মেক্সিকোর সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন করল পেরু

মেক্সিকোর সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন করল পেরু

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

দক্ষিণ আমেরিকার দেশ পেরু উত্তর আমেরিকার দেশ মেক্সিকোর সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন করেছে। পেরুর সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেটসি চাভেজকে আশ্রয় দেওয়ায় এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে লিমা সরকার।

সোমবার (৪ নভেম্বর) এক সংবাদ সম্মেলনে পেরুর পররাষ্ট্রমন্ত্রী হুগো দে জেল্লা বলেন, “আজ আমরা বিস্ময় ও দুঃখের সঙ্গে জেনেছি যে সাবেক প্রেসিডেন্ট পেদ্রো কাস্তিলোর কথিত ষড়যন্ত্রকারী বেটসি চাভেজকে লিমায় অবস্থিত মেক্সিকো দূতাবাসের বাসভবনে আশ্রয় দেওয়া হয়েছে। এই অবন্ধুত্বপূর্ণ পদক্ষেপের কারণে এবং মেক্সিকোর বর্তমান ও সাবেক প্রেসিডেন্টদের আমাদের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে বারবার হস্তক্ষেপের প্রেক্ষিতে, পেরু সরকার আজ মেক্সিকোর সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।”

পেরুর সরকারের এই পদক্ষেপ ২০২২ সালের রাজনৈতিক অস্থিরতার পর দুই দেশের সম্পর্কে নতুন করে সংকট সৃষ্টি করবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

মেক্সিকোর পক্ষ থেকে তাৎক্ষণিকভাবে এ বিষয়ে কোনো আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া জানানো হয়নি। তবে বিশ্লেষকরা মনে করছেন, পেরুর এই সিদ্ধান্ত কেবল কূটনৈতিক নয়, বরং আঞ্চলিক রাজনীতিতেও প্রভাব ফেলতে পারে।

বেটসি চাভেজ ২০২২ সালের নভেম্বর মাসে তৎকালীন প্রেসিডেন্ট পেদ্রো কাস্তিলোর সরকারে সংস্কৃতি মন্ত্রী থেকে পদোন্নতি পেয়ে প্রধানমন্ত্রী হন। সেই সময় প্রেসিডেন্ট ও কংগ্রেসের মধ্যে চলমান দ্বন্দ্ব তীব্র আকার ধারণ করে। পরের মাসেই প্রেসিডেন্ট কাস্তিলো কংগ্রেস ভেঙে দেওয়ার ঘোষণা দেন, যা সংবিধানবিরোধী হিসেবে বিবেচিত হয় এবং এর পরপরই তাকে অভিশংসিত করা হয়।

কাস্তিলো, যিনি একজন সাবেক স্কুলশিক্ষক ও ট্রেড ইউনিয়ন নেতা হিসেবে পরিচিত, নিজেকে “পেরুর প্রথম দরিদ্র প্রেসিডেন্ট” হিসেবে তুলে ধরেছিলেন। তার অভিশংসনের পর তিনি মেক্সিকোর দূতাবাসে আশ্রয় নিতে চেয়েছিলেন, কিন্তু পথে গ্রেপ্তার হন এবং বিদ্রোহ ও ক্ষমতার অপব্যবহারের অভিযোগে অভিযুক্ত হন। ওই সময় তার ঘনিষ্ঠ সহযোগী হিসেবে চাভেজের বিরুদ্ধেও মামলা হয়।

চাভেজের আইনজীবী রাউল নোব্লেসিলা স্থানীয় একটি রেডিও সাক্ষাৎকারে জানান, তিনি কয়েক দিন ধরে তার মক্কেলের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারছেন না এবং জানেন না চাভেজ আনুষ্ঠানিকভাবে রাজনৈতিক আশ্রয় চেয়েছেন কি না।

পেরু ও মেক্সিকোর কূটনৈতিক সম্পর্কে উত্তেজনার ইতিহাস নতুন নয়। ২০২২ সালের ডিসেম্বরে মেক্সিকো কাস্তিলোর স্ত্রী ও সন্তানদের আশ্রয় দেওয়ার পর পেরু মেক্সিকোর রাষ্ট্রদূতকে বহিষ্কার করেছিল। এরপর থেকেই দুই দেশের সম্পর্ক শীতল অবস্থায় ছিল।

নতুন করে সাবেক প্রধানমন্ত্রী চাভেজকে আশ্রয় দেওয়ার ঘটনায় সেই উত্তেজনা আবারও চরমে উঠেছে। বিশ্লেষকরা বলছেন, এই পদক্ষেপ শুধু দুই দেশের মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্ককেই প্রভাবিত করবে না, বরং লাতিন আমেরিকার আঞ্চলিক রাজনীতিতেও নতুন ভারসাম্য তৈরি করতে পারে।

লিমা সরকার জানিয়েছে, কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন করার অর্থ হলো দুই দেশের মধ্যে রাষ্ট্রীয় পর্যায়ের যোগাযোগ, প্রতিনিধিত্ব ও দূতাবাস কার্যক্রম বন্ধ থাকবে। তবে নাগরিকদের কনস্যুলার সেবা দেওয়ার বিষয়ে এখনো কোনো আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেওয়া হয়নি।

পেরুর অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে এই সিদ্ধান্তেরও প্রভাব পড়তে পারে বলে মনে করা হচ্ছে। বর্তমান সরকার অভ্যুত্থান-পরবর্তী স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে চেষ্টা চালাচ্ছে, আর এ অবস্থায় মেক্সিকোর সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করা রাজনৈতিক অঙ্গনে নতুন বিতর্কের জন্ম দিতে পারে।

আন্তর্জাতিক