এনবিআরের বাধ্যবাধকতায় ই-রিটার্নে সাড়া কম, করদাতাদের ভোগান্তি বাড়ছে

এনবিআরের বাধ্যবাধকতায় ই-রিটার্নে সাড়া কম, করদাতাদের ভোগান্তি বাড়ছে

অর্থনীতি ডেস্ক

চলতি ২০২৫-২৬ অর্থবছরে অনলাইনে আয়কর রিটার্ন দাখিল বাধ্যতামূলক করার পরও প্রত্যাশিত সাড়া মিলছে না। জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) তথ্য অনুযায়ী, মঙ্গলবার পর্যন্ত ই-রিটার্ন জমা হয়েছে মাত্র ১০ লাখ ৯৮ হাজার ৮৮৫টি, যা দেশের মোট নিবন্ধিত করদাতা (টিআইএনধারী) সংখ্যার তুলনায় অপ্রতুল। আগামী ৩০ নভেম্বর ই-রিটার্ন দাখিলের শেষ সময় নির্ধারণ করা হয়েছে।

গত অর্থবছরে যখন রিটার্ন অনলাইনে দাখিল বাধ্যতামূলক ছিল না, তখনও ৪৫ লাখ করদাতা রিটার্ন জমা দেন। এবার বাধ্যতামূলক করার পরও এখন পর্যন্ত এক-চতুর্থাংশ রিটার্নও জমা পড়েনি। এনবিআরের হিসাবে, দেশে বর্তমানে টিআইএনধারীর সংখ্যা এক কোটি ২৩ লাখের বেশি। ফলে প্রতি দিন গড়ে অন্তত ৪ লাখ ২৩ হাজার রিটার্ন জমা হওয়ার কথা থাকলেও গত পাঁচ দিনে জমা পড়েছে এক লাখেরও কম ই-রিটার্ন।

এনবিআর কর্তৃপক্ষ ৩০ নভেম্বরের মধ্যে রিটার্ন দাখিলের আহ্বান জানিয়ে বলেছে, অনলাইন প্রক্রিয়ায় কর জমা দিলে স্বচ্ছতা বাড়বে ও রাজস্ব আহরণে গতি আসবে। তবে বাস্তবে অনেক করদাতা ই-রিটার্ন প্রক্রিয়ায় নানা সমস্যার মুখে পড়ছেন।

বিভিন্ন কর অঞ্চলের করদাতারা অভিযোগ করেছেন, এনবিআরের সার্ভারের দুর্বলতা, ওয়ান টাইম পাসওয়ার্ড (ওটিপি) পেতে দেরি হওয়া, রেজিস্ট্রেশন জটিলতা, ফাইনাল প্রিভিউ ডাউনলোডে সমস্যা, কলসেন্টারে কাঙ্ক্ষিত সেবা না পাওয়া—এসব কারণে রিটার্ন দাখিল ব্যাহত হচ্ছে। এছাড়া গত বছর অফলাইনে রিটার্ন দাখিল করা করদাতাদের অনলাইনে নতুন করে নিবন্ধন করতে গিয়ে প্রযুক্তিগত বিঘ্নের মুখে পড়তে হচ্ছে।

কর অঞ্চল-১২ এর করদাতা মুস্তাফিজুর রহমান বলেন, “ই-রিটার্ন একটি আধুনিক উদ্যোগ হলেও বিভিন্ন সংস্থার সঙ্গে তথ্য সমন্বয় না থাকায় এটি ঝামেলাপূর্ণ হয়ে উঠেছে। সরকারের কাছে থাকা ব্যাংক হিসাব, সঞ্চয়পত্র বা এফডিআর সম্পর্কিত তথ্যগুলো যদি স্বয়ংক্রিয়ভাবে সিস্টেমে যুক্ত থাকত, তবে করদাতাদের বারবার তথ্য দিতে হতো না।”

নির্ধারিত সময়ের মধ্যে রিটার্ন জমা পড়বে কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে এনবিআরের একজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা জানান, সাধারণত শেষ সপ্তাহে রিটার্ন দাখিলের হার বেড়ে যায়। এছাড়া এ বছর নতুন অনেক করদাতা নিবন্ধন নিয়েছেন, যাদের মধ্যে অনেকে ৩০ জুন পর্যন্ত স্বনির্ধারণী পদ্ধতিতে রিটার্ন জমা দিতে পারবেন। তার মতে, নির্ধারিত সময়ের শেষ দিকে রিটার্ন দাখিলের সংখ্যা গত বছরের তুলনায় বাড়তে পারে।

এনবিআর চেয়ারম্যান মো. আবদুর রহমান খান জানান, “ই-রিটার্ন সিস্টেমের বিভিন্ন সমস্যা সমাধানে কাজ চলছে। এটি একতরফাভাবে করা সম্ভব নয়; বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সমন্বয় প্রক্রিয়া চলছে। ধীরে ধীরে এসব সমস্যা নিরসন হবে।”

যাদের জন্য অনলাইন বাধ্যতামূলক নয়
এনবিআরের বিশেষ আদেশে বলা হয়েছে, ৬৫ বছর বা তদূর্ধ্ব বয়সী প্রবীণ করদাতা, শারীরিকভাবে অসমর্থ বা বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন করদাতা, বিদেশে অবস্থানরত বাংলাদেশি করদাতা, মৃত করদাতার আইনগত প্রতিনিধি এবং বাংলাদেশে কর্মরত বিদেশি নাগরিকদের জন্য অনলাইনে রিটার্ন দাখিল বাধ্যতামূলক নয়। তবে এ শ্রেণির করদাতারাও চাইলে ই-রিটার্নের মাধ্যমে রিটার্ন জমা দিতে পারবেন।

বিশেষ ছাড় ও প্রতিনিধি ব্যবস্থার সুযোগ
ই-রিটার্ন সিস্টেমে নিবন্ধন সংক্রান্ত সমস্যায় কোনো করদাতা অনলাইনে রিটার্ন জমা দিতে ব্যর্থ হলে ১৫ নভেম্বরের মধ্যে সংশ্লিষ্ট উপকর কমিশনারের কাছে লিখিত আবেদন করলে যুগ্ম বা অতিরিক্ত কর কমিশনারের অনুমোদনক্রমে কাগুজে রিটার্ন দাখিল করা যাবে। এ সুবিধার সময়সীমা সম্প্রতি ৩১ অক্টোবর থেকে বাড়িয়ে ১৫ নভেম্বর পর্যন্ত করা হয়েছে।

এ ছাড়া করদাতার অনুমোদিত প্রতিনিধি তার পক্ষে অনলাইনে রিটার্ন জমা দিতে পারবেন। বিদেশে অবস্থানরত বাংলাদেশি করদাতারাও ই-মেইলের মাধ্যমে নিবন্ধন লিংক পেয়ে অনলাইনে রিটার্ন দাখিল করতে পারছেন। এনবিআরের ওয়েবসাইটে প্রয়োজনীয় তথ্য ও দলিল জমা দিয়ে তারা তাৎক্ষণিকভাবে জমা স্লিপ ও কর সনদ প্রিন্ট করতে পারছেন।

এনবিআর আশা করছে, সময়সীমার শেষ দিকে করদাতাদের অংশগ্রহণ বাড়বে। তবে কর বিশেষজ্ঞদের মতে, ই-রিটার্ন প্রক্রিয়ায় প্রযুক্তিগত সক্ষমতা ও করদাতাদের সহায়তা জোরদার না করলে রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রা অর্জন ব্যাহত হতে পারে।

অর্থ বাণিজ্য