আরপিও চূড়ান্তের আগে রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আলোচনা জরুরি ছিল: সাইফুল হক

আরপিও চূড়ান্তের আগে রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আলোচনা জরুরি ছিল: সাইফুল হক

রাজনীতি ডেস্ক

ঢাকা, মঙ্গলবার, ৪ নভেম্বর ২০২৫: বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক বলেছেন, গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও) চূড়ান্ত করার আগে নির্বাচন কমিশনের (ইসি) উচিত ছিল রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আনুষ্ঠানিক আলোচনা করা। তিনি অভিযোগ করেন, ইসি এখনো সঠিকভাবে জানে না দেশে কোন কোন রাজনৈতিক দল রয়েছে এবং তাদের অবস্থান বা মতামত কী।

মঙ্গলবার রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি)-এর সঙ্গে সাক্ষাৎ শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এসব মন্তব্য করেন। সাইফুল হক বলেন, “যদি রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপ অনুষ্ঠিত হতো, তাহলে আরপিও নিয়ে বিভিন্ন প্রশ্ন উঠত এবং প্রয়োজনে তা সংশোধনের সুযোগ থাকত।”

তিনি বলেন, রাজনৈতিক দলগুলোর মতামত ছাড়া আরপিও চূড়ান্ত করা গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার পরিপন্থী। নির্বাচন কমিশনের উচিত ছিল সংশ্লিষ্ট দলগুলোর মতামত গ্রহণ করে চূড়ান্ত খসড়া প্রণয়ন করা, যাতে ভবিষ্যতে কোনো বিতর্ক বা অসন্তোষ না থাকে।

সাইফুল হক সংসদ নির্বাচনে প্রার্থীদের জামানত ৫০ হাজার টাকা নির্ধারণ এবং নির্বাচনী ব্যয়সীমা ৫০ লাখ টাকায় উন্নীত করার সমালোচনা করেন। তিনি বলেন, দেশের অর্থনৈতিক বাস্তবতা বিবেচনায় এই সিদ্ধান্ত বাস্তবসম্মত নয়। তার মতে, “এই সিদ্ধান্তের ফলে প্রান্তিক ও সাধারণ প্রার্থীদের জন্য নির্বাচনে অংশগ্রহণ করা আরও কঠিন হয়ে যাবে।”

তিনি আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেন, “নির্বাচনে যদি কালো টাকা, অবৈধ অর্থ ও প্রভাবশালী মাফিয়াদের প্রভাব বন্ধ করা না যায়, তাহলে আগামী সংসদ কালো টাকার মালিকদের ক্লাবে পরিণত হবে।” তিনি সতর্ক করেন যে, নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় টাকার প্রভাব বন্ধ না হলে প্রতিদ্বন্দ্বিতা কেবল ধনীদের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকবে, যা গণতান্ত্রিক ভারসাম্যকে ক্ষতিগ্রস্ত করবে।

নির্বাচন কমিশনের সক্ষমতা বৃদ্ধির ওপর জোর দিয়ে বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির এই নেতা বলেন, রিটার্নিং অফিসার ও সহকারী রিটার্নিং অফিসার নিয়োগে ইসির দক্ষ জনবল ব্যবহার করা উচিত। তিনি প্রস্তাব করেন, জনপ্রশাসন ক্যাডারের পাশাপাশি অন্যান্য ক্যাডারের অভিজ্ঞ ও যোগ্য কর্মকর্তাদের মধ্য থেকেও এসব পদে নিয়োগের বিষয়টি বিবেচনা করা যেতে পারে।

পোলিং অফিসার নিয়োগ প্রসঙ্গে সাইফুল হক বলেন, যেসব প্রতিষ্ঠান বা সংস্থার পেশাদারিত্ব ও নিরপেক্ষতা নিয়ে কোনো প্রশ্ন নেই, তাদের কাছ থেকে পোলিং অফিসার নিয়োগ করা হলে ভোটগ্রহণের মান উন্নত হবে। এছাড়া তিনি উল্লেখ করেন, নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর থেকেই গুরুত্বপূর্ণ নির্বাচন-সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়গুলোকে কমিশনের অধীনে আনা উচিত, যাতে নির্বাচন পরিচালনায় স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা যায়।

নির্বাচনে রাজনৈতিক দলগুলোর নিজস্ব প্রতীক ব্যবহারের বিষয়ে তিনি বলেন, নিবন্ধিত দলগুলো যদি নিজস্ব প্রতীক পায়, তাহলে সেই প্রতীকেই নির্বাচন করা তাদের রাজনৈতিক ও নৈতিক দায়িত্ব। তবে আসন্ন ফেব্রুয়ারি নির্বাচনের বাস্তবতা বিবেচনায় জোটগত প্রার্থীদের জন্য কিছুটা নমনীয়তা রাখা যেতে পারে বলে মত দেন তিনি। তার মতে, “বর্তমান নির্বাচনে জোটের প্রার্থী অন্য প্রতীকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে চাইলে সে সুযোগ থাকা উচিত, তবে পরবর্তী নির্বাচনে এ বিষয়ে স্পষ্ট বিধান প্রণয়ন করা যেতে পারে।”

সাইফুল হক বলেন, “আমরা চাই, নির্বাচন হোক অংশগ্রহণমূলক, প্রতিযোগিতামূলক ও স্বচ্ছ। এজন্য প্রক্রিয়াগত স্বচ্ছতা, প্রশাসনিক নিরপেক্ষতা এবং অর্থের প্রভাবমুক্ত পরিবেশ নিশ্চিত করতে হবে।” তিনি নির্বাচন কমিশনকে এসব বিষয়ে সক্রিয় ভূমিকা রাখার আহ্বান জানান।

রাজনীতি