যুক্তরাষ্ট্রে দীর্ঘতম সরকারি অচলাবস্থা: ৩৬ দিনে প্রবেশ করেছে ফেডারেল শাটডাউন

যুক্তরাষ্ট্রে দীর্ঘতম সরকারি অচলাবস্থা: ৩৬ দিনে প্রবেশ করেছে ফেডারেল শাটডাউন

আন্তর্জাতিক ডেস্ক:

যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল সরকারের শাটডাউন টানা ৩৬তম দিনে গড়িয়েছে, যা দেশটির ইতিহাসে দীর্ঘতম সরকারি অচলাবস্থা হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে। গত ১ অক্টোবর থেকে শুরু হওয়া এই অচলাবস্থা কংগ্রেসে নতুন তহবিল চুক্তি নিয়ে ডেমোক্র্যাট ও রিপাবলিকানদের মধ্যে সমঝোতা না হওয়ায় অব্যাহত রয়েছে। এর ফলে লক্ষাধিক সরকারি কর্মচারী বেতনহীন অবস্থায় পড়েছেন, আর নানা প্রয়োজনীয় পরিষেবা ব্যাহত হচ্ছে সারা দেশে।

সরকারি ব্যয় বিল নিয়ে দলীয় মতানৈক্যের কারণে যুক্তরাষ্ট্রের সরকার আংশিকভাবে অচল হয়ে পড়েছে। ফেডারেল কর্মচারীদের বড় একটি অংশের বেতন বন্ধ রয়েছে, ফলে সরকারি সেবা প্রদানে ব্যাপক বিঘ্ন সৃষ্টি হয়েছে। পরিস্থিতি এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে, সাধারণ নাগরিকরাও এর প্রতিক্রিয়ায় ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন।

সিনেটে রিপাবলিকান সংখ্যাগরিষ্ঠ দলের নেতা জন থুন এক বক্তব্যে জানান, কিছুটা অগ্রগতির সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে। তিনি বলেন, “যেভাবে এই বিষয়গুলো পরিচালিত হয়, তার প্রেক্ষিতে মনে হচ্ছে আমরা একটি সমঝোতার কাছাকাছি অবস্থায় রয়েছি।” তবে এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো চুক্তি বা সমাধানের ইঙ্গিত পাওয়া যায়নি।

ডেমোক্র্যাট ও রিপাবলিকানদের মধ্যে মতানৈক্য অব্যাহত থাকায় পরিস্থিতির উন্নতি হয়নি। দুই পক্ষই নিজেদের অবস্থানে অনড় থেকে পরস্পরকে দোষারোপ করছে, যার ফলে সরকারি কার্যক্রম পুনরায় চালুর বিষয়ে স্থবিরতা দেখা দিয়েছে।

এর আগে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রথম মেয়াদে, ২০১৯ সালে, যুক্তরাষ্ট্রে ৩৫ দিনব্যাপী সরকারি শাটডাউন হয়েছিল। তবে এবারকার পরিস্থিতি সেই রেকর্ডকেও ছাড়িয়ে গেছে। বিশ্লেষকদের মতে, দীর্ঘস্থায়ী এই অচলাবস্থা যুক্তরাষ্ট্রের প্রশাসনিক সক্ষমতা ও অর্থনীতির ওপর বড় ধরনের প্রভাব ফেলতে পারে।

শাটডাউনের কারণে বিমান পরিবহন খাতও সংকটে পড়েছে। হাজার হাজার বিমান পরিবহন নিয়ন্ত্রক ও বিমানবন্দর কর্মী বেতন ছাড়াই কাজ করছেন, যা বিমান চলাচলে বিলম্ব ও নিরাপত্তাজনিত ঝুঁকি বাড়াচ্ছে। মঙ্গলবার যুক্তরাষ্ট্রের পরিবহনমন্ত্রী শন ডাফি জানিয়েছেন, অচলাবস্থা অব্যাহত থাকলে দেশের আকাশসীমার কিছু অংশ সাময়িকভাবে বন্ধ রাখতে হতে পারে। তার মতে, প্রায় ১৩ হাজার বিমান নিয়ন্ত্রক বেতনহীন অবস্থায় কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন, যা একটি ‘অসহনীয়’ পরিস্থিতি তৈরি করেছে।

এছাড়া নিম্ন আয়ের নাগরিকদের জন্য সরকার পরিচালিত বিভিন্ন সহায়তা কর্মসূচিও বিপর্যস্ত হচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্রে প্রতি আটজনের মধ্যে একজন ‘সাপ্লিমেন্টাল নিউট্রিশন অ্যাসিস্ট্যান্স প্রোগ্রাম’ (SNAP)-এর ওপর নির্ভরশীল। কিন্তু চলতি মাসে তহবিল স্থগিত থাকায় কেবল আংশিক খাদ্য সহায়তা দেওয়া সম্ভব হয়েছে। এই পরিস্থিতি কতদিন স্থায়ী হবে, সে বিষয়ে এখনো স্পষ্ট কোনো দিকনির্দেশনা পাওয়া যায়নি।

অর্থনৈতিক বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করেছেন যে, শাটডাউন আরও দীর্ঘায়িত হলে তা যুক্তরাষ্ট্রের ভোগব্যয়, অভ্যন্তরীণ উৎপাদন ও শ্রমবাজারে নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। পাশাপাশি আন্তর্জাতিক অর্থবাজারেও এর প্রভাব পড়ার আশঙ্কা রয়েছে।

বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রের প্রশাসন ও আইনসভা উভয়ই এক অচলাবস্থার মধ্যে আছে। বিশ্লেষকরা বলছেন, রাজনৈতিক সমঝোতা ছাড়া এই সংকট থেকে বেরিয়ে আসা কঠিন হবে। সরকার কার্যক্রম পুনরায় চালু না হলে, জনসেবা খাত ও অর্থনৈতিক কার্যক্রমে বড় ধরনের ক্ষতি অনিবার্য হয়ে উঠবে।

 

Uncategorized আন্তর্জাতিক