আন্তর্জাতিক ডেস্ক
যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক ভাইস প্রেসিডেন্ট ডিক চেনির মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন সাবেক প্রেসিডেন্ট জর্জ ডব্লিউ বুশ। তিনি এক বিবৃতিতে বলেন, “তার মৃত্যু জাতির জন্য এক বড় ক্ষতি এবং বন্ধুদের জন্য গভীর বেদনার বিষয়।”
পরিবারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, স্থানীয় সময় সোমবার রাতে ৮৪ বছর বয়সে চেনি নিউমোনিয়া ও হৃদযন্ত্র ও রক্তনালীর জটিলতায় মারা যান। বুধবার (৫ নভেম্বর) ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি এক প্রতিবেদনে তার মৃত্যুর খবর প্রকাশ করে।
জর্জ ডব্লিউ বুশের প্রশাসনে ২০০১ থেকে ২০০৯ সাল পর্যন্ত ভাইস প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন ডিক চেনি। এই সময়ে তিনি যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে সবচেয়ে প্রভাবশালী ভাইস প্রেসিডেন্টদের একজন হিসেবে পরিচিতি পান। বিশেষ করে ২০০১ সালের সন্ত্রাসী হামলার পর ‘সন্ত্রাসবিরোধী যুদ্ধ’-এর অন্যতম প্রধান স্থপতি এবং ২০০৩ সালের ইরাক আগ্রাসনের প্রবল সমর্থক হিসেবে তিনি আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে ব্যাপক আলোচিত ও সমালোচিত হন।
বুশ বলেন, “ইতিহাস তাকে তার প্রজন্মের অন্যতম শ্রেষ্ঠ সরকারি কর্মকর্তা হিসেবে স্মরণ করবে। চেনি ছিলেন প্রকৃত দেশপ্রেমিক, যিনি সততা, প্রজ্ঞা ও দায়িত্ববোধ নিয়ে প্রতিটি দায়িত্ব পালন করেছেন। আমি তার সৎ ও স্পষ্ট পরামর্শের ওপর নির্ভর করতাম এবং তিনি কখনো ব্যর্থ হননি। তিনি তার বিশ্বাসে অটল ছিলেন এবং আমেরিকান জনগণের স্বাধীনতা ও নিরাপত্তাকেই সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়েছেন।”
সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী কনডোলিজা রাইস সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে লিখেছেন, “আমি তার সততা ও দেশপ্রেমের জন্য তাকে শ্রদ্ধা করি। তিনি ছিলেন অনুপ্রেরণাদায়ী একজন নেতা ও অসাধারণ পরামর্শদাতা। তিনি আমাকে জনসেবার প্রকৃত মানে শিখিয়েছেন।”
ডেমোক্র্যাট দলের সাবেক প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটনও শ্রদ্ধা জানিয়েছেন। তিনি বলেন, “আমাদের মধ্যে মতভেদ থাকলেও আমি সবসময় তার নিষ্ঠা ও কর্তব্যবোধকে সম্মান করেছি।”
বিবিসির প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, দীর্ঘদিন রিপাবলিকান দলের প্রভাবশালী নেতা হিসেবে সক্রিয় থাকলেও পরবর্তী সময়ে ডোনাল্ড ট্রাম্পের নেতৃত্বে দলটির সমালোচক হয়ে ওঠেন চেনি। ট্রাম্প এখনো তার মৃত্যুর বিষয়ে কোনো মন্তব্য করেননি, তবে হোয়াইট হাউস জানিয়েছে, প্রেসিডেন্ট বিষয়টি অবগত আছেন।
রিপাবলিকান প্রতিনিধি পরিষদের স্পিকার মাইক জনসন এক বিবৃতিতে বলেন, “ধর্মগ্রন্থে বলা আছে, যার সম্মান প্রাপ্য, তাকে সম্মান দেওয়া উচিত। রাজনৈতিক মতপার্থক্য থাকলেও তার ত্যাগ ও সেবাকে আমরা সম্মান জানাই।”
চেনির মৃত্যুর ঘোষণার পর মঙ্গলবার সকালে হোয়াইট হাউসের পতাকা অর্ধনমিত রাখা হয়। সরকারি সূত্র জানিয়েছে, আগামী কয়েক দিনের মধ্যে রাষ্ট্রীয়ভাবে তাকে শ্রদ্ধা জানানোর আয়োজন করা হতে পারে।
১৯৪১ সালে যুক্তরাষ্ট্রের নেব্রাস্কা অঙ্গরাজ্যের লিংকনে জন্মগ্রহণ করেন রিচার্ড “ডিক” চেনি। ইয়েল বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা শুরু করলেও স্নাতক সম্পন্ন করতে পারেননি তিনি। পরে ওয়াইওমিং বিশ্ববিদ্যালয় থেকে রাষ্ট্রবিজ্ঞানে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন।
১৯৬৮ সালে রিপাবলিকান কংগ্রেসম্যান উইলিয়াম স্টেইগারের সহকারী হিসেবে ওয়াশিংটনে তার রাজনৈতিক যাত্রা শুরু হয়। ১৯৭৫ সালে মাত্র ৩৪ বছর বয়সে প্রেসিডেন্ট জেরাল্ড ফোর্ডের চিফ অব স্টাফ হন তিনি। পরবর্তী সময়ে এক দশক প্রতিনিধি পরিষদে কাজ করেন।
জর্জ এইচ ডব্লিউ বুশের প্রশাসনে প্রতিরক্ষামন্ত্রী হিসেবে ১৯৯০-৯১ সালের উপসাগরীয় যুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্র নেতৃত্বাধীন জোটের সামরিক অভিযানের তত্ত্বাবধান করেন চেনি। পরে জর্জ ডব্লিউ বুশের প্রশাসনে ভাইস প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পালনকালে পররাষ্ট্র ও প্রতিরক্ষা নীতিতে তার প্রভাব ছিল অসাধারণ।
দীর্ঘ পাঁচ দশকের রাজনৈতিক জীবনে ডিক চেনি যুক্তরাষ্ট্রের রাজনীতিতে একাধারে সর্বাধিক প্রভাবশালী এবং সবচেয়ে বিতর্কিত নেতাদের একজন হিসেবে ইতিহাসে স্মরণীয় হয়ে থাকবেন।


