জাতীয় ডেস্ক
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী জানিয়েছেন, আসন্ন জাতীয় নির্বাচনে কোনো রাজনৈতিক দল বা প্রার্থীর প্রতি অবৈধ সুবিধা প্রদান করলে সংশ্লিষ্ট পুলিশের বিরুদ্ধে তাৎক্ষণিকভাবে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
মঙ্গলবার (৪ নভেম্বর) স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে অনুষ্ঠিত কোর কমিটির বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এ সতর্কবার্তা দেন।
উপদেষ্টা বলেন, নির্বাচনে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নিরপেক্ষ ভূমিকা নিশ্চিত করতে সরকার ইতোমধ্যে একটি ইলেক্টোরাল ইনকোয়ারি কমিটি গঠন করেছে। “যদি কারো অবহেলা বা পক্ষপাতমূলক আচরণ পাওয়া যায়, তাকে সঙ্গে সঙ্গে আইনের আওতায় আনা হবে,” উল্লেখ করে তিনি বলেন, “আগে সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করে রাখা হতো, কিন্তু এবার কোনো বিলম্ব করা হবে না—অবৈধ কর্মকাণ্ড ধরা পড়লে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
তিনি আরও বলেন, “পুলিশের প্রতি আমার স্পষ্ট নির্দেশনা—নির্বাচন হতে হবে অবাধ, সুষ্ঠু, বিশ্বাসযোগ্য এবং উৎসবমুখর। পুলিশের কেউ যদি অনৈতিক কর্মকাণ্ডে জড়িত হয়, তাকে ছাড় দেওয়া হবে না।”
সভায় উপস্থিত সাংবাদিকরা জানতে চান, নির্বাচনের সময় সেনাবাহিনীর ম্যাজিস্ট্রেসি পাওয়ার থাকবে কি না। জবাবে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, “বর্তমানে সেনাবাহিনীর সেই ক্ষমতা বিদ্যমান রয়েছে। নির্বাচন শুরু হলে এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।”
এছাড়া, নির্বাচনের আগে পুলিশের বড় পরিসরে রদবদল হবে কি না—এমন প্রশ্নের জবাবে জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী জানান, ২০১৪, ২০১৮ ও ২০২৪ সালের নির্বাচনে দায়িত্ব পালনকারী কর্মকর্তাদের মধ্যে বেশিরভাগকে পরিবর্তনের উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। “প্রথমে যারা তিনটি নির্বাচনে একসঙ্গে জড়িত ছিলেন, তাদের সরিয়ে দেওয়া হবে। এরপর দেখা হবে, যারা দুটি নির্বাচনের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন, তাদের নিয়েও প্রয়োজনীয় সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে,” বলেন তিনি।
তবে তিনি স্বীকার করেন, নতুন কর্মকর্তা নিয়োগের সীমাবদ্ধতা থাকায় পুরোপুরি পরিবর্তন সম্ভব নয়। “যদি কেউ একটি নির্বাচনের সঙ্গে জড়িত থাকেন কিন্তু তার বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ না থাকে, তাহলে তাঁকে পুনরায় দায়িত্বে রাখা হতে পারে,” তিনি যোগ করেন।
বৈঠকে সাম্প্রতিক নিরাপত্তা পরিস্থিতি নিয়েও আলোচনা হয়। বিশেষ করে, কার্গো ভিলেজে অগ্নিকাণ্ড ও অস্ত্র চুরির ঘটনায় নিরাপত্তার দুর্বলতা নিয়ে প্রশ্ন ওঠে। এ প্রসঙ্গে উপদেষ্টা বলেন, “অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে, যার নেতৃত্বে আছেন একজন সিনিয়র সচিব। তিনি ইতোমধ্যে চার-পাঁচটি দেশে চিঠি পাঠিয়েছেন এবং কয়েকটি দেশের প্রতিনিধিরা তদন্তে সহযোগিতার জন্য বাংলাদেশে এসেছেন।”
অস্ত্র চুরির বিষয়ে তদন্ত চলমান রয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, “এখনও নিশ্চিতভাবে বলা সম্ভব নয় কয়টি বা আদৌ কোনো অস্ত্র চুরি হয়েছে কি না। যদি চুরি হয়ে থাকে, দায়ী ব্যক্তিকে অবশ্যই আইনের আওতায় আনা হবে।”
তিনি আরও জানান, চট্টগ্রামের রাউজানে পরিচালিত এক অভিযানে ১১টি অস্ত্র উদ্ধার করা হয়েছে এবং কয়েকজন সন্ত্রাসীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। রাউজান ও ফটিকছড়িকে ‘সংবেদনশীল ও চ্যালেঞ্জপূর্ণ এলাকা’ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে, কারণ এই দুই উপজেলা আংশিক পাহাড়ি ও আংশিক সমতল এলাকা হওয়ায় নিরাপত্তা তৎপরতা জটিল হয়ে পড়ে।
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেন, সরকারের প্রধান অগ্রাধিকার এখন আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্থিতিশীল রাখা এবং নির্বাচনী পরিবেশে নাগরিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। এ লক্ষ্যেই আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ওপর সর্বোচ্চ জবাবদিহিতা ও শৃঙ্খলা বজায় রাখার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।


