমিকভাবে জানা গেছে।

স্থানীয় প্রশাসন নিশ্চিত করেছে, মাজার-ই-শরীফের কেন্দ্রস্থলে অবস্থিত বিখ্যাত নীল মসজিদটি ভূমিকম্পে আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ইসলামী স্থাপত্যে নির্মিত এই মসজিদটি আফগানিস্তানের অন্যতম ঐতিহাসিক ও ধর্মীয় স্থাপনা হিসেবে পরিচিত।

ঐতিহাসিকভাবে নীল মসজিদটি হযরত আলী (রাঃ)-এর সমাধিস্থল হিসেবে স্থানীয়দের কাছে গভীর ধর্মীয় তাৎপর্য বহন করে। যদিও ইতিহাসবিদদের মতে, খলিফা হযরত আলী (রাঃ) ইরাকের কুফায় নিহত হওয়ার পর তাঁকে নাজাফে কবর দেওয়া হয়। অপরদিকে, আফগানিস্তানের কিছু স্থানীয় মানুষ বিশ্বাস করেন, শত্রুর হাত থেকে রক্ষার জন্য তাঁর মরদেহ গোপনে খোরাসান অঞ্চলে—অর্থাৎ বর্তমান মাজার-ই-শরীফ এলাকায়—সমাহিত করা হয়। তবে এই দাবির পক্ষে নির্ভরযোগ্য ঐতিহাসিক প্রমাণ পাওয়া যায়নি।

ভূমিকম্পে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাগুলোয় এখন ব্যাপক উদ্ধার অভিযান চলছে। দেশটির প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় প্রকাশিত এক ভিডিওতে দেখা গেছে, উদ্ধারকর্মীরা ধ্বংসস্তূপের নিচ থেকে আহতদের টেনে বের করছেন। একটি ভিডিওচিত্রে দেখা যায়, ধ্বংসস্তূপের ভেতর থেকে এক শিশু কন্যাকে জীবিত অবস্থায় উদ্ধার করা হয়, যদিও সে গুরুতর আহত।

রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আফগানিস্তানের উত্তরাঞ্চলে বারবার ভূমিকম্প হওয়ায় সাধারণ মানুষ চরম আতঙ্কের মধ্যে রয়েছে। মাজার-ই-শরীফসহ আশপাশের প্রদেশগুলোতে বহু বাড়িঘর ও স্থাপনা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত এলাকার অধিকাংশ বাড়ি কাঁচামাটির হওয়ায় ধসের আশঙ্কা বাড়ছে বলে জানিয়েছে স্থানীয় প্রশাসন।

ভূমিকম্পে বেঁচে যাওয়া এক নারী, মাজার-ই-শরীফের বাসিন্দা রাহিমা সিএনএনকে বলেন, “ভূমিকম্পের সময় আমার পরিবার ঘুমিয়ে ছিল। হঠাৎ কেঁপে ওঠার পর আমরা সবাই আতঙ্কে ঘর থেকে বের হয়ে আসি। আমার জীবনে এত প্রবল ভূমিকম্প আর কখনও অনুভব করিনি।”

আফগানিস্তানের দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, ক্ষয়ক্ষতির পূর্ণ পরিমাণ এখনো নির্ধারণ করা যায়নি। প্রাথমিকভাবে উদ্ধারকাজে সেনা, পুলিশ ও স্বেচ্ছাসেবকদের নিয়োজিত করা হয়েছে। ধ্বংসস্তূপের নিচে আরও বহু মানুষ আটকা থাকতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

বিশ্ব ঐতিহ্যবাহী স্থাপনা হিসেবে পরিচিত নীল মসজিদটি স্থানীয়ভাবে “মসজিদ-ই-শরীফ” বা “ব্লু মসক” নামে পরিচিত। এটি আফগানিস্তানের অন্যতম প্রধান পর্যটন ও ধর্মীয় আকর্ষণ কেন্দ্র। ভূমিকম্পে এর ক্ষয়ক্ষতি দেশের সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের জন্য এক গভীর আঘাত বলে মনে করা হচ্ছে।

ভূমিকম্পে ক্ষতিগ্রস্তদের উদ্ধার ও চিকিৎসায় আফগানিস্তান সরকার জরুরি ত্রাণ তৎপরতা জোরদার করেছে। আহতদের স্থানীয় হাসপাতালগুলোতে ভর্তি করা হয়েছে এবং আশপাশের জেলাগুলো থেকে চিকিৎসক ও স্বেচ্ছাসেবক পাঠানো হয়েছে। আন্তর্জাতিক সহায়তা সংস্থাগুলোকেও সম্ভাব্য মানবিক সহায়তার আহ্বান জানানো হয়েছে।

আন্তর্জাতিক