খেলাধুলা ডেস্ক
ভারতের বিপক্ষে নারী ওয়ানডে বিশ্বকাপের ফাইনালে দক্ষিণ আফ্রিকার কিংবদন্তি ক্রিকেটারদের অনুপস্থিতি নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন দেশটির অভিনেত্রী, লেখক ও টেলিভিশন সঞ্চালক থানজা ভুর। মুম্বাইয়ের ডিওয়াই পাতিল স্টেডিয়ামে গত রোববার অনুষ্ঠিত ফাইনালে ভারতের কাছে ৫২ রানে হেরে রানার্সআপ হয় দক্ষিণ আফ্রিকা।
লরা উলভার্টের নেতৃত্বাধীন প্রোটিয়া দল ফাইনালে পরাজিত হওয়ার পর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এক ভিডিও বার্তায় থানজা ভুর বলেন, ‘দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে ফাইনালে কারা উপস্থিত ছিলেন? আমাদের সাবেক ক্রিকেটাররা কোথায় ছিলেন? যারা এই দেশকে ভালোবাসে, তারা কেউই মাঠে আসেননি। মনে হয়, এটা তাদের কাছে যথেষ্ট মর্যাদাপূর্ণ ইভেন্ট মনে হয়নি।’
ভারতের পক্ষে গ্যালারিতে উপস্থিত ছিলেন দেশটির ক্রিকেট কিংবদন্তিরা—সুনীল গাভাস্কার, শচীন টেন্ডুলকার, ভিভিএস লক্ষ্মণসহ সাম্প্রতিক বিশ্বকাপজয়ী অধিনায়ক রোহিত শর্মা। তারা স্বাগতিক নারী দলের প্রতি সরাসরি সমর্থন জানাতে মাঠে ছিলেন। বিপরীতে দক্ষিণ আফ্রিকার কোনো প্রাক্তন ক্রিকেটার বা ক্রীড়া ব্যক্তিত্বকে দেখা যায়নি।
এই অনুপস্থিতি নিয়ে আরও প্রশ্ন তোলেন থানজা ভুর। তিনি বলেন, ‘আমি হতাশ যে আমাদের ক্রীড়া মন্ত্রী পর্যন্ত ফাইনালে উপস্থিত ছিলেন না। এই মেয়েরা কঠোর পরিশ্রম করেছে, ভালো খেলেছে। কিন্তু যখন তারা গ্যালারিতে নিজেদের দেশের কাউকে সমর্থন দিতে দেখে না, তখন তাদের কেমন লাগে? তারা কি ভেবেছিলেন আমরা হারব? এই বার্তাই কি আগে থেকেই পাঠানো হয়েছিল?’
তবে দক্ষিণ আফ্রিকান ক্রিকেটারদের প্রতি হতাশা প্রকাশের পাশাপাশি ভারতীয় দলকে অভিনন্দন জানান থানজা ভুর। তিনি বলেন, ‘ভারত, তোমরা বিশ্বকাপ জিতেছ। তোমরা অভিনন্দনের যোগ্য। তোমরা ক্রিকেটে বাঁচো, নিশ্বাস নাও, প্রতিদিনের জীবনের অংশ তোমাদের জন্য ক্রিকেট। তোমরা প্রাপ্য জয় পেয়েছ।’
এবারের বিশ্বকাপে ভারতীয় মেয়েরা প্রথমবারের মতো কোনো বৈশ্বিক আসরে শিরোপা জিতেছে। ফাইনালে আগে ব্যাট করে ভারত সংগ্রহ করে ওয়ানডে বিশ্বকাপের ইতিহাসে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ২৯৮ রান। জবাবে দক্ষিণ আফ্রিকার অধিনায়ক লরা উলভার্ট ব্যক্তিগত শতক করলেও দলটি ২৪৬ রানে গুটিয়ে যায়। ফলে ৫২ রানের ব্যবধানে জয় নিশ্চিত করে ভারত।
ফাইনালের পর দক্ষিণ আফ্রিকার খেলোয়াড়দের চোখে বিষাদের অশ্রু ছিল স্পষ্ট। মাঠে ভারতের স্মৃতি মান্দানা, জেমিমাহ রদ্রিগেজ, রাধা যাদব ও টুর্নামেন্টসেরা দিপ্তি শর্মা গিয়ে সান্ত্বনা দেন উলভার্ট, মারিজান ক্যাপ, ক্লো ট্রায়ন ও নাদিনে ডি ক্লার্কদের।
এর আগে দুটি টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের ফাইনালেও হারের তিক্ত অভিজ্ঞতা ছিল দক্ষিণ আফ্রিকার। এবার ওয়ানডে সংস্করণেও একই পরিণতি হওয়ায় দলটির খেলোয়াড়রা গভীর হতাশায় নিমজ্জিত। বিশেষজ্ঞদের মতে, এই ধারাবাহিক ব্যর্থতা প্রোটিয়া নারী ক্রিকেটের মানসিক প্রস্তুতি ও কৌশলগত পরিকল্পনা নিয়ে নতুন করে ভাবার ইঙ্গিত দিচ্ছে।
অন্যদিকে, ভারতের নারী ক্রিকেটে এই জয় নতুন অধ্যায় সূচনা করেছে। টুর্নামেন্টের সেরা খেলোয়াড়ের স্বীকৃতি পাওয়া দিপ্তি শর্মা ছাড়াও দলের তরুণ তারকারা ব্যাট-বলে দারুণ পারফরম্যান্স দেখিয়েছেন। দেশের বিভিন্ন স্থানে ভারতীয় নারী দলের এই ঐতিহাসিক সাফল্য উদযাপিত হয়েছে উচ্ছ্বাসের সঙ্গে।
দক্ষিণ আফ্রিকার পক্ষ থেকে এখনো কোনো আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া না এলেও থানজা ভুরের বক্তব্য সামাজিক মাধ্যমে ব্যাপক আলোচনার জন্ম দিয়েছে। অনেক সমর্থকই তার সঙ্গে একমত হয়ে মনে করছেন, নারী ক্রিকেটারদের সমর্থনে প্রাক্তনদের উপস্থিত থাকা উচিত ছিল।
বিশ্লেষকরা বলছেন, এই ঘটনা দক্ষিণ আফ্রিকার ক্রীড়া সংস্কৃতিতে নারী খেলাধুলার প্রতি দৃষ্টিভঙ্গি ও স্বীকৃতি নিয়ে নতুন বিতর্ক উসকে দিয়েছে। ভবিষ্যতে নারী ক্রিকেটের বিকাশে সামাজিক ও প্রাতিষ্ঠানিক সমর্থন বৃদ্ধির দাবিও উঠছে।


