আন্তর্জাতিক ডেস্ক
যুক্তরাষ্ট্রে চলমান ইতিহাসের দীর্ঘতম সরকারি অচলাবস্থার (শাটডাউন) কারণে দেশটির বিমান চলাচল ব্যবস্থা মারাত্মক বিপর্যয়ের মুখে পড়েছে। বেতন না পেয়ে বিমান চলাচল নিয়ন্ত্রণকারী কর্মকর্তাদের (এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোলার) অনুপস্থিতি বেড়ে যাওয়ায় বিভিন্ন বিমানবন্দরে বিশৃঙ্খলা দেখা দিয়েছে। এর ফলে শত শত ফ্লাইট বাতিল ও হাজারো ফ্লাইট বিলম্বিত হচ্ছে বলে জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল এভিয়েশন অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (এফএএ)।
মঙ্গলবার (৪ নভেম্বর) প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে সংস্থাটি জানায়, সরকারের অচলাবস্থার কারণে দেশের ৩০টি প্রধান বিমান নিয়ন্ত্রণ কেন্দ্রের অন্তত অর্ধেক জনবল সংকটে পড়েছে। বিশেষ করে নিউইয়র্ক অঞ্চলের বিমানবন্দরগুলোতে অনুপস্থিতির হার ৮০ শতাংশে পৌঁছেছে।
ফ্লাইট ট্র্যাকিং ওয়েবসাইট ফ্লাইটঅ্যাওয়্যারের তথ্য অনুসারে, গত শুক্রবার থেকে রোববার পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে ১৬ হাজার ৭০০টিরও বেশি ফ্লাইট নির্ধারিত সময়ের পর ছেড়েছে এবং ২ হাজার ২৮২টি ফ্লাইট সম্পূর্ণ বাতিল হয়েছে। সোমবারও পরিস্থিতির উন্নতি হয়নি; ওই দিন সন্ধ্যা পর্যন্ত শিকাগো ও’হেয়ার, ডালাস ফোর্ট ওয়ার্থ, ডেনভার ও নিউয়ার্কসহ বড় শহরের বিমানবন্দরে আরও ৪ হাজার ফ্লাইট দেরিতে ছাড়ে এবং ৬০০টির বেশি ফ্লাইট বাতিল হয়।
এফএএ জানায়, শাটডাউন অব্যাহত থাকায় সংস্থার প্রায় ১৩ হাজার এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোলার ‘অপরিহার্য কর্মী’ হিসেবে বেতন ছাড়াই কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন। তবে সাম্প্রতিক সময়ে অনুপস্থিতির হার বৃদ্ধির কারণে নিরাপত্তা ঝুঁকি এড়াতে ফ্লাইটের সংখ্যা সীমিত করা হচ্ছে। সংস্থাটি এক বিবৃতিতে সতর্ক করে জানায়, অচলাবস্থার অবসান না হলে কর্মকর্তারা বেতন পাবেন না, ফলে যাত্রীদের আরও বিলম্ব ও বিপর্যয়ের মুখে পড়তে হতে পারে। প্রয়োজনে নিরাপত্তা বজায় রাখতে বিমান চলাচল আরও সীমিত করা হবে, যার ফলে ফ্লাইট বাতিল ও বিলম্বের মাত্রা বাড়তে পারে।
যুক্তরাষ্ট্রের পরিবহনমন্ত্রী শন ডাফি বলেন, চলমান পরিস্থিতিতে নিরাপত্তা নিশ্চিত করাই সরকারের অগ্রাধিকার। তিনি জানান, “আমরা অতিরিক্ত সময় কাজ করছি যাতে সিস্টেম নিরাপদ থাকে। প্রয়োজনে ফ্লাইট বিলম্বিত বা বাতিল করা হবে।” ডাফি আরও বলেন, অনেক এটিসি কর্মকর্তা জীবিকার প্রয়োজনে বিকল্প পেশায় যুক্ত হয়েছেন, তবে তাদের চাকরি থেকে বরখাস্ত করা হবে না। তাঁর ভাষায়, “যখন কেউ পরিবারের জন্য দ্বিতীয় কাজ করতে বাধ্য হয়, তখন তাকে চাকরি হারাতে হবে না।”
বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রে সরকারি শাটডাউন টানা ৩৫তম দিনে গড়িয়েছে, যা ২০১৮-২০১৯ সালের দীর্ঘতম অচলাবস্থার সমান সময়কাল অতিক্রম করেছে। ফলে এটিই দেশটির ইতিহাসে সর্বাধিক দীর্ঘ শাটডাউন হিসেবে রেকর্ড গড়েছে।
সরকারি অচলাবস্থার কারণে এখন পর্যন্ত অন্তত ৬ লাখ ৭০ হাজার ফেডারেল কর্মী বাধ্যতামূলক ছুটিতে রয়েছেন এবং প্রায় ৭ লাখ ৩০ হাজার কর্মী বেতন ছাড়াই কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন। দীর্ঘায়িত এই সংকটে শুধু বিমান চলাচল নয়, দেশের সামগ্রিক প্রশাসনিক কার্যক্রমও মারাত্মকভাবে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। বিশ্লেষকদের মতে, অচলাবস্থা দ্রুত সমাধান না হলে যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতি ও নাগরিক জীবন উভয়ই আরও বড় সংকটে পড়তে পারে।


