গাজায় যুদ্ধবিরতি চলমান, ত্রাণ প্রবেশে বাধা; খাদ্যসংকটে ফিলিস্তিনিরা

গাজায় যুদ্ধবিরতি চলমান, ত্রাণ প্রবেশে বাধা; খাদ্যসংকটে ফিলিস্তিনিরা

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

গাজায় চলমান যুদ্ধবিরতির পরও সীমিত পরিসরে ত্রাণ প্রবাহ অব্যাহত থাকলেও, ত্রাণ সরবরাহে বাধার সৃষ্টি হচ্ছে। এর ফলে, গাজার মানুষের মধ্যে তীব্র খাদ্যসংকট দেখা দিয়েছে এবং মানবিক দুর্ভোগ ক্রমেই বাড়ছে।

জাতিসংঘের মানবিক সহায়তা সংস্থা বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি (ডব্লিউএফপি) জানিয়েছে, ইসরায়েল ও হামাসের মধ্যে যুদ্ধবিরতি শুরুর পর থেকে গাজায় ত্রাণের প্রবাহ কিছুটা বেড়েছে, তবে সীমিত সীমান্ত খুলে থাকার কারণে ত্রাণের পরিমাণ এখনও পর্যাপ্ত নয়। জাতিসংঘের মানবিক সহায়তা সংস্থাগুলো গাজায় খাদ্য পৌঁছানোর জন্য সময়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে কাজ করছে, কিন্তু ইসরায়েলের বিধিনিষেধ তা কঠিন করে তুলছে।

ডব্লিউএফপি’র মুখপাত্র আবির ইতেফা এক সংবাদ ব্রিফিংয়ে জানান, “আমাদের পূর্ণ প্রবেশাধিকার দরকার। ত্রাণ সরবরাহ দ্রুততর করা প্রয়োজন, কারণ শীতকাল চলে আসছে এবং মানুষ এখনও খাদ্যের অভাবে ভুগছেন।” তিনি আরও বলেন, ত্রাণ কাফেলাগুলোকে দক্ষতার সঙ্গে কাজ করতে সীমান্তের সকল পয়েন্ট খুলে দেওয়ার প্রয়োজন।

সংস্থাটি জানায়, গাজাজুড়ে বর্তমানে ৪৪টি স্থানে খাদ্য বিতরণ কার্যক্রম চলমান, এবং ১০ অক্টোবরের পর থেকে ১০ লাখেরও বেশি মানুষ খাদ্য সহায়তা পেয়েছে। তবে, তাদের মতে, যে পরিমাণ ত্রাণ গাজার মধ্যে প্রবেশ করছে তা এখনও পরিস্থিতির তুলনায় খুবই কম, বিশেষ করে উত্তর গাজায় ত্রাণ পৌঁছানো এখনো অত্যন্ত কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে।

এছাড়া, গাজার সরকারি তথ্য অফিস জানায়, ১০ থেকে ৩১ অক্টোবরের মধ্যে ৩,২০৩টি বাণিজ্যিক ও ত্রাণবাহী ট্রাক গাজায় প্রবেশ করেছে, যা গড়ে প্রতিদিন ১৪৫টি ট্রাকের সমান। যদিও যুদ্ধবিরতির শর্ত অনুযায়ী, প্রতিদিন গড়ে ৬০০টি ট্রাক গাজায় প্রবেশ করার কথা ছিল। এর ফলে ত্রাণের চাহিদা পূরণে মারাত্মক ঘাটতি সৃষ্টি হয়েছে।

একই সময়ে, যুদ্ধবিরতির পর ইসরায়েলি সেনারা ‘ইয়েলো লাইন’-এ পিছু হটলেও, গাজার মানুষের অবস্থা তেমন পরিবর্তিত হয়নি। উত্তর গাজার হাজার হাজার ফিলিস্তিনি বাড়ি ফিরে এলেও, তারা দেখেছেন, তাদের বাড়িঘর ও আশপাশের এলাকা ধ্বংস হয়ে গেছে। অনেকেই এখনো অস্থায়ী আশ্রয়ে বসবাস করছেন।

জাতিসংঘসহ অন্যান্য আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো ইসরায়েলের কাছে আরও ত্রাণ প্রবাহের অনুমতি চেয়ে আহ্বান জানিয়েছে। শীতের তীব্রতা সামনে রেখে, তারা গাজার পরিস্থিতি আরও খারাপ হওয়ার আশঙ্কা প্রকাশ করছে।

এদিকে, ইসরায়েলি বাহিনী গাজায় হামলা অব্যাহত রেখেছে। মঙ্গলবার গাজা সিটির তুফাহ এলাকায় ইসরায়েলি কোয়াডকপ্টার হামলায় এক ব্যক্তি নিহত এবং আরেকজন আহত হয়েছেন। উত্তর গাজার জাবালিয়া এলাকায়ও ইসরায়েলি সেনাদের গুলিতে এক ব্যক্তি নিহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে।

গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, যুদ্ধবিরতি কার্যকর হওয়ার পর থেকে ইসরায়েলি হামলায় ২৪০ জনেরও বেশি ফিলিস্তিনি নিহত এবং ৬০৭ জন আহত হয়েছেন।

গাজার বর্তমান পরিস্থিতি মানবিক দুর্ভোগের একটি কুটিল চিত্র ফুটিয়ে তুলছে, যেখানে খাদ্য, বাসস্থান এবং মৌলিক জীবনযাত্রার প্রয়োজনীয়তা পূরণ করা ক্রমেই কঠিন হয়ে পড়ছে।

আন্তর্জাতিক