নাটোর-১ আসনে বিএনপির প্রার্থী ঘোষণায় ভাই-বোনের রাজনৈতিক দ্বন্দ্বে উত্তেজনা

নাটোর-১ আসনে বিএনপির প্রার্থী ঘোষণায় ভাই-বোনের রাজনৈতিক দ্বন্দ্বে উত্তেজনা

রাজনীতি ডেস্ক

নাটোর-১ আসনে বিএনপির প্রার্থী ঘোষণার পর ভাই-বোনের দীর্ঘদিনের রাজনৈতিক দ্বন্দ্ব নতুন করে চরমে উঠেছে। সাবেক মন্ত্রী মরহুম ফজলুর রহমান পটলের কন্যা ও নাটোর জেলা বিএনপির যুগ্ম-আহ্বায়ক ফারজানা শারমিন পুতুলকে এ আসনে দলীয় প্রার্থী ঘোষণা করার পর থেকেই এলাকায় উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়েছে।

দলীয় মনোনয়ন না পেয়ে ক্ষুব্ধ হয়েছেন পুতুলের বড় ভাই, জেলা বিএনপির সদস্য ডা. ইয়াসির আরশাদ রাজন। নাম ঘোষণার পর থেকে দুই পক্ষের সমর্থকদের মধ্যে উত্তেজনা দেখা দিয়েছে।

সোমবার (৩ নভেম্বর) রাত ১০টার দিকে নাটোর-পাবনা মহাসড়কের লালপুর উপজেলার গোধড়া এলাকায় রাজনের সমর্থকেরা সড়কে টায়ার জ্বালিয়ে বিক্ষোভ করেন। তারা মহাসড়কের মাঝখানে আগুন জ্বেলে ইয়াসির আরশাদ রাজনের পক্ষে বিভিন্ন স্লোগান দিতে থাকেন। ঘটনাস্থল থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, বিক্ষোভকারীরা এ সময় মোবাইল ফোনে সরাসরি সম্প্রচারও করেন। পরে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছালে তারা দ্রুত সরে যান।

এর আগে একই দিন সন্ধ্যায় ফারজানা শারমিন পুতুলের সমর্থকদের বিরুদ্ধে ইয়াসির আরশাদ রাজনের এক সমর্থকের ওপর হামলার অভিযোগ ওঠে। আহত ছাত্রদল কর্মী জিল্লুর রহমান নিজেকে রাজনের সমর্থক হিসেবে পরিচয় দিয়ে বলেন, “মনোনয়ন ঘোষণার পর স্থানীয়ভাবে পুতুলের কয়েকজন সমর্থক আমার দোকানে এসে আমাকে মারধর করে।” এ ঘটনায় সোমবার রাতে আহত জিল্লুর রহমানের ভাই বাদী হয়ে লালপুর থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দাখিল করেন।

ঘটনার বিষয়ে লালপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রফিকুল ইসলাম জানান, “ফারজানা শারমিন পুতুলের এক কর্মী ইয়াসির আরশাদ রাজনের একজন সমর্থককে মারধর করেছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। বিষয়টি তদন্ত করা হচ্ছে। এছাড়া মহাসড়কে কয়েকজন টায়ারে আগুন জ্বালায়, পুলিশ গেলে তারা পালিয়ে যায়। তবে এ ঘটনায় কোনো হতাহত বা বড় ধরনের ক্ষয়ক্ষতি হয়নি।”

দলীয় সূত্রে জানা গেছে, নাটোর-১ আসনে বিএনপির প্রার্থী নির্বাচনে পারিবারিক প্রভাব ও স্থানীয় নেতৃত্বের বিভাজন দীর্ঘদিন ধরেই আলোচনার বিষয় ছিল। ফারজানা শারমিন পুতুল ও ইয়াসির আরশাদ রাজন উভয়েই স্থানীয় রাজনীতিতে সক্রিয় এবং দলের জেলা ইউনিটে প্রভাবশালী হিসেবে পরিচিত। ফলে কেন্দ্রীয় মনোনয়ন ঘোষণার পর দ্বন্দ্ব আরও প্রকাশ্যে এসেছে।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, দলীয় ঐক্যের অভাব এবং পারিবারিক বিভাজন আসনটিতে বিএনপির নির্বাচনী অবস্থানকে দুর্বল করতে পারে। এ ধরনের অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব যদি দীর্ঘায়িত হয়, তবে তা স্থানীয় সংগঠনকে অস্থির করে তুলতে পারে এবং নির্বাচনী প্রচারণায় নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।

স্থানীয় পর্যায়ে নেতাকর্মীদের মধ্যে এখনো উত্তেজনা বিরাজ করছে। দলীয় সূত্রে জানা গেছে, কেন্দ্রীয় বিএনপির নেতারা পরিস্থিতি ঘনিষ্ঠভাবে পর্যবেক্ষণ করছেন এবং উভয় পক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখার চেষ্টা করছেন।

সারাদেশ