জাতীয় ডেস্ক
বাংলাদেশে বিদ্যুৎ সরবরাহের বকেয়া অর্থ নিয়ে চলমান বিরোধের নিষ্পত্তির জন্য আন্তর্জাতিক সালিশি প্রক্রিয়ায় যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ভারতীয় ব্যবসায়ী গৌতম আদানির মালিকানাধীন বিদ্যুৎ সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান আদানি পাওয়ার। প্রতিষ্ঠানটি জানিয়েছে, তাদের সঙ্গে বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (বিপিডিবি) দীর্ঘদিন ধরে অর্থ পরিশোধ নিয়ে বিরোধ চলছে, যা বর্তমানে আন্তর্জাতিক সালিশি প্রক্রিয়ায় সমাধানের চেষ্টা করা হচ্ছে।
২০১৭ সালে বাংলাদেশে বিদ্যুৎ সরবরাহের জন্য আদানি পাওয়ার ও বিপিডিবির মধ্যে একটি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। এই চুক্তির আওতায় আদানি পাওয়ার তাদের ঝাড়খণ্ডের গড্ডা কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে বাংলাদেশে বিদ্যুৎ সরবরাহ করে আসছে। তবে, চুক্তি অনুযায়ী নির্দিষ্ট কিছু খাতের ব্যয় ও বিল করার পদ্ধতি নিয়ে মতবিরোধ সৃষ্টি হয়, যার কারণে এই বিরোধ দেখা দেয়।
আদানি পাওয়ার এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, উভয়পক্ষই বিরোধ নিষ্পত্তি প্রক্রিয়া শুরু করার বিষয়ে সম্মত হয়েছে এবং তারা আশাবাদী যে, এটি একটি মসৃণ ও পারস্পরিকভাবে লাভজনক সমাধানে পৌঁছাবে। তবে, বাংলাদেশের বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ফাওজুল কবির খান রয়টার্সকে জানিয়েছেন, আলোচনা এখনও চলছে এবং প্রয়োজনে আন্তর্জাতিক সালিশি প্রক্রিয়ায় যাবেন।
গড্ডা প্ল্যান্ট থেকে বিদ্যুৎ সরবরাহের এই চুক্তি বাংলাদেশের মোট বিদ্যুৎ চাহিদার এক-দশমাংশ পূরণ করে। আদানি পাওয়ার বাংলাদেশে বিদ্যুৎ সরবরাহে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখছে, তবে বকেয়া অর্থ পরিশোধে সমস্যা তৈরি হয়েছে। গত বছরের শেষে, রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছিল, বাংলাদেশ সরকার আদানি গ্রুপের বিরুদ্ধে চুক্তি ভঙ্গের অভিযোগ করেছে। অভিযোগের মূলে ছিল, আদানি গ্রুপ ভারত সরকার থেকে পাওয়া কর-ছাড়ের সুবিধা বাংলাদেশকে না দেওয়ার বিষয়টি।
২০২৩-২৪ অর্থবছরে বাংলাদেশ আদানিকে প্রতি ইউনিট বিদ্যুৎ সরবরাহের জন্য ১৪.৮৭ টাকা পরিশোধ করেছে, যা অন্যান্য ভারতীয় কোম্পানির সরবরাহকৃত বিদ্যুতের গড় দামের তুলনায় অনেক বেশি। তবে, আদানি পাওয়ার দাবি করছে যে, তাদের বকেয়া পরিমাণ উল্লেখযোগ্যভাবে কমে এসেছে। মে মাসে আদানি পাওয়ারের বকেয়া পরিমাণ ৯০০ মিলিয়ন ডলারে নেমে এসেছিল, যা চলতি বছরের শুরুতে ২ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছেছিল।
বিদ্যুৎ সরবরাহ চুক্তির সঙ্গে সম্পর্কিত কর সুবিধা নিয়েও সমস্যা সৃষ্টি হয়েছে। গড্ডা কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি ভারত সরকারের কাছ থেকে আয়কর এবং অন্যান্য শুল্ক ছাড়ের সুবিধা পেয়েছে, কিন্তু আদানি পাওয়ার এই সুবিধাগুলি বাংলাদেশে বিদ্যুৎ সরবরাহের দামে সমন্বয় করতে ব্যর্থ হয়েছে। ফলে, বাংলাদেশ সরকার বিদ্যুৎ দামে সমন্বয়ের জন্য আদানি পাওয়ারকে চিঠি পাঠায়, কিন্তু প্রতিষ্ঠানটির কাছ থেকে কোনো প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি।
বাংলাদেশ সরকার ধারণা করছে, ভারত সরকারের কাছ থেকে আদানি পাওয়ার যদি কর ছাড় সমন্বয় করে, তবে বাংলাদেশ প্রতি ইউনিট বিদ্যুতে প্রায় শূন্য দশমিক ৩৫ সেন্ট সাশ্রয় করতে পারবে। ২০২৪ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত গড্ডা প্ল্যান্ট থেকে বাংলাদেশে ৮ দশমিক ১৬ বিলিয়ন ইউনিট বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হয়েছে। এই সমন্বয়ের ফলে বাংলাদেশ প্রায় ২৮ দশমিক ৬ মিলিয়ন ডলার সাশ্রয় করতে পারবে।
আদানি পাওয়ার তার বিবৃতিতে জানায়, তারা বিদ্যুৎ ক্রয় চুক্তির প্রতি পূর্ণরূপে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ এবং বাংলাদেশের জন্য নির্ভরযোগ্য, সাশ্রয়ী এবং উচ্চমানের বিদ্যুৎ সরবরাহ অব্যাহত রাখবে।


