জাতীয় ডেস্ক
পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় এবং পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেছেন, বাইরের অর্থায়ন না থাকলেও উন্নয়নশীল দেশগুলোকে নিজেদের সক্ষমতা ও পারস্পরিক সহযোগিতার মাধ্যমে টেকসই উন্নয়ন নিশ্চিত করতে হবে। এজন্য আঞ্চলিক সংহতি, কমিউনিটি ক্ষমতায়ন এবং মানুষকেন্দ্রিক নীতি প্রণয়নকে অগ্রাধিকার দেওয়ার আহ্বান জানান তিনি।
মঙ্গলবার (৪ নভেম্বর) রাতে পাকিস্তানের ইসলামাবাদের মোভেনপিক, সেন্টোরাস হোটেলে আয়োজিত ২৮তম সাসটেইনেবল ডেভেলপমেন্ট কনফারেন্সের সম্মানিত অতিথিদের সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে তিনি এ বক্তব্য দেন।
রিজওয়ানা হাসান বলেন, মানুষ যদি জলবায়ু বিপর্যয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয় এবং নিরাপদ পানি না পায়, তবে উন্নয়নের কোনো অর্থ থাকে না। তিনি ব্যয়বহুল মেগা প্রকল্পের পরিবর্তে সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ জনগোষ্ঠীর সুরক্ষা ও কল্যাণে মনোযোগ দেওয়ার ওপর গুরুত্ব আরোপ করেন। তার মতে, উন্নয়ন তখনই অর্থবহ হবে যখন তা হবে অন্তর্ভুক্তিমূলক ও পরিবেশ-সহনশীল।
উপদেষ্টা বলেন, সরকার, নাগরিক সমাজ এবং বেসরকারি খাত একসঙ্গে কাজ করলে জনগণের হতাশা ইতিবাচক পরিবর্তনের শক্তিতে রূপ নিতে পারে। প্রকৃত স্থিতিস্থাপকতা গড়ে তুলতে হবে নিচু স্তর থেকে—যেখানে সহযোগিতা, আচরণগত পরিবর্তন এবং জনগণের আস্থা পুনর্গঠনই হবে মূল চালিকা শক্তি।
তিনি সতর্ক করে বলেন, রাজনৈতিক বিভাজন ও সংকীর্ণ স্বার্থের রাজনীতি জাতীয় ও আঞ্চলিক অগ্রাধিকারের পথে বাধা সৃষ্টি করছে। এর ফলে যৌথ অগ্রগতির সুযোগ নষ্ট হচ্ছে এবং উন্নয়ন প্রক্রিয়া স্থবির হয়ে পড়ার আশঙ্কা তৈরি হচ্ছে।
শ্রীলঙ্কা থেকে নেপাল পর্যন্ত সাম্প্রতিক রাজনৈতিক পরিবর্তনের প্রসঙ্গ টেনে রিজওয়ানা হাসান বলেন, এসব অস্থিরতা একদিকে শাসনব্যবস্থার দুর্বলতাকে প্রকাশ করছে, অন্যদিকে তা হতে পারে নতুন করে রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক কাঠামো পুনর্গঠনের সুযোগ। তিনি তরুণ নেতৃত্বের অংশগ্রহণ বাড়ানোর ওপরও জোর দেন।
তরুণ প্রজন্মের বৈশ্বিক আন্দোলনের প্রসঙ্গে তিনি বলেন, বর্তমান যুবসমাজ কেবল জলবায়ু ন্যায়বিচার নয়, গণতন্ত্র, স্বাধীনতা ও মর্যাদার দাবিও তুলছে। ভবিষ্যতের পৃথিবী—যেখানে খাদ্য ও পানির সংকট, চরম আবহাওয়া ও বাস্তুচ্যুতি বাড়বে—তা আগামী প্রজন্মের জন্য অসহনীয় হয়ে উঠবে, যদি এখনই কাঠামোগত সংস্কার শুরু না হয়।
এসডিজি ও জলবায়ু অর্থায়নের প্রসঙ্গে রিজওয়ানা হাসান বলেন, উন্নয়নশীল দেশগুলোকে বৈশ্বিকভাবে একটি সুন্দর লক্ষ্যভিত্তিক উন্নয়ন পরিকল্পনা (এসডিজি) দেওয়া হলেও তা বাস্তবায়নের জন্য প্রয়োজনীয় সম্পদ সরবরাহ করা হয়নি। তিনি বলেন, “উন্নয়নশীল দেশগুলোকে একটি সুন্দর এসডিজি মেন্যু দেওয়া হয়েছে, কিন্তু অর্ডার দেওয়ার মতো সম্পদ দেওয়া হয়নি।”
তিনি ‘লস অ্যান্ড ড্যামেজ ফান্ড’-এর কার্যকারিতা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন এবং বলেন, জলবায়ু ক্ষতিগ্রস্তদের ন্যায়বিচারের বদলে ঋণ দেওয়ার প্রক্রিয়া কার্যত তাদের ওপর নতুন বোঝা সৃষ্টি করছে। তার মতে, প্রকৃত জলবায়ু ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে হলে অনুদানভিত্তিক অর্থায়ন ও ক্ষতিপূরণমূলক সহযোগিতা নিশ্চিত করা জরুরি।
অনুষ্ঠানে ২৩টি দেশের প্রতিনিধিদের স্বাগত জানান পাকিস্তানের ভারপ্রাপ্ত প্রেসিডেন্ট সৈয়দ ইউসুফ রাজা গিলানি। অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন সাসটেইনেবল ডেভেলপমেন্ট পলিসি ইনস্টিটিউটের (এসডিপিআই) নির্বাহী পরিচালক ড. আবিদ কিউ. সুলেরি এবং পাথ সংস্থার এশিয়া, মধ্যপ্রাচ্য ও ইউরোপ অঞ্চলের প্রধান নাবিল গোহীর।


